রহমত রহমান: অনলাইন মার্কেটপ্লেস প্রিয়শপ ডট কম। অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপন, যাতে লেখা— ‘ঘরে বসে অর্ডার করি, যা কিছু দরকারি।’ আরও বলছে, ‘চাল, ডাল, তেলসহ সকল গ্রোসারি পণ্য, মসক নিধন, মাস্কসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য মিলবে প্রিয়শপ ডট কম-এ।’ বিজ্ঞাপন দেখেই একজন ক্রেতা (নাম প্রকাশ করছি না) পাঁচটি পণ্যের অর্ডার করেন, যাতে ৫৬৮ টাকার সঙ্গে ৫০ টাকা শিপিং চার্জ রাখা হয়। বিকাশে পেমেন্ট নেওয়া হয়।

এসএমএসে জানানো হয়, ১২ এপ্রিল পণ্য ডেলিভারি হবে। ১৩ এপ্রিল ই-মেইল করা হলে জানানো হয়, ১৫ এপ্রিল ডেলিভারি হবে। ১৬ এপ্রিল মেইল করা হলে আর জবাব দেয়নি। পরে ফেসবুক পেজে জানতে চাইলে বলা হয়, অর্ডার করা পণ্য নেই। ১৯ এপ্রিল পণ্য হাতে পেলে ডেলিভারি হবে। ৬ মে তিনটা পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয়।
## প্রতারণার শীর্ষে প্রিয়শপ, ইভ্যালি, চালডাল
## চটকদার বিজ্ঞাপন, পণ্য না থাকলেও চলে বিক্রি
## লকডাউনে বিক্রি বেড়েছে, পণ্য সংগ্রহ করতে না পারায় ডেলিভারিতে সমস্যা
## প্রতারিত হলে ই-ক্যাব বা ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ দিতে হবে—ই-ক্যাব
## নামসর্বস্ব সাইট প্রতারণা করে অনলাইন মার্কেট নষ্ট করছে
ডেলিভারি ম্যান মহব্বত জানান, বাকি দুটি তাদের কাছে নেই, কবে পাওয়া যাবে তারও নিশ্চয়তা নেই। টাকা ফেরত দেওয়া হবে। পণ্য না থাকলে অর্ডার নেওয়া হয় কেন—এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি। ৮ মে টাকা ফেরত চেয়ে প্রিয়শপের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে জানতে চাইলে বলা হয়, অন্য পণ্য নিতে, না হয় টাকা বিকাশ ওয়ালেটে দেবে। কিন্তু এরপর কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও ১৫ মে পর্যন্ত টাকা বা পণ্য কোনোটাই ফেরত দেওয়া হয়নি।

শুধু প্রিয়শপ নয়, ইভ্যালি, দারাজ, চালডাল ডট কম, ফাল্গুনী শপসহ বেশিরভাগ অনলাইন মার্কেটপ্লেসের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। তবে কয়েকটি মার্কেটপ্লেসের সেবার প্রশংসা করেছেন ভালো সেবা পাওয়া কিছু ক্রেতা।
বেশিরভাগ ক্রেতার অভিযোগ, মনভোলানো বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। পণ্য অর্ডার করলে সময়মতো ডেলিভারি পাওয়া যায় না। কোনো কোনো পণ্য দু-এক মাস পরও ডেলিভারি দেওয়া হয়। কিছু পণ্য ডেলিভারি হয়, বেশিরভাগ অর্ডার করা পণ্যের ক্ষেত্রে তারা বলে, তাদের কাছে নেই। টাকা রিফান্ড চাইলে নানা অজুহাত, দিনের পর দিন ‘দিচ্ছি, দেব’ বলে সময়ক্ষেপণ করে।

