Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 9:53 am

করোনার প্রভাবে মুনাফা কমেছে ৩৪ কোটি টাকা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চলমান করোনা মহামারির প্রভাবে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেডের ২০১৯-২০ অর্থবছরের নিট মুনাফা কমেছে প্রায় ৫৬ শতাংশ। সমাপ্ত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা হয়েছে ২৭ কোটি ১২ লাখ টাকা, এর আগের অর্থবছর যা ছিল ৬১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ করোনার প্রভাবে নিট মুনাফা কমেছে ৩৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, গত বছরের মার্চ থেকে শুরু করোনার কারণে সিমেন্টশিল্পে ভয়াবহ মন্দা দেখা দেয়। শুরুর দিকে ৯০ শতাংশেরও বেশি বিক্রি কমেছিল। পরে আস্তে আস্তে বিক্রি বেড়েছে। তবে এতে লোকসানের ক্ষত কাটাতে পারেনি অনেক কোম্পানি।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রিমিয়ার সিমেন্টের মোট বিক্রয় রাজস্ব ছিল এক হাজার ৪৬ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছর নিট মুনাফা হয়েছে ২৭ কোটি ১২ লাখ টাকা, যা এর আগের অর্থবছর ছিল ৬১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। যদিও করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগেও প্রতিষ্ঠানটির মুনাফায় ওঠানামা দেখা গেছে।

এক্ষেত্রে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা ছিল ৪৪ কোটি ২১ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ৫৬ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৬৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। যদিও চলতি অর্থবছর প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মুনাফা বেড়েছে কোম্পানিটির।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রিমিয়ার সিমেন্টের বিক্রয় রাজস্ব ছিল ২৬১ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৫৫ কোটি টাকা। আর এ সময় নিট মুনাফা হয়েছে আট কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে হয়েছিল চার কোটি ৪২ টাকা।

২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রিমিয়ার সিমেন্ট ছাড়াও সিমেন্ট খাতের অন্যান্য কোম্পানির ওপর করোনার প্রভাব আরও ব্যাপকহারে পড়েছে। এর মধ্যে আরামিট সিমেন্ট নিট লোকসান করেছিল ২৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং এমআই সিমেন্ট ১৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। অপরদিকে মেঘনা সিমেন্ট পাঁচ কোটি ৪০ লাখ টাকা, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ১৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট ১২৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে।

কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা বলেন, যদিও সিমেন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ, তবে সিমেন্ট উৎপাদনে ব্যবহƒত প্রায় সব কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী সিমেন্ট কোম্পানিগুলো আমদানি পর্যায়ে তিন শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এবং সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে (টিডিএস) কর কর্তন হয় ৩.০-৪.০ শতাংশ হারে, যা চূড়ান্ত কর হিসেবে গণ্য করা হয়। উভয় ক্ষেত্রে আরোপিত কর চূড়ান্ত কর হিসেবে গণ্য করা ‘আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪’-এর ধারা ৮২(সি) অনুযায়ী অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

অন্যদিকে ক্লিঙ্কার, সø্যাগ, ফ্লাইঅ্যাশ, জিপসাম ও চুনাপাথরের মতো সব কাঁচামালের দাম বিগত কয়েক বছরে উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। সিমেন্টের মূল কাঁচামাল ৯০ শতাংশ ক্লিঙ্কার ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা হয়। চীন সরকার পরিবেশগত ক্ষতি হ্রাস করতে সমন্বিত প্লান্টে ক্লিঙ্কার উৎপাদনকে নিরুৎসাহিত করতে শুরু করে। পরে চীন তাদের প্রয়োজনীয় ক্লিংকার তার নিকটতম উৎস ভিয়েতনাম থেকে আমদানি শুরু করে। এছাড়া কভিড-১৯ মহামারির কারণে বাংলাদেশ সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। এতে বৃহৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজ ব্যাহত হয়েছে। ফলস্বরূপ কোম্পানিগুলো তিন মাসে (এপ্রিল-জুন ২০২০) কেবল ৪০ শতাংশ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছিল।

এ বিষয়ে প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘একদিকে করোনার প্রভাব, অন্যদিকে নীতিগত সহযোগিতার অভাব আছে। ফলে সিমেন্ট খাতে সব কোম্পানির মুনাফা কমেছে। আর করোনা পরিস্থিতির কারণে কোনো মাসে লাভ হয়, আবার কোনো মাসে লোকসান হয়। যদিও চলতি অর্থবছর আমাদের প্রথম প্রান্তিকে মুনাফা আগের তুলনায় বেড়েছে, তবে পরের প্রান্তিকে লোকসান হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, প্রণোদনার টাকাও সবাই পায়নি, সীমিত কিছু প্রতিষ্ঠান পেয়েছে। যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে, তাদের তেমন সুযোগ দেয়া হয় না। অথচ ঋণখেলাপিরা ১০ বছর ঋণ পরিশোধে সুযোগ পায়। আবার যারা নিয়মিত ভ্যাট কর দেয়, তাদের আরও ভ্যাট কর দেয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু যারা দেয় না, তাদের খোঁজও নেই। দেশি শিল্প সুরক্ষায় সরকারকে অবশ্যই পলিসিগত সুবিধা দিতে হবে। তাহলে দেশীয় শিল্প আরও স্বনির্ভর হবে। আর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হয় প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেড। কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৪৮ দশমিক ১০ শতাংশ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৩৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ হাতে শেয়ার মালিকানা আছে। গত অর্থবছরের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়া হয় বিনিয়োগকারীদের।