Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 10:38 pm

করোনার ছোবলে বাটা শু’র ব্যবসা মন্দা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: অন্যান্য কোম্পানির মতো করোনার বিরূপ প্রভাব পড়েছে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি বাটা শু’র ব্যবসায়। করোনার প্রভাবে অস্বাভাবিকহারে কমে গেছে এ কোম্পানির বিক্রি। আগের বছরের তুলনায় বিক্রি অর্ধেকে নেমে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে কোম্পানির ব্যবসায়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিক্রি বাড়াতে বাটা শু’তে চলছে বড় ছাড়। তার পরও ঘুরে দাঁড়াতে হিমশিম খাচ্ছে কোম্পানিটি।

জানা যায়, বহুজাতিক কোম্পানি বাটা শু’র পণ্য বিক্রি চলতি বছরের ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর, ২০২০) অর্ধেকে নেমে এসেছে। করোনার প্রভাবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির ব্যবসা অস্বাভাবিকহারে কমে যায়। মূলত এ সময়ে দুটি ঈদ থাকায় বিক্রিতে ভাটা পড়ে। কারণ এ সময়ে লকডাউন থাকার কারণে ছিল না কোনো বিক্রি। তৃতীয় প্রান্তিকেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিক্রিতে তেমন উন্নতি হয়নি। ফলে মন্দা কাটাতে বেগ পেতে হচ্ছে কোম্পানিটিকে। প্রতিষ্ঠানটির চলতি বছরের ৯ মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) অনিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি বছরের ৯ মাসে কোম্পানিটির ৩৪৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ৬২৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ হিসাবে বিক্রি কমেছে ২৮৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা বা ৪৫ শতাংশ। এর মধ্যে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ কোটি ২৫ লাখ টাকা, যা ২০১৯ সালের একই সময়ে ছিল ২৮২ কোটি তিন লাখ টাকা। অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিক্রি কমেছে ২৪০ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বা ৮৫ শতাংশ।

এদিকে আগের বছরের ৯ মাসে মোট মুনাফা হয়েছিল ২৫৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আর এ বছরের ৯ মাসে মুনাফা হয়েছে ৭৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে মুনাফা কমে গেছে ১৮৯ কোটি টাকা। এই ধসের জের ধরে কোম্পানিটি পরিচালন মুনাফার পরিবর্তে লোকসানে নেমে যায়।

ব্যবসায় ধসের কারণ হিসেবে বাটা শু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাধারণত ২৫ শতাংশ ব্যবসা হয় ঈদে। এছাড়া ঈদে উচ্চ দরের জুতা বিক্রি হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে আগের বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় বিক্রির পরিমাণ তলানিতে নেমেছে, যার প্রভাব পড়েছে ব্যবসায়।

জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সচিব হাশেম রেজা শেয়ার বিজকে বলেন, করোনার কারণে পৃথিবীর সব সেক্টরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আমাদের কোম্পানিতেও। বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যবসা মন্দ গেছে। এ প্রতিষ্ঠানের মোট বিক্রির বড় একটি অংশ হয় দুই ঈদের সময়ে। এ বছর তা হয়নি, কারণ অনেক দিন লকডাউন ছিল। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও তা সন্তোষজনক নয়, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে কোম্পানির বিক্রি ও মুনাফায়।

এদিকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কৌশলী হয়েছে কোম্পানিটি। ক্রেতা টানতে এ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে তাদের পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে। কোম্পানির একটি সূত্র জানায়, মূলত বিক্রি বাড়ানোর জন্য এটা করা হয়েছে। তিনি জানান, আগে বাটার যেসব পণ্যে ছাড়া দেয়া হয়, বিক্রয় বাড়াতে তার সঙ্গে নতুন কিছু ডিজাইন যোগ করা হয়েছে। তা না হলে বছর শেষে তাদের বড় লোকসানে পড়তে হবে।

১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের বাটা শু’তে ৩৬৩ কোটি ১০ লাখ টাকার রিজার্ভ রয়েছে। কোম্পানিটির ৩০ সেপ্টেম্বর শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) রয়েছে হিসাবে ২৭৫ টাকা করে।

১৯৮৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কমছে মুনাফা। ২০১৭ সালে এ কোম্পানির মুনাফা হয় ১১৪ কোটি টাকা। পরের বছর তা নেমে ৯৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় চলে আসে। আর সর্বশেষ ২০১৯ সালে এ কোম্পানিটির মুনাফা দাঁড়ায় ৪৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর জের ধরে বহুজাতিক এ প্রতিষ্ঠানটির লভ্যাংশ প্রদানের হারও কমে গেছে। সর্বশেষ বছরে কোম্পানিটি তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়, এর আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ৩৪৫ শতাংশ।