অভিযোগ জানাতে ও টাকা ফেরত পেতে দিনের পর দিন ফোন ও এসএমএস ছাড়াও ম্যাসেঞ্জারে জানতে চাইলে কোনো জবাব দেয় না। প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে প্রমাণসহ কমেন্ট করা হলে তার জবাব না দিয়ে মুছে ফেলা হয়। বেশিরভাগ অনলাইনের পণ্য স্টকে না থাকলে বা ডেলিভারি দেওয়ার ক্ষমতা না থাকলেও তাদের অনলাইনে কোনো ধরনের স্টক আউট না লিখেই অর্ডার নেয়। টাকা পেমেন্টের পর শুরু করে গড়িমসি।
মাহমুদুল হক তালুকদার নামে একজন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি মি. নুডলসের ৩৮০ টাকার একটি প্যাকেজ অর্ডার করি। ১১ এপ্রিল ডেলিভারি না পেয়ে আমি তিনবার হটলাইনে ফোন দিই। প্রতিবারই আমাকে করফার্ম করে বলে, ডেলিভারির জন্য কাজ চলছে। খুব দ্রুত ডেলিভারি পাবেন। ২৬ এপ্রিল একটি ই-মেইলে জানানো হলো আমার অর্ডারটি ক্যানসেল। আমি তাদের এ সার্ভিসে অভিভূত।’

সাদদাম হোসেন নামে একজন ফাল্গুনী শপের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘গত মাসে কয়েকটি পণ্য অর্ডার করেছি, কিছুই পাইনি। কবে পাব জানি না।’
চালডাল ডট কমের বিরুদ্ধে তাসনিম হোসেন শিবলী নামে একজন অভিযোগ করে বলেন, ‘মোটেও ভালো নয়। অর্ডার করেছি ১১ এপ্রিল। আমার প্রোডাক্টগুলো খুবই দরকার ছিল, কিন্তু ডেলিভারি দেয়নি। ওদের লাইভ চ্যাটে জিজ্ঞাসা করলে বলে, আপনার প্রোডাক্ট রাস্তায় আছে, কিছুক্ষণের মধ্যে পাবেন। তিন দিন আগে আমাদের অনুমতি ছাড়াই অর্ডার বাতিল করে দিয়েছে, যেক্ষেত্রে আমরা অর্ডার বাতিল করতে মানা করেছিলাম। চালডালে প্রোডাক্ট না থাকলেও তারা অর্ডার নেয়, কিন্তু ডেলিভারি দিতে পারে না।’

ইভ্যালির বিরুদ্ধে সজীব মিয়া নামে একজন অভিযোগ করে বলেন, ‘ট্রিমার অর্ডার করেছিলাম। ৭৯৮ টাকা বিকাশে পরিশোধ করেছিলাম। ৭২ ঘণ্টা পেরোলে ফোন করার পর জানতে পারি গ্রোসারি ছাড়া কোনো কিছুই ডেলিভারি দিচ্ছে না। তো আমি রিফান্ডের রিকোয়েস্ট করেছি। তিন দিন হলো, টাকা ফেরত পাইনি।’

প্রিয়শপ ডট কমের বিরুদ্ধে সোহেব খান নামে একজন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি অর্ডার করেছি ৯ এপ্রিল রাতে। টাকাও পরিশোধ করেছি। এখন পর্যন্ত অন প্রসেসিংয়ে আছে। ওদের সার্ভিসে আমি ধন্য।’
মিনা বাজারের প্রশংসা করে সারা মোনামি হোসেন নামে একজন বলেন, ‘মিনা বাজার আর ঘরের বাজার থেকে কিনেছিলাম। মিনা বাজার ঠিকঠাকমতো দিয়েছিল। ঘরের বাজার দুটা জিনিস ভুলে দেয়নি। কিন্তু টাকা পুরোটাই নিয়েছে।’

চালডাল ডট কমের বিরুদ্ধে মো. বেলাল হোসেন মুনা নামে একজন অভিযোগ করে বলেন, ‘চালডাল ডট কমের অবস্থা খুবই বাজে। ডাল, আলু, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু দেয়নি। দিয়েছে শুধু টয়লেট টিস্যু।’
শাহাদাত হোসেন নামে একজন বলেন, ‘ঘরের বাজার-এর ভালো রিভিউ পেয়েছি। তারা ক্যাপাসিটি ফিল আপ হয়ে গেলে নতুন কোনো অর্ডার নেয় না। তাই ইনটাইম ডেলিভারি দিতে পারছে।’

