নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-১৯ অতিমারির সময় পরিবারের সব সদস্য বিশেষ করে শিশু ও প্রবীণদের দেখাশোনার দায়িত্ব নিতে গিয়ে চাকরি হারিয়েছেন ৩৪ শতাংশ নারী। এসব নারী পরবর্তী সময়ে তাদের চাকরি ফিরে পাননি। বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।
গতকাল বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে কডিড-১৯ অতিমারির আর্থ-সামাজিক প্রভাব ও নীতি উদ্যোগ: ভবিষ্যতের জন্য অনুশীলন’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের দারিদ্র্য ও ইক্যুইটি গ্লোবাল প্র্যাকটিসের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ড. আয়াগো ওয়াম্বাইল। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। অনুষ্ঠানে গবেষণা পর্যালোচনা করেন বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. কাজী ইকবাল।
বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় বলা হয়, কডিডের সময় ঢাকার মতো শহরে নারী-পুরুষ উভয়েই শেয়ার করে কাজ করেছেন। অন্যদিকে চাকরিও হারিয়েছেন অনেকে। তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের চাকরি হারানোর হার বেশি। চাকরি হারানোর পর ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত তিন ভাগের দুই ভাগ নারী তাদের চাকরি ফিরে পেয়েছেন।
ড. আয়াগো ওয়াম্বাইল তার গবেষণা প্রবন্ধে বলেন, কভিড-১৯ অতিমারির পর বাংলাদেশে দারিদ্র্য হারে হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী ধারা পরিলক্ষিত হয়। ২০১৯ সালে দেশে চরম দারিদ্র্য হার ছিল ১১ দশমিক ৩ শতাংশ, কিন্তু করোনা আসার পর ২০২০ সালে এ হার বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। এর ফলে দারিদ্র্যের ওপর প্রভাব পড়েছে বেশি। নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছেন অনেকে। বেশিরভাগের আয় কমে গেছে। বিশেষ করে নারী, তরুণ ও শহরের বাসিন্দা এ প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন ধীর গতিতে।
আলোচ্য সময়ে কয়েকটি আঞ্চলিক জরিপে বিশ্বব্যাংক দেখেছে, শ্রমবাজারে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী মানুষের অংশগ্রহণ হ্রাস পেয়ে ৫১ শতাংশ থেকে নেমে ৪৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। করোনার দুই ধাপে বেকারত্ব বেড়ে ৯ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশে ঠেকেছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, করোনার সময় দেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে। খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আরও বেড়েছে। এ সময় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি মানুষ বাসাভাড়া দিতেও হিমশিম খেয়েছেন। বিশেষ করে, বস্তি এলাকার মানুষ বাসস্থানের নিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন সবচেয়ে বেশি। চট্টগ্রামের তুলনায় ঢাকায় এ হার বেশি ছিল।
করোনার সময় দেরিতে হলেও ভ্যাক্সিন দেয়ার ক্ষেত্রে সফল হয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের জরিপে অংশ নেয়া ৯৪ শতাংশ ইভ্যাক্সিনের বিষয়ে অবগত ছিলেন। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশের ৮২ শতাংশ মানুষ করোনা টিকার আওতায় এসেছেন।
বিশ্বব্যাংকের গবেষণা বলছে, কডিড-১৯-এর সময়ে বাংলাদেশ সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন প্রণোদোনা প্যাকেজ ও পুনঃঅর্থায়ন সুবিধার ফলে আর্থিক বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। এ সময় সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিভিন্ন কার্যক্রম ও হেলথ কেয়ার সার্ভিসের বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় বাজার স্বাভাবিক রাখতে আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের গতি জোরদার করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তৎপরতা লক্ষণীয় ছিল।
কডিড-১৯ অতিমারি থেকে শিক্ষা নেয়ার পরামর্শ দিয়ে বিশ্বব্যাংক জানায়, সরকারকে এখনই পরিবেশের দিকে নজর দিতে হবে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে, আর্থিক সংকট ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার সংকট মোকাবিলায় এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ-সংক্রান্ত অবকাঠামো উন্নয়নে নজর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ড. বিনায়ক সেন বলেন, দারিদ্র্য গবেষণা নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিআইডিএসের দীর্ঘ সময়ের অংশীদারিত্ব রয়েছে। আমরা এখানে তাদের গবেষণায় দেখার চেষ্টা করেছি, বাংলাদেশ কডিড-১৯ সময় কীভাবে পার করেছে।