বিশ্বজুড়ে এখন করোনা-আতঙ্ক চলছে। আর এতে এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও এমন অবস্থা চলছে। যে কারণে আমদানি ও রপ্তানিতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে আলোচকদের আলোচনায় এসব কথা ওঠে আসে।
মারুফ রনির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক মিজানুর রহমান এবং আইসিএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট সাব্বির আহমেদ।
অনুষ্ঠানে মিজানুর রহমান বলেন, বিশ্বজুড়ে এখন করোনা-আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফলে এ ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হয় এমন দেশগুলোতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যখন অর্থনীতির সামগ্রিক সরবরাহ ও চাহিদা সংকটে পড়ে তখন সে দেশের অর্থনীতি সংকোচিত হয়। এদিকে করোনার কারণে পণ্য রপ্তানিতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। সময়মতো পণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে না। একইভাবে দেশের ইন্ডাস্ট্রিজে একই অবস্থা। এতে বোঝা যাচ্ছে আগামীতে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি খর্ব হবে বলে মনে করি। আবার এখন বাজারের যে অবস্থা প্রণোদনা ও ট্রেডিং হ্রাস বা বাতিল করে বাজার ভালো করা যাবে না। গত ১০ বছর ধরে বাজারের এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। পুঁজিবাজারে ব্যাপক সুশাসনের অভাব রয়েছে। কারণ এ পর্যন্ত বাজারে যতগুলো আইপিও আনা হয়েছে বেশিরভাগই দুর্বল। এখন এসব কোম্পানি শেয়ারদর ফেসভ্যালুর নিচে রয়েছে। তাই এ পরিস্থিতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগ একটি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে ঝুঁকি সবসময় থাকে না। আর করোনাভাইরাস হঠাৎ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ কারণে পুঁজিবাজার ধ্বংস হয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। বাজার তার নিজস্ব গতিতে আবার ফিরে আসবে। তাই এ সময় বিনিয়োগকারীদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলারের মাধ্যমে প্রতিটি তফসিল ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা করে বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য ঘোষণা দিয়েছে। ব্যাংকগুলো একযোগে এ অর্থ বিনিয়োগ করে।
অন্যদিকে অনুষ্ঠানে সাব্বির আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে ফান্ডামেন্টাল অনেক সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়গুলো সমাধা না করে যতই বাজারে প্রণোদনা দেওয়া হোক কোনো কাজ হবে না বলে মনে করি। কারণ এর আগে বাজারে অনেক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে কিন্তু বাজারে কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বরং আরও বাজার নি¤œগতিতে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটা মন্দা অবস্থায় রয়েছে। এর একটি প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়বে। তাই এ পরিস্থিতে প্রত্যেকটি খাতে পর্যাপ্ত তারল্য রাখতে হবে। যাতে করে অর্থনীতির চলমান প্রক্রিয়া রয়েছে সেটা বন্ধ না হয়ে যায়। আবার এর একটি অংশ হচ্ছে পুঁজিবাজার। এখন বাজারে একটি তারল্য সংকট রয়েছে। পর্যাপ্ত তারল্য না থাকার কারণে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে যাচ্ছেন। যার কারণে বাজারে ভালো শেয়ারদর কমে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যদি বাজারে তারল্য না বাড়ানো যায় সেক্ষেত্রে শেয়ারদর আরও কমে যেতে পারে বলে মনে করি। এতে দেখা যাবে সাধারণ বিনিয়োগকারী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই বাজারের এ অবস্থায় সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োকারীদের এগিয়ে আসা উচিত। যাতে করে বাজার এ অবস্থা থেকে আর নি¤œগতিতে না থাকে। বিনিয়োগকারীর উদ্দেশ তিনি বলেন, আসলে বাজারে করোনার একটি ইস্যু রয়েছে। তবে আশা করি এ অবস্থা দীর্ঘ সময় থাকবে না। তাই আতঙ্কিত না হয়ে যাতের শেয়ার ধরে রাখার সক্ষমতা রয়েছে, যাতে শেয়ার বিক্রি না ধরে রাখে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