বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ৮ মার্চ। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১৭ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। সংখ্যাটি বাড়ছে। আশঙ্কার কথা, এখন পর্যন্ত জরিপে দেখা গেছে, রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে চার থেকে ১৪ সপ্তাহ সময় নেয়।
করোনাভাইরাস চীনে ধরা পড়ে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে। চীনে হুবেই প্রদেশের প্রধান শহর উহান থেকে রোগটি ছড়াতে থাকে। ভয়ংকর রূপ নেয় ফেব্রুয়ারিতে। পরে চীনের প্রায় সব অঞ্চলসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে ছড়ায় রোগটি। অর্থাৎ একটি স্থান থেকে বৃহৎ আকারে ছড়িয়েছে। পক্ষান্তরে আমাদের দেশে প্রবাসীদের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গা থেকে ছড়াচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে, দেশের একটিমাত্র স্থানে সীমাবদ্ধ নয় এর উৎপত্তি। বিশেষজ্ঞরা তাই বলছেন, চার সপ্তাহের আগেই করোনাভাইরাস বাংলাদেশে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এক দিনে একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক আক্রান্ত হতে পারে। কেননা একে তো ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, তার ওপর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় উদাসীনতা। একসঙ্গে অনেক মানুষ বসবাসের কারণে দ্রুত ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা জরুরি। কোনো ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত কি না তা জানার জন্য টেস্ট (পরীক্ষা) করাতে হবে। বাংলাদেশেও সঠিক পরীক্ষার জন্য কিট রয়েছে। আইইডিসিআর (রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান) করোনাভাইরাস পরীক্ষায় ব্যবহার করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া কিট। রোগীর নমুনায় করোনাভাইরাস থাকলে পরীক্ষায় তার সংখ্যা বাড়বে। ফল আসবে ‘পজিটিভ’। আইইডিসিআর সে নমুনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় পাঠাবে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য। অথচ কিটের সংখ্যা মাত্র দুই হাজারের কাছাকাছি। রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত শেষ হয়ে যাবে সব কিট। তখন পরীক্ষার সুযোগ আর থাকবে না।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। চিকিৎসকদের বাড়তি সুরক্ষা নিতে হবে। তাদের জন্য পারসোনাল প্রটেক্টিভ পোশাকও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আইসিইউ বেডের সংখ্যাও বেশি নয়। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে। হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার বা লাইন সন্তোষজনক নয়।
এত হতাশার মাঝেও সচেতন হলে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা যাবে। একে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। ব্যক্তিপর্যায়ে সর্বোচ্চ সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। আক্রান্তদের আলাদা করতে হবে। বিদেশফেরত ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে।
রতন কুমার দাস