নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা সংক্রমণকালেও নানা কৌশলে তামাক কোম্পানিগুলো সিগারেটের বিজ্ঞাপন প্রচার করছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট বা ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তামাক কোম্পানিগুলো বেআইনিভাবে তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তামাকপণ্যের নির্দিষ্ট বিক্রয়কেন্দ্রে ৭৭ দশমিক ৬ শতাংশ বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হচ্ছে। তামাক কোম্পানিগুলো তরুণদের তামাকপণ্য সেবনে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছে। জরিপে উত্তরদাতাদের মধ্যে ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার হতে দেখেছে। কোম্পানির বিপণন কর্মীদের দ্বারা (টি-শার্ট, ক্যাপ, ভ্যান গাড়ি ইত্যাদি কৌশলে) সরাসরি তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার হতে দেখেছে ২৫ শতাংশ উত্তরদাতা।
এছাড়া ৩ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা মোবাইল ফোনের মেসেজ, ফোনে কল করে জরিপসহ নানা কৌশলে তামাকের প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালিত হতে দেখেছেন। তামাক ব্যবহারে অধিক পরিমাণে করোনার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সারা দেশে তামাকপণ্যের সরবরাহ অব্যাহত ছিল। সরবরাহের পাশাপাশি বিজ্ঞাপন ও নানা ধরনের প্রচারণা তামাক সেবনে জনগণকে উৎসাহী করে তুলেছে। সারা দেশে তামাকের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারার অন্যতম কারণ ‘এসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্ট ১৯৫৬’-তে তামাককে জরুরি পণ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ জানিয়েছে, গবেষণাকালীন সময়ে তারা তামাকজাত পণ্যের কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন দেখেননি।
গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুসারে, তামাক কোম্পানিগুলো পণ্যের প্রচারণায় বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করলেও তাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার ছোট-বড় বিভিন্ন খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র। এসব বিক্রয়স্থলের মধ্যে ৬৯ দশমিক ৩ শতাংশ দোকানে তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন সংবলিত স্টিকার, ২৮ দশমিক ৯ শতাংশে পোস্টার, ৩৫ দশমিক ১ শতাংশ দোকানে ব্র্যান্ড কালার সংবলিত আকর্ষণীয় শোকেস ও ক্যাশ বাক্স এবং ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ তামাকপণ্যের বিক্রয়কেন্দ্র বিভিন্ন সিগারেটের খালি প্যাকেট সাজিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে দেওয়া গেছে।
কভিডকালীন সময়ে মানুষ ঘরবন্দি থাকায় প্রচারণার কৌশল হিসেবে মোবাইলে সরাসরি কল দিয়ে ধূমপায়ী/অধূমপায়ী কাছে তথ্য সংগ্রহ, কৌশলে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের প্রমোশন করে বিভিন্ন তামাক কোম্পানি। ফোনে তামাক কোম্পানি থেকে কল এসেছে এমন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩১ দশমিক ২ শতাংশ ব্যক্তি জানান তাদেরকে বলা হয়েছে ‘জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে’, ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষকে জিজ্ঞেস করা হয় তারা কোন ব্র্যান্ডের এবং দৈনিক কতটা সিগারেট সেবন করেন এবং আগে কোন ব্র্যান্ডের সিগারেট সেবন করতেন। এ প্রশ্ন করা হয় ১৮ দশমিক ২ শতাংশ ব্যক্তিকে। এছাড়া তামাক কোম্পানির প্রতিনিধিরা নতুন ব্র্যান্ডের সিগারেট সম্পর্কে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ ব্যক্তিকে তথ্য দেয়। বিস্ময়কর দিক হচ্ছে, বাজেট-পরবর্তী সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কেও জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২৬ শতাংশ মানুষকে তথ্য দিয়েছেন তামাক কোম্পানির মার্কেটিং কর্মকর্তারা।
গবেষণা তথ্য মতে, ধূমপায়ী-তামাকসেবীদের করোনায় অক্রান্তের ঝুঁকি অন্তত ১৪ গুণ বেশি। তথাপি তামাক কোম্পানিগুলো মানুষের মাঝে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে। জরিপে দেখা যায়, ৫১ শতাংশ উত্তরদাতা জেনেছেন ধূমপায়ীর করোনা ঝুঁকি কম, তামাক পাতা দ্বারা করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে বলে জানেন ৩৬ শতাংশ উত্তরদাতা। এছাড়া প্রায় ১৩ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, ‘তামাক জরুরি পণ্য’ বলে শুনেছেন বা জানেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ উপরোক্ত তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেনেছেন। পত্রিকায় প্রায় ১৭ দশমিক ১ শতাংশ এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে জেনেছেন ৫ দশমিক ৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৮৫ শতাংশ মানুষ ধূমপায়ীদের করোনা আক্রান্তের হার অনেক বেশি বলে অবগত এবং ১৫ শতাংশ মানুষ ওই বিষয়ে অবগত নয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষা, অর্থ অপচয় ও চলমান করোনার ঝুঁকি বিবেচনায় মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ছে ফলে গবেষণার তথ্যে ধূমপান বর্জনে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ধূমপান ত্যাগে ইচ্ছুক কি নাÑএ বিষয়ে জানতে চাইলে জরিপে ৭৭ দশমিক ৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ‘হ্যাঁ’ এবং ২২ দশমিক ৩ শতাংশ ‘না’ উত্তর দেয়।