বিদায়ী অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক

করোনার আগেই ওষুধ খাতে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি

শেখ আবু তালেব: সাম্প্রতিক বছরগুলোয় শিল্পের সব খাতের উৎপাদনে চলছে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি। করোনায় তা আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদাও কমছে প্রতিনিয়ত। বর্তমানের ঋণপ্রবাহের এ ধারা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিন্মে। অন্যান্য খাত নেতিবাচক ধারায় থাকলেও সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখা গিয়েছে ওষুধ খাতে। করোনা মহামারিতে ওষুধ উৎপাদনে আরও প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির তথ্য নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদায়ী অর্থবছরের ৯ মাসের (জুলাই ’১৯-মার্চ ’২০) তথ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।

গত মার্চ পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য বলছে, গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে শিল্প খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে আগের দুই প্রান্তিকের চেয়ে। এ সময়ে সামিগ্রকভাবে উৎপাদনশীল খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে সাত শাতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয় ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলোয়।

তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ওষুধ এবং এ খাতের রাসায়নিকের আর্থিক বাজার দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৪৬০ কোটি টাকার, পূর্ববর্তী প্রান্তিকে যা ছিল ৮৭ হাজার ৯৭০ কোটি টাকার।

বাংলাদেশে করোনার প্রভাব দেখা দেয় মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে। এর পর থেকে ওষুধের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওষুধ উৎপাদনের পাশাপাশি কোম্পানিগুলো স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর উৎপাদন বাড়িয়েছে। বছর শেষে এর প্রভাব পড়বে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামনের দিনগুলোয়ও প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

এছাড়া বস্ত্র খাতে ১৭ শতাংশ, খাদ্যে ১৬ দশমিক ছয় শতাংশ ও অধাতব খনিজ খাতে ২৬ দশমিক সাত শতাংশ। উৎপাদনশীল খাতের মধ্যে সব সময় সর্বোচ্চ অবদান রাখা রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি হয় ৩৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ, পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে যা আট শতাংশ কম। এ সময়ে সিমেন্ট খাতে প্রবৃদ্ধি হয় ৩৩ শতাংশ।

কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, বস্ত্র ও তৈরি পোশাকের উৎপাদন কাক্সিক্ষত মাত্রায় না থাকলে এই প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিতে তেমন সুফল বয়ে আনবে না।

দেশের অর্থনীতিতে ৮২ শতাংশই অবদান বেসরকারি খাতের। বিশেষ করে শিল্প উৎপাদনের প্রায় পুরোটাই বেসরকারি খাতের নিয়ন্ত্রণে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ খাতের উৎপাদন কমে আসছে। এমনকি ঋণাত্মক ধারায় চলছে গত পাঁচ প্রান্তিক ধরে। ফলে বিনিয়োগও কমে যাচ্ছে।

উৎপাদন কমে যাওয়ায় কমেছে এ খাতের কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ। মূলধনি যন্ত্রপাতি ও ইন্টারমেডিটিয়ারি আমদানি প্রবৃদ্ধিও ঋণাত্মক ধারায় চলছে। নতুন এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির হার কমে গেছে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায়।

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দেশে করোনার প্রভাব খুব একটা বৃদ্ধি পায়নি। এজন্য শিল্পে কিছুটা ইতিবাচক ধারা দেখা গেছে। কিন্তু করোনার জন্য অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে এ ধারা অব্যাহত থাকবে না। কারণ হচ্ছে, মানুষের চাহিদা কমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রধান খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র। এ দুটির উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ভালো হতে হবে। নইলে অর্থনীতিতে তেমন সুফল পাওয়া যাবে না। করোনাকালেও সরকারের উচিত হবে কৌশল নির্ধারণ করা, যাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসে এ খাতগুলোয়। পণ্যের চাহিদা তৈরি হয় দেশ ও বিদেশে। নীতিনির্ধারণী কাজগুলো সরকার করতে পারে। এর বাইরে সরকারের খুব একটা করণীয় নেই। এ শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কমে গেলে অনেকেই নতুন করে খেলাপিতে পরিণত হবেন।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) শিল্প খাতের আকার হচ্ছে সাত লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার। এর মধ্যে খনিজ খাতের ৪৪ হাজার কোটি, উৎপাদন খাতের বড় ও মধ্যম মানের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তিন লাখ ৯৬ হাজার ২০০ কোটি, ক্ষুদ্রশিল্পের ৮৫ হাজার ২০০ কোটি এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ খাতের ৩২ হাজার ১০০ কোটি টাকার। এছাড়া নির্মাণ খাতের অবদান হচ্ছে এক লাখ ৯৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার।

এ সময়ে শিল্পে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক তিন শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত সময়ে শিল্প খাতে ব্যাংকঋণের স্থিতি হচ্ছে দুই লাখ ৬৬ হাজার ৭১৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে গত জানুয়ারি-মার্চ সময়ে বিতরণ করা হয় ১৫ হাজার ৯৪৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০