Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:54 pm

করোনায় বিবর্ণ বন্দর দিবস

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: আজ ২৫ এপ্রিল। চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। গত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে ঘটা করে ডাক-ঢোল বাজিয়ে বর্ণিল আয়োজনে পালিত হত বন্দর দিবস। কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে আজ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অনাড়ম্বরভাবে কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই দিবসটি পালন করছে।

যদিও বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনার ও জাহাজজট তৈরি হয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে বন্দরের স্বাভাবিক পরিচলন কার্যক্রম। আর এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঘোষিত সাধারণ ছুটিকালীন সময়েও চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং শ্রমিকরা দেশের সাপ্লাই চেইন নির্বিঘ্ন রাখার স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছেন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির ৯২ শতাংশেরও বেশি পণ্য এবং ৯৮ শতাংশ কনটেইনারজাত পণ্য হ্যান্ডেলিং করে থাকে। ধারাবহিক সাফল্য চট্টগ্রাম বন্দরের পোর্ট লিমিট ৭ নটিক্যাল মাইল থেকে ৫০ নটিক্যাল মাইলে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বন্দরের জলসীমা ৬ গুণ বেড়েছে।

২০১৯ সালে ৩০ লাখ ৮৮ হাজার টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করা হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। সাধারণ কার্গো হ্যান্ডেলিং হয়েছে ১০ কোটি ৩০ লাখ টন। প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ০৩ শতাংশ। কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের এ সংখ্যা বন্দরের ৩০ বছর মেয়াদী প্রক্ষাপণকে ছাড়িয়ে গেছে। আর বন্দরের ইয়ার্ডে ৫০ হাজার কনটেইনার রাখা সম্ভব হচ্ছে।

এ কারণে ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম বন্দর যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা লয়েড লিস্ট রেজিস্টারের তালিকায় বিশ্বের ৬৪তম ব্যস্ত কনটেইনার বন্দর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ ছাড়া বন্দরের পরিচলনে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং  সম্প্রসারণ করার পাশাপাশি মিরসরাইয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরকে সাপোর্ট দিতে সীতাকুন্ডে আরেকটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ চলমান আছে।

তাছাড়া একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কর্ণফুলী ড্রেজিং, বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণ ও নিউমুরিং ওভার ফ্লো ইয়ার্ড নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এমন অগ্রযাত্রায় প্রধান বাধাঁ করোনা ভাইরাস।

গত এক মাসের চলমান লকডাউনে গতকাল পর্যন্ত বন্দরের কনটেইনার জমেছিল ৪৭ হাজার ৪৩৯টি এবং বন্দরের জলসীমায় আমদানি পণ্যবাহী ৫৬টি জাহাজ অলস বসেছিল। এতে ব্যাহত হচ্ছে বন্দরের স্বাভাবিক পরিচলন কার্যক্রম। আর এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়।

বন্দরের কর্মরত কর্মকর্তারা বলেন, প্রতি বছর নানান ধরণের আয়োজনের মাধ্যমে বন্দর দিবস পালিত হয়। এ বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় বাতিল হয়েছে সকল ধরনের আয়োজন। বলতে গেলে একবারের উৎসব বিবর্ণ ও নিষ্প্রভ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে আজ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অনাড়ম্বরভাবে কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই বন্দর দিবসটি পালন করছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর এক কঠিন সময় অতিবাহিত করছে।

তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিকালীন সময়েও চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং শ্রমিকরা দেশের সাপ্লাই চেইন নির্বিঘ্ন রাখার স্বার্থে ২৪/৭ কাজ করে যাচ্ছেন। আমদানি করা মালামাল ডেলিভারি সীমিত হওয়ার কারণে বন্দরে সাময়িক কনটেইনার জট ও জাহাজ জট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

আমদানিকারকরা দ্রুততম সময়ে তাদের আমদানি করা পণ্য খালাসের মাধ্যমে বন্দরকে করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতেও সচল রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারেন। এর ফলে বর্হিবিশ্বে দেশের ও চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি উজ্বল হবে বলে জানান তিনি।

জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর। এটি কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। ইংরেজ শাসনের প্রথম দিকে ইংরেজ ও দেশিয় বণিকরা বার্ষিক এক টাকা সেলামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীতে কাঠের জেটি নির্মাণ করেন। পরে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মিত হয়। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার গঠিত হয়। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি মুরিং জেটি নির্মিত হয়। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার কার্যকর হয়। ১৮৯৯-১৯১০ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার ও আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে যুক্তভাবে চারটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করে। ১৯১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে রেলওয়ে সংযোগ সাধিত হয়। ১৯২৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে মেজর পোর্ট ঘোষণা করা হয়। এরপর পাকিস্তান আমলে ১৯৬০ সালে জুলাই মাসে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনারকে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট-এ পরিণত করা হয়। বাংলাদেশ আমলে ১৯৭৬ সালে সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট-কে চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটিতে পরিণত করা হয়।

বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের এ অর্জন বর্তমান সরকারের চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নেরই প্রতিফলন। জাতীয় অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম এবং প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বন্দর পালন করছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

###