প্রিয়শপ ডট কমের বিরুদ্ধে মনির হোসেন শামীম নামে একজন অভিযোগ করে বলেন, ‘৮ এপ্রিল অর্ডার করলাম ২১ আইটেম, তিন হাজার ৩৬৪ টাকা। ক্রেডিট কার্ডে পে করি। পারশিয়াল ডেলিভারি, থার্ড পার্টি দেখে ১৮ এপ্রিল অর্ডার ক্যানসেল করি। আজও টাকা ফেরত পেলাম না। ফোন ধরে না। ম্যাসেঞ্জারে নতুন নতুন লোক আসে, উল্টোপাল্টা উত্তর দেয়। ২৩ এপ্রিল মেইল করলে ২৪ এপ্রিল ফোন করে বলে, টাকা ফেরত দিতে আরও ১৪ দিন লাগবে। ১৬ দিন শেষ। এক মাস এক দিন। আজও টাকা ফেরত পাইনি। এরা করছে ঢাকায় অনলাইন ব্যবসা। প্রস্তুত থাক প্রিয়শপ, শিগগিরই দেখা হবে।’

প্রিয়শপ ডট কমের বিরুদ্ধে শামীম খান নামে একজন অভিযোগ করে বলেন, ডিসলার ক্যামেরা স্মাইল বক্স অর্ডার করেছি ১১ ফেব্রুয়ারি। বিকাশে টাকা পরিশোধ করেছি, এখনও পাইনি। জুলফিকার আলী হীরা নামে একজন অভিযোগ করে বলেন, ‘এক হাজার ৪৩৪ টাকার পণ্য অর্ডার করেছি। ৬৭০ টাকার প্রোডাক্টের টাকা এখনও ফেরত পাইনি।
সবচেয়ে বেশি অভিযোগ প্রিয়শপ ডট কমের বিরুদ্ধে। বেশিরভাগ অভিযোগে বলা হয়, কোনো কোনো পণ্য দুই মাস, এক মাস আগে অর্ডার করা হলেও ডেলিভারি দেওয়া হয়নি। কিছু অর্ডারের সামান্য পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হলেও বেশিরভাগ পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, এসব পণ্যের স্টক নেই, কিন্তু টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। ফোন করা হলে একের পর এক তারিখ দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগীরা আরও অভিযোগ করেন, পণ্যের স্টক না থাকলেও অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। যেসব পণ্যের স্টক নেই, তাদের সঙ্গে চুক্তি নেই, সেসব পণ্যেরও বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের ঠকানো হচ্ছে। এ নিয়ে কয়েকজন ভোক্তা অধিকারে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানানো হয়েছে। হেল্পলাইন নাম্বারে ফোন করলে তারা মিষ্টি কথা বলে আশ্বাস দেয়, কিন্তু দিনের পর দিন একই অবস্থা। ফেসবুক পেজে অভিযোগ দিলে বলে ইনভয়েস নাম্বার ইনবক্স করেন। এরপর আর কোনো উত্তর নেই।
সুহেল চাঙমা নামে একজন প্রিয়শপের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে পার্সেল অর্ডার করেছি, টাকা পরিশোধ করেছি। এখনও হাতে পাইনি। যোগাযোগ করা হলে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে দেবে বলে কথা দেয়। ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস চলে এসেছে, এখনও সমাধান পাইনি।

