করোনায় শিক্ষার্থীদের হতাশা কাটাতে চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা

সিরাজুল হোসাইন: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত দেড় বছরের অধিক সময় স্তব্ধ রয়েছে গোটা বিশ্ব। ২০১৯ সালে চীনের উহান শহরে প্রথম এই ভাইরাস দেখা দিলেও এর প্রাদুর্ভাব দ্রুত গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০-এর মার্চ মাসে বাংলাদেশে প্রথম সংক্রমণ দেখা যায়। গবেষণায় দেখা যায়, এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে এবং সচেতন থাকতে হবে। দেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে বন্ধ করে দেওয়া হয় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা কার্যক্রম।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে অনলাইন ক্লাস ও টেলিভিশন পাঠদান কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার; যার জন্য ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার কিন্তু এই অনলাইন ও টেলিভিশন পাঠদানে তেমন কোনো ফলপ্রসূ হয়নি। কেননা, অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এখন নিজেদের গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ও গ্রাম-গঞ্জে এখনও ইন্টারনেট কিংবা ডিশলাইনের যথার্থ ব্যবস্থা নেই। অন্যদিকে অনেক শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন নেই। আবার দেখা যায়,  যাদের আছে তারা এ বিষয়ে তেমন অভ্যস্ত নয়। যার ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় একটি দীর্ঘমেয়াদি ঘাটতি তৈরি হয়। যদিও সরকার সেশনজট কমানোর জন্য গত এইচএসসি ব্যাচকে অটোপাস দিয়েছে? সরকার। কিন্তু তারা অনিশ্চয়তা ও হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। কেননা তাদের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় নামক একটি ভর্তিযুদ্ধ রয়েছে; যা তরুণ প্রজন্মে স্বপ্ন এবং আকাক্সক্ষা থাকে যে, একদিন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে ঢুকবেন এবং দেশ, জাতি ও নিজেকে নিয়ে নতুন নতুন স্বপ্ন আঁকবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখনও তাদের সেই ভর্তি পরীক্ষা হয়নি। তাদের ভর্তি পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।  অন্যদিকে নতুন একটি এইচএসসি ও সমমানের ১২ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীদের একটি ব্যাচের পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে; যা তাদের ভীষণ ক্ষতি করছে। তাদের সামনের নির্বাচনী পরীক্ষার বাস্তবায়ন অনিশ্চয়তার মুখে। ফলে তাদের নিয়মিত পড়াশোনার বিঘ্ন ঘটছে।

অন্যদিকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রায় ১২ লক্ষাধিকের অধিক শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস ও বিভিন্ন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতদিন ঠিক মতো ক্লাস ও পরীক্ষা হলে, হয়তো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়ে যেত অনেকের। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখনও তাদের স্নাতক শেষ হয়নি। আবার শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। অন্যদিকে দেখা যায়, স্নাতক পাস করা শিক্ষার্থীরা আজ চরম হতাশায় দিন পার করছে। কেননা, তাদের কারও বা চাকরির আবেদনের বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে আবার কারও বা দু’এক বছর বাকি আছে। যারা এক বুক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে অনেক বাধা অতিক্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে প্রবেশ করেছিল এবং অনেকে স্নাতক শেষ করেছেন। কিন্তু অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ রয়েছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রায় দুই বছরের মতো বন্ধ রয়েছে দেশের চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া। আজ তাদের সেসব আশা ও স্বপ্ন মাটির সঙ্গে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। যদিও দেশের একঝাঁক শিক্ষার্থীরা চাকরির বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে ৩২ করার জন্য দাবি ও আন্দোলন করলেও কিন্তু সেই আন্দোলন সফল হয়নি। বরং আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে।

প্রতি বছর আমাদের দেশে লাখ লাখ শিক্ষার্থীরা স্নাতক পাস করে কিন্তু সে হিসেবে আমাদের দেশে নিতান্তই চাকরির সুযোগ কম। তাই প্রতি বছর আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলছে। তার মধ্যে  করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ রয়েছে প্রায় দুই বছরের অধিক সময় চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়াটি। স্নাতক পাস করা শিক্ষার্থীদের প্রতিটি মুহূর্তই কাটছে চরম হতাশা এবং বিষণœতায়। কিন্তু এসব শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কী এবং তাদের হতাশার শেষ কোথায় আর সমাধান কী? প্রশ্ন থেকে যায়।

অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিন পরীক্ষা ও নিয়মিত ক্লাস কার্যক্রম না চলায়। তারা তাদের পড়াশোনার প্রতি উদাসীনতা তৈরি হয়েছে। বলতে গেলে বই বিমুখ হয়ে পড়েছে প্রত্যেক শিক্ষার্থী। ফলে তাদের অনেকাংশ এখন অনলাইন গেমস, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা কিংবা অন্য কোনো উপায়ে নিজেদের মূল্যবান সময়কে নষ্ট করছে। সাধারণত মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা তাদের পার্টটাইম জব কিংবা টিউশনের টাকা দিয়ে চলত কিন্তু করোনার ভয়াল থাবায় প্রতিষ্ঠান বন্ধের সঙ্গে তারাও  টিউশন ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। অনেকে আবার এখন, তাদের শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটিয়ে যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন কলকারখানা কিংবা অন্য কোথাও। আর এ চিত্রটি ফুটে উঠে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মাঝে। যেসব শিক্ষার্থীদের স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে বই নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করার কথা এবং দেশ ও জাতির স্বার্থে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে পড়ার টেবিলে বসার কথা। আর দুচোখে থাকবে স্বপ্ন পূরণের প্রবল আকাক্সক্ষা আর হাতে থাকবে সব সময় বই কিন্তু আজ তাদের হাতে বইয়ের পরিবর্তে মোবাইল কিংবা কর্মব্যস্ততার ছাপ। এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতা মনে করেন, শুধু শুধু বসে না থেকে কোনো কাজ করে কিছু উপার্জন করা ভালো। আবার অনেক শিক্ষার্থীরা এখন চরম হতাশায় ভোগে এবং নিজেদের পরিবারের জন্য বোঝা ও অভিশাপ ভাবছেন।

একটি জরিপে দেখা গেছে, করোনার আগে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু করোনায় লকডাউনের পর ৭০ শতাংশ মানুষ তাদের কর্মহীন হয়ে পড়ায় দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৩৫ শতাংশে এসেছে। তাই অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা এ অনিশ্চয়তায় মানসিক বিপর্যস্ত হচ্ছে। এমনকি আত্মহত্যার মতো পথও বেছে নিচ্ছে। সম্প্রতি সময়ে পত্রিকা খুললেই দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার মতো জগন্য ঘটনা; যা আমাদের হƒদয় বিদারক এবং সুশীল সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে।

তাই করোনার এই চরম বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সঠিক ও সময়োপযোগী সুষ্ঠু পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে কীভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা চলমান রাখা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। যদিও টিকা গ্রহণের পর খোলার আশ্বাস দিয়েছে কিন্তু সেটাও কতটুকু কার্যকর হবে সেটি নিয়েও প্রশ্ন। এছাড়া পরিবারের উচিত হবে শিক্ষার্থীদের প্রতি অধিক মনোযোগী হওয়া এবং তাদের বিকশিত জীবনের জন্য পড়াশোনার প্রতি উৎসাহিত করা। তারুণ্যের জয়গান নিয়ে এগিয়ে যাবে এই দেশ। কেননা তারুণ্যে হচ্ছে এদেশের প্রাণ এদেশের শক্তি।

 শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ

ঢাকা কলেজ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০