নিজস্ব প্রতিবেদক: জাহাজ ভাঙায় বিশ্বব্যাপী কয়েক বছর টানা দাপট অব্যাহত ছিল বাংলাদেশের। পরিমাণের দিক থেকে কয়েক বছর এ খাতে শীর্ষে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে সংখ্যার দিক থেকেও সবচেয়ে বেশি জাহাজ ভাঙা হয় চট্টগ্রামের ইয়ার্ডগুলোয়। তবে করোনাভাইরাসের প্রভাবে সে দাপটে ছেদ পড়েছে। চলতি বছর জাহাজ ভাঙা শিল্পে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব কমে গেছে।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) জাহাজ ভাঙা কমেছিল ২৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। এর মধ্যে দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ৪৯ দশমিক ২২ শতাংশ কমে যায় জাহাজ ভাঙা। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছে খাতটি। তবে বাংলাদেশে এ শিল্পে মন্দাবস্থা কাটেনি। যদিও তৃতীয় প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার সংখ্যা ছিল দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। তবে বাংলাদেশে তা বেড়েছে নামমাত্র।
জাহাজ ভাঙা ও এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করা বেলজিয়ামভিত্তিক গবেষণা সংস্থা এনজিও শিপ ব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২০ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তথ্যের ভিত্তিতে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন শুক্রবার প্রকাশ করা হয়।
এতে দেখা যায়, চলতি বছর তৃতীয় প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী ১৭০টি জাহাজ ভাঙা হয়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে এর পরিমাণ ছিল ৯৮টি। এ হিসাবে তৃতীয় প্রান্তিকে বিশ্বে জাহাজ ভাঙা বেড়েছে ৭৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর তৃতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙা হয়েছে ২৪টি। দ্বিতীয় প্রান্তিকে এর পরিমাণ ছিল ২০টি। অর্থাৎ শেষ তিন মাসে বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙা বেড়েছে মাত্র ২০ শতাংশ।
এনজিও শিপ ব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের তিন প্রান্তিকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙা হয় ১৬৬টি। এর ৫৪টি বা প্রায় ৩২ দশমিক ৫৩ শতাংশ ভাঙা হয়েছে বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলোয়। ওই সময় ভারতে জাহাজ ভাঙা হয় ৬৩টি, যা ছিল সর্বোচ্চ। এছাড়া তুরস্কে ২৬টি, পাকিস্তানে ৯টি, চীনে ছয়টি ও ইউরোপসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে আটটি জাহাজ ভাঙা হয়েছে।
এদিকে করোনার প্রভাবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৯৮টিতে। এর মধ্যে ২০টি তথা ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ ভাঙা হয়েছিল বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলোয়। ওই সময় ভারতে জাহাজ ভাঙা হয় ৩২টি, যা ছিল সর্বোচ্চ। এছাড়া তুরস্কে ১৮টি, পাকিস্তানে আটটি, চীনে চারটি ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভাঙা হয়েছে ১৬টি।
যদিও করোনার প্রভাব কমে আসার তৃতীয় প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭০টিতে। এ সময় সর্বোচ্চ ৪৭টি জাহাজ ভাঙা হয় ভারতে। দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসা পাকিস্তানে ভাঙা হয়েছে ৩৭টি ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা তুরস্কে ভাঙা হয়েছে ২৯টি। আর মাত্র ২৪টি জাহাজ ভাঙায় চতুর্থ স্থানে নেমে গেছে বাংলাদেশ। এছাড়া চীনে চারটি এবং ইউরোপসহ ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে জাহাজ ভাঙা হয়েছে ২৭টি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালীন সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্প প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি আবাসন ব্যবসাতেও ধস নামে। ফলে এ সময় ইস্পাত শিল্পের বিক্রি অর্ধেকের বেশি কমে গিয়েছিল। তবে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এ খাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি, যার প্রভাব পড়েছে জাহাজ ভাঙা শিল্পে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙা হয় ৬৭৬টি। এর মধ্যে বাংলাদেশেই ভাঙা হয় ২৩৬টি। এটি ছিল সর্বোচ্চ। এছাড়া ভারতে ২০০টি, তুরস্কে ১০৭টি, পাকিস্তানে ৩৫টি, চীনে ২৯, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ২৯টি ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে ৪০টি জাহাজ ভাঙা হয়েছিল।