স্কুল ব্যাংকিং

করোনার মধ্যেও আমানত বেড়েছে স্কুল শিক্ষার্থীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা মহামারির মধ্যেও বৃদ্ধি পেয়েছে দেশের স্কুলে পড়া শিক্ষার্থীদের আমানত। তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে দুই দশমিক ২১ শতাংশ। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা স্কুল ব্যাংকিংয়ে বর্তমানে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে প্রায় ২৪ লক্ষাধিক ছেলেমেয়ে ব্যাংক হিসাব খুলেছে। মোট হিসাবের ৩৯ দশমিক ১৮ শতাংশ খোলা হয়েছে গ্রামাঞ্চলে। ৬০ দশমিক ৮২ শতাংশ খোলা হয়েছে শহরাঞ্চলে। স্কুল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে খোলা এসব হিসাবে তারা জমা রেখেছে এক হাজার ৭৬২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

১৮ বছরের কম বয়সি শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং সেবা ও আধুনিক ব্যাংকিং প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করার পাশাপাশি সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে স্কুল ব্যাংকিং কর্মসূচি গ্রহণে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের দেশের আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আসাই স্কুল ব্যাংকিংয়ের লক্ষ্য। ব্যাংকগুলো ন্যূনতম ১০০ টাকা জমা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব খুলছে।

এছাড়া ব্যাংক হিসাবে আকর্ষণীয় মুনাফা প্রদান, সার্ভিস চার্জ গ্রহণ না করা, ডেবিট কার্ড প্রদানসহ বিভিন্ন বিশেষ সুবিধা প্রদান এবং স্কুলকেন্দ্রিক আর্থিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার মাধ্যমে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের প্রসার ঘটানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে স্কুলশিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা বাড়ছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের মার্চ শেষে স্কুলশিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ৩১ হাজার ৬০২টি। তিন মাসের ব্যবধানে স্কুল ব্যাংকিং হিসাবসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এক লাখ দুই হাজার ৪৭১টি। অর্থাৎ তিন মাসে হিসাবসংখ্যার প্রবৃদ্ধি চার দশমিক ৪০ শতাংশ। এ সময়ে স্কুলশিক্ষার্থীদের হিসাবে জমানো আমানত দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৬২ কোটি ৮২ লাখ টাকা, গত মার্চ শেষে যা ছিল এক হাজার ৭২৪ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্কুলশিক্ষার্থীদের হিসাবসংখ্যা ও টাকা জমার স্থিতির দিক থেকে বেসরকারি ব্যাংকের অবদান সবচেয়ে বেশি। বেসরকারি ব্যাংকগুলো মোট ১৬ লাখ ৭৮ হাজার ৮৮৯টি ব্যাংক হিসাব খুলেছে, যা মোট স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের ৬৯ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এক হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে, যা স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের মোট স্থিতির ৮৩ দশমিক ১৭ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ২৫ দশমিক শূন্য এক শতাংশ স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খুললেও মোট স্থিতির মাত্র ১৩ দশমিক শূন্য এক শতাংশ সংগ্রহ করেছে।

শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি হিসাব খুলেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে। ব্যাংকটিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক অর্থাৎ পাঁচ লাখ ১৮ হাজার ৩৬৩টি হিসাব খুলেছে শিক্ষার্থীরা, যা মোট হিসাবের ২১ দশমিক ৩২ শতাংশ। অপরদিকে স্থিতির ভিত্তিতেও শীর্ষে অবস্থান করছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। তাদের সংগৃহীত আমানত প্রায় ৫১৩ কোটি ২০ লাখ টাকা, যা মোট স্থিতির ২৮ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, স্কুল ব্যাংকিংয়ের মোট হিসাবে ছাত্র ও ছাত্রীর অনুপাত ৫৭:৪৩। ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কুল ব্যাংকিং সেবাকে জনপ্রিয় করতে কোনো কোনো ব্যাংক আলাদা কাউন্টার বা ডেস্ক খুলেছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান ২০১০ সালে শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের উদ্যোগ নেন। তবে শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০