নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সোমবার (২৫ মে) পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫। ১৫ জনের মধ্যে ৫ জন রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) ও ১০ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও)। গত দুইদিনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন সাতজন। এর মধ্যে ঢাকা কাস্টম হাউসের তিনজন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের দুইজন ও চট্টগ্রাম ভ্যাটের একজন। আক্রান্তদের একাধিক সহকর্মী সোমবার রাতে শেয়ার বিজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা কাস্টম হাউসে তিনজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার করোনা সনাক্ত হয়েছেন। তিনজনই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর আগে শুক্রবার (২২ মে) বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ঢাকা কাস্টম হাউসে ১৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে। যার মধ্যে তিনজনের করোনা সনাক্ত হয়। ঢাকা কাস্টম হাউস থেকে সার্বক্ষনিক তাদের সাথে যোগাযোগ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন-দুই রাজস্ব-চার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত [1]
আরো পড়ুন-কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনার ‘নমুনা পরীক্ষা’ হচ্ছে [2]
আরো পড়ুন-করোনা ‘যোদ্ধা’ কাস্টমস [3]
আরো পড়ুন-সুরক্ষা ছাড়াই শুল্কায়ন, ঝুঁকিতে কাস্টমস কর্মকর্তারা [4]
কর্মকর্তারা আরো জানান, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আহসান হাবীব, নুরুল মোস্তফা ও জাফরুল্লাহ, চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের খাগড়াছড়ি বিভাগ, সীতাকুণ্ড ভ্যাট সার্কেলের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নুরুল হাসান নোবেল করোনা সনাক্ত হয়েছেন। তারা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এর আগে ৮ জন কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন রাজস্ব কর্মকর্তা ও ছয়জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। যার মধ্যে রয়েছে-চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে ৫ জন। এরা হলেন-রাজস্ব কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন মজুমদার ও আমজাদ হোসেন, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. দারাশিকো, সুজন কুমার সরকার, ফারুক আব্দুল্লাহ। আইসিডি কমলাপুরের একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হলেন নুরে আলম। ভ্যাট পশ্চিম কমিশনারেটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা অহিদুল ইসলাম। ভ্যাট উত্তর কমিশনারেটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন।
সূত্র জানায়, আক্রান্ত ১৫ জনের মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ৮ জন। ৮ জনের মধ্যে পাঁচজন রাজস্ব কর্মকর্তা ও তিনজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। ঢাকা কাস্টম হাউসের তিনজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। চট্টগ্রামের ভ্যাট কমিশনারেটের একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। আইসিডি কমলাপুরের একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। ভ্যাট উত্তর কমিশনারেটের একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। ভ্যাট পশ্চিম কমিশনারেটের একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাকাএভ) সদস্য সচিব মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘কর্মকর্তাদের যাতে যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত হয় সেজন্য বাকাএভ থেকে আক্রান্ত সবার সাথে যোগাযোগ ও সাধ্যমতো সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। যে হারে মাঠ পর্যায়ের রাজস্ব কর্মকর্তা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। সুরক্ষা সরাঞ্জাম প্রদান, দ্রুত করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।’
একাধিক কাস্টমস কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলে জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্ত কর্মকর্তার সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। অনেকেই অসুস্থ হয়ে নমুনা দিয়েছেন, যা এখনো রেজাল্ট আসেনি। এছাড়া সুরক্ষা সামগ্রীর অপ্রতুলতার কারণে এবং কাস্টমস হাউসগুলোতে জনসমাগমের কারণে প্রতিনিয়ত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আক্রান্ত কর্মকর্তাদের দ্রুত সনাক্তে গণহারে নমুনা পরীক্ষা ও আক্রান্তদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সূত্রমতে, দেশে সাধারণ ছুটির প্রথম থেকেই খোলা রয়েছে দেশের সব কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশন। এছাড়া ঈদের ছুটির মধ্যেও খোলা রয়েছে সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশন। আমদানি-রপ্তানি সচল রাখা, নিত্যপ্রয়োজনীয় ও চিকিৎসা সরঞ্জাম খালাস এবং রাজস্ব আহরণের স্বার্থেই সীমিত পরিসরে খোলা রাখা রয়েছে।
সাধারণ ছুটির প্রথম থেকে সীমিত পরিসরে খোলা ছিল কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশন। কিন্তু পরবর্তীতে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে নির্দেশ দেয় এনবিআর। কাস্টমস কর্মকর্তারা সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই ঝুঁকি নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন। পরে হাউস থেকে কিছু সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। এছাড়া খোলা রয়েছে ভ্যাট কমিশনারেট। কমিশনারেটে কর্মকর্তারা সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই ভ্যাট সেবা দেওয়া ও রাজস্ব আহরণ করছেন।
###