করোনায় বন্ধ নরসিংদীর শিল্প কারখানা, বিপাকে শ্রমিকরা

শরীফ ইকবাল রাসেল, নরসিংদী: করোনাভাইরাসের কারণে নরসিংদীতে অধিকাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠানই বন্ধ রয়েছে। কোভিট ১৯ (করোনা ভাইরাসকে) কেন্দ্র করে নরসিংদীতে লকডাউন ঘোষনায় সকল কারখানাই বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালু করার ঘোষণা হলেও নরসিংদীতে তেমনভাবে কারখানা চালু করা হয়নি।

ফলে অনেকটা বিপাকে পড়েছে কারখানাগুলোতে কাজ করা শ্রমিকরা। তাদের আজ অনেকটাই মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। সামনে ঈদের চাহিদা পূরণ তো দুরের কথা, দুবেলা কেয়ে যেতে এখন তাদের কস্ট হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রেসিডিন্ট ও মাধবদীর সোনালী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী হোসেন শিশির জানিয়েছেন, নরসিংদীতে ছোট বড় প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক কারখানা রয়েছে। এসকল কারখানায় অধিকাংশ শ্রমিকই স্থানীয়। আর কারখানাগুলোর মধ্যে টেক্সটাইল কারখানাই বেশী।

এছাড়া অল্প পরিমানে শ্রমিক রয়েছে যারা নরসিংদীর বাইরে। তাই নরসিংদীর বাইরের শ্রমিক ছাড়াই স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালিয়ে যাওয়ার জন্য কারখানা মালিকদের জানানো হয়েছে। এরপরেও কিছু সংখ্যাক কারখানা মালিকরা তাদের কারখানা চালু করছে না। চালু কারখানার মধ্যে পাঁচ থেকে ছয়টি স্পিনিং মিল ও চার থেকে পাঁচটি ডায়িং কারখানা এপর্যন্ত চালু করা সম্ভব হয়েছে।

এই কারখানাগুলো শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনেই পরিচালনা করছেন। কারখানাগুলো এখনো চালু না করার কারণ জানতে চাইলে নাসির ডাইং এন্ড প্রিন্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো: জাকির হোসেন জানিয়েছেন, যেহেতু করোনাকে কেন্দ্র করে কারখানাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছু প্রতিষ্ঠান চালু করেছে।

আর বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো এই সময়ে কারখানা চালিয়ে লাভবান হবেন কিনা বা এই অবস্থা কতদিন থাকবে সেই বিষয়টি মাথায় রেখে এখনো তারা কারখানাগুলো চালু করছেন না।

নরসিংদী সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটু জানিয়েছেন, নরসিংদীতে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত এক হাজার ৪৩ জনের নমুনা সংগ্রহপূর্বক আইইডিসিআর-এ পাঠানোর পর ১৬৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্য থেকে ৩৯ জন ব্যক্তি সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এখনো প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনের রয়েছে ২৮ জন ব্যক্তি।

তিনি আরো জানিয়েছেন, বিগত ২৬ এপ্রিল ৪৯ জন, ২৭ তারিখে ৩৯ জন, ২৮ তারিখে ৩৭ জন এবং সর্বশেষ ২৯ তারিখে ৭৪ জন ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহপূর্বক আইইডিসিআর-এ পাঠানো হলে কোনো করোনা শনাক্ত হয়নি। বিশেষ করে বিগত এক সপ্তাহ যাবৎ নরসিংদীতে কোনো করোনা শনাক্তের খবর পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে নরসিংদী জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন জানিয়েছেন, নরসিংদীতে করোনাকে কেন্দ্র করে বন্ধ থাকা শিল্প কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু করার জন্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু খোলা হয়েছে এবং বাকিগুলো হয়তো খুলবে। এছাড়া কারখানাগুলো বর্তমানে স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালানো হলে করোনার তেমন একটা আশঙ্কা থাকে না।

তবে নারায়নগঞ্জ বা গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকা থেকে শ্রমিক আসলে সমস্যা আছে। তাই বাইরের শ্রমিক ছাড়াই কারখানা চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, কারখানাগুলোর শ্রমিকরা যাতে খাওয়ার জন্য কষ্ট না করে তার জন্য জেলা প্রশাসন উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তালিকা অনুযায়ী খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০