Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 10:33 am

করোনায় আরও ভারী হলো রিজেন্ট টেক্সটাইলের লোকসান

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আগে রিজেন্ট টেক্সটাইলের আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলেও তালিকাভুক্তির পর সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তালিকাভুক্তির পর থেকেই শতভাগ রপ্তানিমুখী এ প্রতিষ্ঠানের আয়-মুনাফায় ধারাবাহিক অবনতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর মধ্যে করোনার ছোবলে আরও পিছিয়ে পড়েছে কোম্পানিটির ব্যবসা। করোনায় ধাক্কায় সর্বশেষ তিন প্রান্তিক মিলে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় আগের চেয়ে ৬০ শতাংশ কমে গেছে। বছর শেষে তা আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বস্ত্র খাতের এই কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৫ সালে। তালিকাভুক্তির বছরে কোম্পানির পণ্য বিক্রি বাড়তে দেখা যায়। ২০১৪ সালে মোট ১৬৫ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি। পরের বছর তা বেড়ে হয় ২০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ তালিকাভুক্তির বছরে (২০১৫ সালে) বিক্রি বাড়তে দেখা যায়। পরের বছর তা নেমে আসে ১০৫ কোটি টাকায়। পরের দুই বছর বিক্রি কিছুটা ভালো হলেও আর্থিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি কোম্পানিটি। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে ১৪৫ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করে রিজেন্ট। কিন্তু সব খরচ মিটিয়ে মুনাফা কমে যায় কোম্পানিটির। ওই বছর কোম্পানিটি ১১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা মুনাফা করে, আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এই সময়ে কোম্পানির প্রফিট রেশিও ছিল আট দশমিক ১১ শতাংশ, এর আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

এদিকে চলতি বছর মুনাফা আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের অবস্থা করুণ। কারণ বাংলাদেশে মার্চে করোনা শনাক্ত হলেও এর অনেক আগেই বস্ত্র খাতে এর ধাক্কা লাগে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। তখনই এই প্রতিষ্ঠানের ওপর করোনার ধাক্কা লাগে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসায়িকভাবে পিছিয়ে যায়।

কোম্পানির দেওয়া আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে শূন্য দশমিক ৩৪ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ইপিএস হয়েছিল শূন্য দশমিক ৮৬ টাকা। আর চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের তিন মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে শূন্য দশমিক ১৪ টাকা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস হয়েছিল শূন্য দশমিক ৩৩ টাকা। জানা যায়, এ সময়ে কোম্পানির বিক্রিও আগের চেয়ে কমে গেছে।

জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সচিব রিয়াজুল হক শিকদার শেয়ার বিজকে বলেন, করোনার মন্দা প্রভার প্রায় সব খাতের কোম্পানিতেই পড়েছে। এর মধ্যে বস্ত্র খাতের সমস্যা একটু বেশি হয়েছে, বিশেষ করে যারা রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান তারা। আমরাও এর মধ্যে পড়েছি। তবে আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়। সবকিছু ঠিক হয়ে গেলে নিশ্চয় আমরাও ঘুরে দাঁড়াতে পারব।

এদিকে তালিকাভুক্তির পর কোম্পানির আয়-মুনাফা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শেয়ারদরও আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে। মূলত ২০১৭ সালে এই কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিকহারে বাড়তে থাকা। তখন এই শেয়ার নিয়ে কারসাজির খবর শোনা যায়। একটি মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে তখন দু-তিনজন মিলে এই কারসাজির ঘটনা ঘটায় বলে জানা যায়। তখন অল্প দিনের ব্যবধানে শেয়ার ১৩ থেকে ৩৬ টাকায় চলে যায়। এর পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে এই শেয়ারদর কমতে থাকে। একসময় তা অভিহিত দরের নিচে চলে আসে, বর্তমানে যার দর দাঁড়িয়েছে ৯ টাকায়

এদিকে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতে পারছে না কোম্পানিটি। সর্বশেষ দুই বছরে এই কোম্পানিটি পাঁচ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার দিয়ে ‘বি ক্যাটেগরি’তে অবস্থান করছে। কোম্পানিটির ৫৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে পরিচালকদের কাছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৪০ দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে। এছাড়া পাঁচ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।