করোনাভাইরাস আতঙ্ক রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় ধস

পলাশ শরিফ: বাংলাদেশেও এখন আতঙ্কের নাম ‘করোনাভাইরাস’। যদিও এদেশে এখনও কেউ ওই রোগে আক্রান্ত হিসেবে কেউ শনাক্ত হয়নি। তারপরও এ নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক রয়েছে। এরই মধ্যে করোনাভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশের ঝুঁকির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর্যবেক্ষণ আতঙ্ককে উসকে দিয়েছে। যে কারণে রাজধানীর অনেকেই বিদেশি নাগরিক ও জনসমাগম এড়িয়ে চলছেন। ‘বাংলাদেশ উচ্চ ঝুঁকিতে আছে’ এমন তথ্য প্রকাশের পর অনেকে বাধ্য না হলে বাইরে বের হচ্ছেন না। করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কে দেশের রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বড় হুমকির মুখে পড়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি মাসে রেস্টুরেন্টগুলোর ব্যবসা প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীতে দেশি-বিদেশি স্বনামখ্যাত খাবারের ব্র্যান্ডগুলোর গ্রাহকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চীনসহ বিদেশি নাগরিকরা। এর বাইরে অভিজাত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও অবসরে স্বস্তি খুঁজতে রেস্টুরেন্টগুলোকে বেছে নেন। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট-মিটিংয়ের আয়োজনেও রেস্টুরেন্টের কদর রয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে বিদেশি নাগরিকরা বিশেষ নজরদারির মধ্যে রয়েছেন। নগরবাসীও যতটা সম্ভব বিদেশি নাগরিকদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ে গুজব-গুঞ্জনের কারণে নগরবাসী চায়নিজসহ বিদেশি খাবারের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। যে কারণে রেস্টুরেন্টগুলোয় গ্রাহকের উপস্থিতি কমছে। কয়েক মাস আগের তুলনায় গ্রাহক সংখ্যা অর্ধেকে নেমেছে। নির্দিষ্ট সংখ্যক গ্রাহক অনলাইনে-ফোনে অর্ডার দিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিচ্ছেন। কিন্তু সেই সংখ্যাও নগণ্য। যে কারণে রেস্টুরেন্টগুলোর ব্যবসায় ধস নেমেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো দৈনিক বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে রেস্টুরেন্টগুলোকে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবেÑএমন আশঙ্কা বাড়ছে।

ধানমন্ডির একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টের কর্ণধার নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, ‘দেশি খাবারের দোকানগুলোয় করোনাভাইরাসের সরাসরি প্রভাব নেই। তবে অথেনটিক চায়নিজ খাবারের রেস্টুরেন্টগুলোসহ বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর ওপর বেশি বিপত্তির মুখে পড়েছে। করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কারণে সেসব রেস্টুরেন্টে মানুষের উপস্থিতি অনেক কম।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর এ সময়ে প্রতিদিন আমার রেস্টুরেন্টে বিক্রি এক লাখ টাকার ওপরে ছিল। এখন তা নেমে ৫৫ থেকে ৬০ হাজারে এসেছে। ব্যবসায় এখন খারাপ অবস্থা।’

তথ্যমতে, চীনের উহান প্রদেশে গত বছরের শেষদিকে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এরপর বিশ্বের ৮১টি দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি নাগরিকও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে বাংলাদেশে এখনও ওই ভাইরাস আক্রান্ত হিসেবে কাউকে শনাক্ত করা হয়নি। যদিও সন্দেহজনক পাঁচজনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার মোংলা বন্দরে একটি বিদেশি পণ্যবাহী জাহাজের তিন নাবিককে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। জাহাজ থেকে পণ্য খালাসও বন্ধ রাখা হয়েছে।

এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ২০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত হয়েছে ৯৫ হাজারের অধিক মানুষ। চীনের বাইরে দক্ষিণ কোরিয়া ও ইরানে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। এছাড়া ভারত, পাকিস্তান ও নেপালসহ পার্শ্ববর্তী দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ কাটছে না। এমন অবস্থার মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করোনাভাইরাস রোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। দেশটির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোয় বাইরে থাকা আসা যাত্রীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে ছাড়া হচ্ছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বড় বড় নগরীর হাসপাতালগুলোয় আগাম প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতামূলক অবস্থানের পর গত বুধবার ‘বাংলাদেশও করোনাভাইরাসের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে’ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। বাংলাদেশ উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে এক সংবাদ সম্মেলনে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে বিদেশিরা অবাধে প্রবেশ করছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের পাশে ভারতের মতো রাষ্ট্র রয়েছে। এজন্য করোনা ঝুঁকি প্রতিরোধে পরীক্ষা পদ্ধতি আরও বিজ্ঞানসম্মত হওয়া উচিত। শুধু চীনা নাগরিকদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু অন্য রাষ্ট্রের নাগরিকদের পরীক্ষা করা হচ্ছে না। সব রাষ্ট্রের নাগরিকদের পরীক্ষার আওতায় আনা দরকার।’

চীনের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্যের পর করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে। করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে অনেকেই জনসমাগম এড়িয়ে চলছেন। বিদেশ নাগরিকদের ঘিরে উৎকণ্ঠাও বাড়ছে। এ বিষয়ে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইসিডিডিআরএ) ‘চীনের রাষ্ট্রদূতের কাছে ভুল তথ্য যেতে পারে, তিনি ভুলবশত বলতে পারেন’ বলে দাবি করে এ-সংক্রান্ত সংবাদ সঠিক নয় বলা হলেও আতঙ্ক কাটছে না।    

এদিকে রেস্টুরেন্টগুলোয় বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যয় কমানোর পথ খোঁজা হচ্ছে। এজন্য কর্মী ছাঁটাই করা হচ্ছে। এতে দক্ষ হয়েও অনেকেই আকস্মিকভাবে বেকার হয়ে পড়ছেন। একটি বিদেশি চেইন ফুড শপের ম্যানেজার বলেন, ‘আগে এখানে ২০ জন কর্মী ছিলেন। এখন গ্রাহক ও বিক্রির চাপ কম থাকায় ১২ জন কাজ করছেন। আয় কমার কারণেই কর্মী কমাতে হয়েছে। দেশি-বিদেশি অনেক রেস্টুরেন্ট কর্মীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছি।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০