সানেমের বাজেট-পূর্ব ওয়েবিনার

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্বাপের তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন করে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। কমেছে শিল্প-কারখানার উৎপাদন। উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা কমে গেছে। অর্থনৈতিক গতি ফিরিয়ে আনতে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোকে স্বীকার করা প্রয়োজন। সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় এসব খাতকে নিয়ে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনতে হবে বলে মতামত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

গতকাল সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে তারা এ মতামত দেন। ‘বাজেট ২০২১-২২: বাস্তবতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক ওয়েবিনারটিতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক এবং সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। মূল প্রবন্ধে ড. সায়মা হক বিদিশা উল্লেখ করেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট করোনাকালীন দ্বিতীয় বাজেট হওয়ার কারণে কিছু কিছু বিষয়কে অধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত। বাজেটে আমাদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, বাজেটের আয়ের উৎসের, কর-জিডিপি হার খুব কম, যদিও রাতারাতি এর ব্যাপক পরিবর্তন সম্ভব নয়; তারপরও যতটুকু সম্ভব কর আহরণের পরিমাণ বাড়াতে হবে এই বাজেটে। তাই এই চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে এবারের বাজেটে।

করোনাকালে প্রেক্ষাপটে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব অনেক বেশি। স্বাস্থ্য খাতে এতটা গুরুত্ব দেয়ার পরও গত বছর ৩০ শতাংশের কম বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন দেখতে পেয়েছি আমরা। শিক্ষা খাতকে অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে গত এক বছরে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে, সেদিকে প্রাধান্য দিতে হবে। করোনাকালে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা যে প্রযুক্তিগত বিভাজনের শিকার হয়েছে, সেদিক বিবেচনা করে এবারের বাজেটে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ বাড়াতে হবে বলে উল্লেখ করেন।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি না হয় সেদিক বিবেচনা করে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, যেন শিক্ষার্থীরা কম খরচে ইন্টারনেট সুবিধা পেতে পারে। করোনাকালে প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে সামাজিক সুরক্ষা খাতকে বিবেচনা করতে হবে এবারের বাজেটে।

সামাজিক সুরক্ষা খাতের কথা বলতে গেলে সর্বপ্রথম একটি বিষয় স্পষ্ট করে উল্লেখ করা দরকার, সেটি হলো সরকারি পেনশন, সঞ্জয়পত্রের সুদ, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি বাদে, মূল যে কাঠামো রয়েছে সেই কাঠামোর বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং এক্ষেত্রে নতুন কিছু বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে।

প্রথমত, করোনাকালে যে নতুন দারিদ্র্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনতে হবে। দ্বিতীয়ত, শহরাঞ্চলের দরিদ্রদের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ দিতে হবে এবং তৃতীয়ত, সামাজিক সুরক্ষা খাতকে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের (এনএসএসএস) আলোকে ঢেলে সাজাতে হবে।

সানেম সুপারিশ করে, এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নি¤œ আয়ের মানুষের অবস্থার পরিবর্তনে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের নেয়া প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়নের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতাভুক্ত করতে হবে। এছাড়া সামাজিক সুরক্ষার সুবিধাভোগী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল ডেটাবেজ তৈরি করতে হবে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন।

ড. সেলিম রায়হান বলেন, আগামী বাজেটে আমার বড় ধরনের কোনো প্রত্যাশা নেই। আমরা চাই আগামী বাজেটে যে বিষয়গুলো অত্যন্ত জরুরি সেগুলো যাতে অন্ততপক্ষে স্বীকার করা হয়। কভিডের কারণে স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাত, দারিদ্র্য, জেন্ডার বৈষম্য, কর্মসংস্থান ইত্যাদির ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, আগামী বাজেটে তা স্বীকার করা হবে, আমরা এমনটা প্রত্যাশা করি। আমাদের আরেকটি প্রত্যাশাও ছিল, করোনাকালে সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সঠিক তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০