নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসজনিত রোগ কভিড-১৯ এর কারণে সারাবিশ্ব পর্যুদস্ত। এ রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশেও বিভিন্ন ধাপে ৬৫টি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। অর্থনীতির প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু হলেও সেগুলো চলছে সীমিত আকারে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে আরও এক কোটি ৬৪ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েছেন। দেশে বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম এসব দরিদ্র মানুষকে সহায়তার জন্য যথেষ্ট নয়।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক ওয়েবিনারে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। এতে জানানো হয়, কভিডের কারণে স্বল্প মেয়াদে এক কোটি লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েছে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দেশে উচ্চ দারিদ্র্য ২০ দশমিক পাঁচ শতাংশে নেমে এসেছিল। কিন্তু কভিডের কারণে যারা দারিদ্র্য থেকে বের হয়ে আসার প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল, তারাও নতুন করি দরিদ্র্য হয়ে পড়েছে। বিআইডিএসের এ বিশ্লেষণ আমলে নিলে বর্তমানে দেশে মোট দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে পাঁচ কোটি। কভিডপূর্ব সময়ে যা ছিল তিন কোটি ৪০ লাখের মতো।

‘ইন দ্য শ্যাডো অব কভিড কোপিং, অ্যাডজাস্টমেন্ট, রেসপনসেস’ শীর্ষক বিআইডিএসের এ ক্রিটিক্যাল কনভারসেশন্স ওয়েবিনারে বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো বিনায়ক সেন জানান, কভিড-১৯-এর প্রভাব কাটাতে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ লকডাউন অর্থনৈতিকভাবে টেকসই নয়। এতে যেমন দারিদ্র্যের হার বেড়েছে, অন্যদিকে কভিডের আগেই যারা দরিদ্র ছিলেন, তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।
বিনায়ক সেন বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে এ ক্ষতি পূরণ করা যাবে না। বরাদ্দ বাড়িয়েও লাভ হবে না, কারণ এ ভাতা ও সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে ভুল মানুষ বাছাই করার প্রবণতা আছে দেশে। ফলে যাদের দরকার, তাদের অনেকেই তালিকায় ঢুকতেই পারেন না। দেখা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন ভাতা বিতরণে অদরিদ্র ও সচ্ছল মানুষের সংখ্যা ৩০ শতাংশ, খাদ্য সহায়তার ক্ষেত্রে সেটা ৩২ শতাংশ, মাতৃত্বকালীন ভাতার ক্ষেত্রে ৪৪ শতাংশ, বৃত্তির ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ।

কভিডের অভিঘাতে দেশে দারিদ্র্য বিমোচনের হার কমে যাবে জানিয়ে বিনায়ক সেন বলেন, এতে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তা অর্জন করা কঠিন হয়ে যাবে। এ পরিস্থিতিতে ব্যক্তির স্বাস্থ্য ব্যয় হ্রাসে এ খাতে বরাদ্দ জিডিপির দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ থেকে তিন শতাংশে উন্নীত করতে হবে। পাশাপাশি সরকারকে আরও সমতাভিত্তিক মডেল অনুসরণ করতে হবে।