ইভ্যালির বিরুদ্ধে রুবায়েত রিশহাদ নামে একজন অভিযোগ করে বলেন, দুই সপ্তাহ আগে একটি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার অর্ডার করেছি। ১৩ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করেছি। এখনও পণ্য পাইনি। চার দিন ধরে হটলাইনে ফোন করে আসছি, কেউ ধরছে না। রিপোর্ট করেছি, কোনো রিপ্লাই নেই। ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ করেছি, কোনো আপডেট নেই। একই অভিযোগ করেন মাহতাব আলম। তিনি বলেন, আমি জানুয়ারিতে অর্ডার করেছি, টাকা পরিশোধ করেছি। এখনও পণ্য পাইনি।
ইভ্যালির বিরুদ্ধে হানিফ খান নামে একজন অভিযোগ করে বলেন, আগের অর্ডারের পণ্য ডেলিভারি দিন, তারপর নতুন অর্ডারের জন্য অ্যাড দিন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি ৯০ শতাংশ ক্যাশ ব্যাক প্রমোশনের ওয়ালটনের ৩৯ ইঞ্চি এলইডি টিভি অর্ডার দিয়েছি। বিকাশের মাধ্যমে ২৩ হাজার ৯৯০ টাকা পরিশোধ করেছি। ৮ মে পর্যন্ত ক্যাশ ব্যাক ও পণ্য ডেলিভারি পাইনি। ৮৭ দিনে আমি কতবার পণ্য দিয়েছি, ম্যাসেঞ্জ করেছি কোনো উত্তর পাইনি। কোনো দায়িত্বজ্ঞান নেই। খারাপ ম্যানেজমেন্ট দিয়ে চলছে ইভ্যালি।

