করোনায় টিকে থাকতে ঋণ নিয়েছেন ৩৪% মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাকালে আর্থিক সংকটের মধ্যে টিকে থাকতে ঋণ নিয়েছেন ৩৪ শতাংশ মানুষ। ঋণের টাকার এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যপণ্য কেনাকাটায়, এক-চতুর্থাংশ আগের ঋণ পরিশোধে এবং কিছু অংশ ওষুধ কেনা ও চিকিৎসার খরচ চালানোর জন্য খরচ করা হয়েছে। ঋণ নেয়ার উৎস হচ্ছে মহাজন, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব। ঋণের পাশাপাশি কম খেয়ে, জমা টাকা থেকে ব্যয় করে এবং কম টাকায় শ্রমে যুক্ত হয়ে টিকে থাকার লড়াই চালিয়েছেন প্রান্তিক মানুষ। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে) উপস্থাপিত গবেষণা জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ঋণ নেয়ার পরিমাণ ধাপে ধাপে কমেছে। ঋণ নেয়ার হার জুনে ৬৬ শতাংশ ও সেপ্টেম্বরে ৪৯ শতাংশ ছিল। ডিসেম্বরে তা নেমে এসেছে ৩৪ শতাংশে।

ঋণের বিষয়ে সিপিজের গবেষণা সহযোগী নাহিদা আক্তার বলেন, ঋণ নেয়ার হার কমার অর্থ এই নয় যে, ওই ব্যক্তিদের আর্থিক অবস্থা ভালো হয়ে গেছে। অনেকে আগের ঋণ শোধ করতে পারেননি, তাই নতুন করে ঋণ নেয়ার সক্ষমতা হারিয়েছেন। কাজের অভিজ্ঞতার তথ্য তুলে ধরে বলেন, রাজধানীর এক বয়স্ক বস্তিবাসী নারী তাকে জানিয়েছিলেন, দুই মেয়ে পোশাকশিল্প কারখানায় কাজ করেন। মেয়েদের বেতন না বাড়ায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছেন না। দুই বেলা খাবার খান। একজনের কাছ থেকে নেয়া ঋণের ২০০ টাকা বাকি আছে। সেটা নিয়েও দুশ্চিন্তায় ভোগেন তিনি।

গত বছরের জুন, সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বরে তিন দফায় ২০ জেলার ৪০ উপজেলার দেড় হাজার পরিবারের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে সহযোগিতা করে ব্রিটিশ সরকারের ফরেন, কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) এবং ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের কভিড কালেকটিভ।

‘করোনার অতিমারিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিমালা প্রণয়নে প্রান্তজনের কণ্ঠস্বর’ শিরোনামের অনুষ্ঠানে জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিজের জ্যেষ্ঠ গবেষক মৃন্ময় সমাদ্দার, গবেষণা সহযোগী নাহিদা আক্তার ও হোসেইন মোহাম্মদ ওমর খৈয়াম।

কভিড-১৯ সম্পর্কে জ্ঞান, সচেতনতা ও আচরণ; টিকার বিস্তৃতি; অভিঘাত ও নাজুক পরিস্থিতি; সংকট মোকাবিলায় কৌশল; রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ এবং সামাজিক সংহতিÑএ ছয় বিষয়ের ওপর জরিপের ফল উপস্থাপন করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কভিড-১৯ যে একটি ভয়াবহ সংক্রামক রোগ, সে সম্পর্কে সচেতনতা আগের চেয়ে বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে টিকার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব। এরপরও ৩১ শতাংশ পরিবারের এমন সদস্য আছেন, যারা প্রথম ডোজের টিকার জন্য ডিসেম্বরেও নিবন্ধন করেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আয় কমে যাওয়ার ধাক্কা এখনও সামলাতে পারেনি জরিপে অংশ নেয়া পরিবারগুলো। ডিসেম্বরের তথ্য বলছে, ৫৩ শতাংশ পরিবারের আয় কমে গেছে। এটা সেপ্টেম্বরে ৪৭ শতাংশ এবং জুনে ৬৪ শতাংশ ছিল। কভিডের প্রকোপ কমার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি সহায়তা কমেছে। গত বছরের জুনে পরিবারগুলোর ২৮ শতাংশ সরকারের অর্থ ও খাদ্যসহায়তা পেয়েছিল। জুন ও ডিসেম্বরে তা ১১ শতাংশ নেমেছে। স্কুলগামী শিশুদের শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হার জুন ও সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে বেড়ে ৫৭ শতাংশ হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, ‘সরকার এক কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে খাবার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এটা ভালো পদক্ষেপ। তবে কী প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি নিলে সরকারের সহায়তা যাদের প্রয়োজন, তাদের কাছেই পৌঁছাবে, সেটি ঠিক করা প্রয়োজন। কারণ এর আগে সরাসরি মুঠোফোনে অর্থসহায়তা দেয়ার উদ্যোগটি কাজ করেনি।’

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সিপিজের নির্বাহী পরিচালক মনজুর হাসান বলেন, ‘কভিড নানাভাবে প্রান্তিক মানুষের ওপর আর্থসামাজিক প্রভাব ফেলেছে।’

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিজের গবেষণা ফেলো মো. শহিদুল ইসলাম।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০