করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠেছে জ্বালানি তেলের বাজার

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রভাব কাটিয়ে উঠেছে দেশের জ্বালানি তেলের বাজার। দেশে গত মার্চে করোনা ধরা পড়ায় এপ্রিলে কম ছিল জ্বালানি তেলের ব্যবহার। এ সময়ে স্বাভাবিক সময়ের অর্ধেকে নেমে আসে বিক্রি। ধীরে ধীরে বেড়েছে বিক্রি ও ব্যবহার। গত আগস্টে দেশের বাজারের বিভিন্ন ধরনের জ্বালানিপণ্য বিক্রি হয়েছে চার লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন, যা স্বাভাবিক সময়ের মতোই বিক্রি।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা যায়, মার্চের শেষের দিকে করোনাভাইরাসের প্রভাবে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমে যায়, যার প্রভাব পড়েছিল এপ্রিলের মোট বিক্রিতে। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ে প্রতিমাসে বিপিসি গড়ে সাড়ে চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানিপণ্য বিক্রি করে থাকে। করোনার প্রভাবে এপ্রিলে বিক্রি হয়েছিল দুই লাখ ৫৩ হাজার ৭৯০ টন। মে মাসে ছিল দুই লাখ ৫৮ হাজার ১২১ টন। আর জুনে কিছুটা বেড়ে হয়েছিল তিন লাখ ৮২ হাজার ৬৩২ টন। জুলাইয়ে বেড়ে হয়েছিল চার লাখ ৬০ হাজার ৩২০ টন। সর্বশেষ আগস্টে চার ৪০ হাজার ২২ টন। অর্থাৎ সময়ের সঙ্গে বাড়ছে জ্বালানি তেলের চাহিদা ও ব্যবহার, যদিও এভিয়েশন খাতে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কম হওয়ায় কিছুটা বিক্রি কমেছে।

অপরদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় সুফল পেয়েছে বিপিসি। এ সময়ে সংস্থাটি সৌদি আরব ও দুবাই থেকে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেছে ৪৫ ডলারে। অর্থাৎ প্রতি লিটারের আমদানি ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৫ টাকা। অথচ পূর্বনির্ধারিত দামে বিক্রি করা হচ্ছে ডিজেল, অকটেন ও পেট্রোল। এতে লিটারপ্রতি কয়েকগুণ মুনাফা করে বিপিসি।

জানা যায়, চার মাসেরও বেশি সময় ধরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে অনেকটা স্থিরতা বিরাজ করছে। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া এবং রাশিয়া-সৌদি আরবের মূল্যযুদ্ধ এ দুইয়ের প্রভাব পড়ে পণ্যটির দামে। ১৯৯১ সালের পর আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের সাপ্তাহিক গড় দামে সবচেয়ে বড় পতন দেখা গেছে। একইভাবে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের সাপ্তাহিক গড় দাম ২০০৮ সালের পর সবচেয়ে বেশি কমেছে, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম খবর রয়টার্স ও সিএনবিসি’র খবরে প্রকাশিত হয়।

বিপিসির’র অপারেশন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের শুরুতে বিপিসি’র আমদানি করা প্রতি ব্যারেল (১৫৯ লিটার) জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৭০ ডলার। অর্থাৎ প্রতি লিটারের ক্রয়মূল্য ছিল ৩৭ টাকা। এরপর ব্যারেলপ্রতি ৬০, ৫০, ৪০ ও ৩৮ ডলারের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে সংস্থাটি। সর্বশেষ ব্যারেলপ্রতি ক্রয়মূল্য ছিল ৪৫ ডলার, যদিও দেশে করোনা সংক্রমণ রোধে সাধারণ ছুটির প্রথম দিকে জ্বালানি তেল রাখার সক্ষমতা পুরোপুরি পূর্ণ হয়ে যায়। ফলে বিপিসিও সর্বনি¤œ দামে কেনার তেমন সুযোগ নিতে পারেনি। পরে স্বাভাবিক হয়ে এলে তেল কেনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখে বিপিসি। 

সংস্থাটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, ২০১৬ সালে দেশে দুই দফায় জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছিল। এরপর ২০১৭ ও ২০১৮ সালের আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক বেশি ছিল। এমনকি মূল্যবৃদ্ধির রেকর্ড হয়েছিল। তখন বিপিসির লোকসান হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে বিপিসির পক্ষ থেকে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। এটি নিয়ে তখন বেশ আলোচনা হয়। পরে তেমন অগ্রগতি হয়নি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) এটিএম সেলিম শেয়ার বিজকে বলেন, করোনার প্রভাবে এপ্রিল ও মে মাসে দেশের বাজারে জ্বালানি তেল বিক্রি অনেক কম ছিল। এখন আগের মতোই বিক্রি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজরের তেলের দাম কয়েক মাস ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্তু আমাদের মজুত রাখার সক্ষমতা কম থাকায় আমরা তেমন এ সুবিধা নিতে পারছি না। আমরা সর্বশেষ ব্যারেলপ্রতি ৪৫ ডলারে কিনেছি।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর থেকে দেশের সার্বিক জ্বালানি চাহিদা পূরণে এককভাবে ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০