ইভ্যালির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, অর্ডার ক্যানসেল করলেও করে না, টাকা ফেরত দেয় না। এক পণ্যের নাম দেখিয়ে অন্য পণ্য দেয়। অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা হয় না। অফারের নামে প্রতারণা করে। ৭২ ঘণ্টায় ডেলিভারির কথা বলে ৬০ দিন থেকে ২০ দিনেও ডেলিভারি দেয় না।
চালডাল ডট কমের বিরুদ্ধে বিধুষ বোস নামে একজন অভিযোগ করে বলেন, পণ্যের অর্ডার দিয়ে বলতে বলতে ক্লান্ত। এক মাস হলে গেল এখন পর্যন্ত টাকা ফেরত দেয়নি। প্রত্যেক ব্যবসার একটা নীতি আছে। সত্যি বলতে তাদের কোনো নীতি নেই। মানুষের টাকা মেরে তারা ব্যবসা করছে, শাস্তি হওয়া উচিত।
আবির হাসান নামে একজন অভিযোগ করে বলেন, ডেকো অর্ডার করেছি ‘বাই টু গেট ওয়ান’। কিন্তু ফ্রি পণ্য দেয়নি। আবার দুই প্যাকেট নিডো ৭০০ গ্রাম অর্ডার করেছি, ডেলিভারি করেছে ৩৫০ গ্রামের দুটি নিডো। ফেরত দিয়েছি। টাকা ফেরত দেয়নি।
রওশন আরা আক্তার নামে একজন বলেন, খুবই বাজে সার্ভিস। ২৯ এপ্রিল অর্ডার করেছি। প্রতিদিন বলে, আজকে দেবে। আবার বারবার এসএমএস করে ‘ফাস্টার দ্যান বিফোর’। ন্যূনতম লজ্জা থাকা উচিত। পুরাতন অর্ডার ডেলিভারি দিতে পারে না। আর এসএমএস পাঠায় আরও পণ্য অর্ডারের জন্য।
জোবায়ের চৌধুরী নামে একজন অভিযোগ করেন, প্রথম অর্ডারে অভিজ্ঞতা ভালো নয়। প্রথমে অর্ডার বাতিল করে মেসেজ দেয়, পরে আবার প্রসেস করে ডেলিভারি পাঠায়। অফার ছিল ৩০০ টাকার বেশি প্রথম অর্ডারে ২০ টাকা ছাড়। অর্ডারে সেটা শো অফ করেছিল। কিন্তু ডেলিভারির সময় ২০ টাকা গায়েব। সব জালিয়াতি।
চালডাল ডট কমের বিরুদ্ধে ক্রেতাদের বেশিরভাগ অভিযোগ, পণ্য স্টকে না থাকলেও চটকদার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। স্টক আউট দেওয়া হয় না। ডেলিভারি ম্যান এসে বলে, এসব পণ্যের স্টক নেই। পণ্য ডেলিভারির সময় নষ্ট করে ফেলে। টাকা ফেরত দেওয়া হলেও টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করে। অনলাইনে অভিযোগ করে কমেন্ট করলে সমাধান না দিয়ে তা মুছে ফেলা হয়। কম্বো অফারের নামে প্রতারণা করা হয়।
এ বিষয়ে প্রিয়শপ ডট কমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশিকুল আলম খান শেয়ার বিজকে বলেন, গত মাসে সবচেয়ে বেশি কমপ্লেইন পেয়েছি। তার মধ্যে স্যাভলন নিয়ে। আর কিছু আছে স্কয়ারের পণ্য। আমরা পাঁচ হাজার স্যাভলন অর্ডার করে চার হাজার পেয়েছি। লকডাউনের শুরু থেকে ফ্যাক্টরিগুলো ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকায় প্রবেশ করতে পারছিল না। আমাদের ডিস্ট্রিবিউটর নেসলে, স্কয়ার, এসিআই-সহ সবার ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্টগুলো বেলা ২টা পর্যন্ত খোলা ছিল। ঢাকার প্রত্যেক পয়েন্ট থেকে আমাদের কিছু পণ্য সংগ্রহ করতে হয়। করোনা আর জনবল সংকটের কারণে আমরা সব পয়েন্ট থেকে পণ্য সংগ্রহ করতে পারিনি।
তিনি বলেন, সাপ্লাইয়ের সমস্যার কারণেও পণ্য সংগ্রহ ও ডেলিভারি করা যায়নি। যেসব পণ্য ডেলিভারি দিতে পারিনি, তাদের রিফান্ড প্রসেস শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের হিসাবরক্ষক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় রিফান্ড সমস্যা হচ্ছে। আমরা ভেবেছিলাম ১৫ দিনের মধ্যে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। সেজন্য ক্রেতাদের কাছ থেকে আমরা ১৫ দিন সময় নিয়েছিলাম। এর মধ্যে যেগুলো সম্ভব হয়েছে, ডেলিভারি করেছি। কিন্তু তিনি এখনও অসুস্থ। ফলে রিফান্ড সমস্যা হচ্ছে।
আশিকুল আলম খান বলেন, আমরা কয়েকটি কুরিয়ার দিয়ে ডেলিভারি করি। লকডাউনের সময় কুরিয়ারে লোকবল সমস্যা ছিল। রাইডার সংকট ছিল। লকডাউন সময়ে অর্ডার কী পরিমাণ বেড়েছে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কাস্টমার, অর্ডার সবই বাড়ছে। ভ্যারাইটিজ পণ্য অর্ডার করেছে। লকডাউনের সময়ে যা জোগাড়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে মানুষ অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত হয়েছে। এর ফলাফল পরে আমরা পাব।
অভিযোগের বিষয়ে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই–ক্যাব) মহাসচিব মো. আব্দুল ওয়াহেদ তমাল শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ডেলিভারি ম্যানের সংকট রয়েছে। অনেকেই ঢাকার বাইরে চলে গেছে। আবার লকডাউনের কারণে সংগ্রহেও সময় লেগেছে, যার কারণে পণ্য ডেলিভারিতে সময় বেশি লাগছে।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নামসর্বস্ব সাইট থেকে মানুষ পণ্য কেনে, যারা ই-ক্যাবের সদস্য নয়। তাদের কাছ থেকে যখন পণ্য কেনে তখন এসব সমস্যা হয়। এর ফলে এসব অভিযোগের বিষয়ে আমরা ই-ক্যাব থেকে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে মানুষের মধ্যেও সচেতনতার অভাব রয়েছে। মানুষ নামসর্বস্ব সাইট বা ফেসবুক পেজ দেখেই পণ্য কিনে প্রতারিত হয়। ক্রেতারাও সাইট দেখে যাচাই করতে পারেন—পরিচিত সাইট কি না, ই-ক্যাব সদস্য কি না? এসব দেখে পণ্য কিনলে প্রতারিত হবেন না। আর হলেও আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।
তিনি বলেন, ই-ক্যাবের ওয়েবসাইটে অভিযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। অথবা ভোক্তা অধিকারেও অভিযোগ দিতে পারেন।’