করোনাকালে প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনার প্রকোপসহ নানাবিধ কারণে দেশে মানুষের গড় আয়ু প্রায় ছয় মাস কমেছে। একই সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুর হার। সর্বশেষ ২০২১ সালে বাংলাদেশিদের গড় প্রত্যাশিত গড় আয়ু হয় ৭২ দশমিক তিন বছর বা ৭২ বছর চার মাস। তার আগের বছর ২০২০ সালে গড় আয়ু ছিল ৭২ দশমিক আট বছর। এতে করে বর্তমানে শূন্য দশমিক পাঁচ বছর বা প্রায় ছয় মাস গড় আয়ু কমেছে। প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাড়ার পর বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমার তথ্য দিয়েছে সরকারি এ সংস্থাটি। বিবিএস সারাদেশে দুই হাজার ১২টি প্রাথমিক নমুনা এলাকায় জরিপ চালিয়ে এসব তথ্য দিয়েছে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে গতকাল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আয়োজিত ‘মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস অব বাংলাদেশ’ জরিপের ফলাফলে এ তথ্য উঠে আসে। বিবিএসের মহাপরিচালক মতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন।

২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী দেশে পুরুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল ৭০ দশমিক ছয় বছর, আর নারীর গড় আয়ু ৭৪ দশমিক এক বছর। এর আগের বছর পুরুষের গড় আয়ুষ্কাল ছিল ৭১ দশমিক দুই বছর। আর নারীর ছিল ৭৪ দশমিক পাঁচ বছর। অর্থাৎ পুরুষের গড় আয়ু কমেছে শূন্য দশমিক ছয় বছর, নারীর কমেছে শূন্য দশমিক চার বছর। এর পাশাপাশি বেড়েছে মানুষের মৃত্যুর হার। এক্ষেত্রে স্থূল মৃত্যুুহার প্রতি হাজারে ৫ দশমিক ৭ জন। ২০২০ সালে ছিল ৫ দশমিক ১ জন।

জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রকল্পের পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, অনেক কারণে মানুষের গড় আয়ু করতে পারে। তবে তার মধ্যে একটি করোনা মহামারিও হতে পারে। তবে এটাই যে চূড়ান্ত তা নয়। বরং গড় আয়ুর ট্রেন্ডটা (ধারাটা) বুঝতে হলে আমাদের আরও বেশ কয়েক বছরের তথ্য উপাত্ত দেখতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, কোভিডের সময় মানুষের মরণশীলতার মাত্রা বেড়েছে আড়াই গুণ। ফলে গড় আয়ু কিছুটা কমেছে। ৪০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মৃত্যুর হার বেশি।

বিবিএস বলছে, ২০২১ সালে হাজারে মৃত্যু বেড়ে পাঁচ দশমিক সাতজনের। ২০২০ সালে যা ছিল পাঁচ দশমিক একজন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে শূন্য দশমিক ছয়জন বেশি। জরিপে দেখা গেছে, ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ২ লাখ ৬০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার এবং নারী ৮ কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার। প্রতি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আগের মতো ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

প্রতিবেদনের তথ্য উপাত্ত বিশেষণ করে দেখা যায়, এক বছরের নিচের বয়সি শিশুর মৃত্যুহার প্রতি হাজারে মোট ২২ জন, যা ২০২০  ছিল ২১ জন। এর মধ্যে ছেলে শিশু প্রতি হাজারে ২৩ জন ও মেয়ে শিশু ২১ জন। এক্ষেত্রেও বেড়েছে মৃত্যুর হার। সার্বিক স্থানান্তরের ক্ষেত্রে তাদের প্রতিবেদন বলছে, গ্রাম  থেকে গ্রামে স্থানান্তর প্রতি হাজারে ৩১ দশমিক ৯ জন, যা ২০২০ ছিল ৩২ দশমিক ৭ জন। এছাড়া শহর থেকে পল্লিতে স্থানান্তর ৮ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ৪ দশমিক ৭ জন। এক্ষেত্রে শহর থেকে গ্রামে মানুষের ফিরে যাওয়া বেড়েছে।

শহর এলাকার অর্থাৎ শহরের মধ্যেই স্থানান্তর ১২৫ দশমিক ৯ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ১০৯ দশমিক একজন। গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর ৩০ দশমিক ৮ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ৩১ দশমিক ৩ জন। শহর থেকে শহরে স্থানান্তর ৯৫ দশমিক ১ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ৭৭ দশমিক ৮ জন। বহির্গমন হার প্রতিহাজারে ৫৫ দশমিক ৯ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ৭০ দশমিক ৩ জন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এ মান্নান বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপ। তাই এটি আগামীতে প্রকল্পের আওতায় না করে বিবিএসের রাজস্ব খাত থেকে নিয়মিতভাবে পরিচালনা করা হবে। এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেশের হাঁড়ির খবর উঠে এসেছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. শামসুল আলম বলেন, এ জরিপের মাধ্যমে এসডিজির ২৭টি সূচকের তথ্য পাওয়া যাবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপ। এখানে দেখা গেছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি। যেটি উদ্বেগজনক। এক্ষেত্রে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ট্যাপ বা টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় খুশি হওয়ার কিছু নেই। কেননা দেশের ৬১ জেলায় টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক আছে। সেই সঙ্গে ট্যাপের পানি পান করা কতটুকু নিরাপদ সেটিও প্রশ্ন সাপেক্ষ। তিনি আরও বলেন, শহর থেকে মানুষ গ্রামে যাচ্ছে, এর অন্যতম কারণ হলো এখন গ্রামে কর্মসংস্থান বেড়েছে। কৃষির বহুমুখীকরণ হয়েছে। কৃষিজাতীয় কাজ বেড়েছে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০