Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 10:41 am

করোনার মাঝেই বিদেশে প্রশিক্ষণে রেলের ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প!

ইসমাইল আলী: গত বছর ডিসেম্বর চীনে শনাক্তের পর বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে নভেল করোনাভাইরাস। এর প্রকোপ বাড়ায় বিভিন্ন দেশ লকডাউন দেয়। এছাড়া বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশে এ প্রকোপ কিছুটা কমলেও নিয়মিতই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংবাদ আসছে। তবে উন্নত দেশগুলোয় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশে প্রশিক্ষণে প্রকল্প নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

সক্ষমতা বৃদ্ধির নামে এ প্রকল্পের আওতায় যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। রেলওয়ের বিভিন্ন গ্রেডের ৪৪৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কয়েক ধাপে এ প্রশিক্ষণ নিতে যাবে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে সরকারি অর্থ অপচয়ের উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। কারণ উন্নত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালনা বা অবকাঠামো কোনোটিরই সামঞ্জস্য নেই। তাই এ প্রশিক্ষণ বাস্তবে কোনো কাজে আসবে না। এছাড়া করোনার মাঝে বিদেশে ভ্রমণ অনুৎসাহিত করছে বাংলাদেশ সরকার। তাছাড়া সরকারি খরচ সাশ্রয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই প্রশিক্ষণের জন্য উন্নত দেশগুলো যাওয়ার এ ধরনের উদ্যোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তথ্যমতে, রেলওয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১১০ জন, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭০ জন, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২৪ জন, স্টোর বিভাগের সাতজন, সিগনালিং ও টেলি-কমিউনিকেশন বিভাগের ২২ জন এবং পরিবহন ও বাণিজ্যিক বিভাগের ১১২ জন ১২ দিন করে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন।

প্রকল্পটির আওতায় প্রশিক্ষক তথা পরামর্শক নিয়োগে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ কোটি দুই লাখ টাকা। এছাড়া বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণকালে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশে যাতায়াত খরচ ও ভাতা (পারডিয়াম) বাবদ ব্যয় হবে ১২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এছাড়া কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বাবদ ৪৪ লাখ টাকা, আবাসন খরচ ২২ লাখ টাকা, উৎসব ভাতা আট লাখ টাকা ও আউটসোর্সিং ফার্ম অথবা স্টাফ নিয়োগে ব্যয় হবে ২৭ লাখ টাকা। এর বাইরে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও ফটোকপি মেশিন কেনায় ১২ লাখ টাকা ব্যয় হবে। আর ফিজিক্যাল কনটিনজেন্সি ও প্রাইস কনটিনজেন্সি খাতে এক কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

জানতে চাইলে ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা ও রেলবিষয়ক গবেষক মো. আতিকুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, উন্নত দেশ তথা যুক্তরাজ্য ও জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের অবকাঠামো, রোলিং স্টক (ইঞ্জিন-কোচ) ও পরিচালনার কোনো ধরনের সামঞ্জস্যই নেই। উন্নত দেশগুলোয় বেশিরভাগই হাইস্পিড ট্রেন। বাকিটা ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন। অথচ বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো ট্রেন  নেই। বাংলাদেশে কবে নাগাদ হাইস্পিড ট্রেন বা ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন চালু হবে তাও নিশ্চিত নয়। তাই এ প্রশিক্ষণ কোনো কাজেই আসবে না।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতে রেল নেটওয়ার্ক খুবই শক্তিশালী। তাদের ৮৮ হাজার রুট কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। দেশটি ট্রেন পরিচালনায় মুনাফাও করছে। অথচ বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতি বছর বড় অঙ্কের লোকসান দিচ্ছে। আর এ দেশে মাত্র তিন হাজার রুট কিলোমিটার রেলপথ। তাই বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তাদের উচিত ভারতের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে ট্রেন পরিচালনার ব্যবস্থা করা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকৃতপক্ষে উন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে কতটা পিছিয়ে আছে, তা চিহ্নিত করতেই এ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে করোনার মাঝে এ প্রশিক্ষণ সম্ভব নয়। তাই করোনা গেলে পরেই এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।