করোনায় আক্রান্ত এস আলম গ্রুপের ছয় পরিচালক

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামভিত্তিক দেশের শীর্ষ শিল্প পরিবার এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের পরিবারের ছয় সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তরা গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের আপন পাঁচ ও এক নারী। ছয়জনই গ্রুপের পরিচালক।

রোববার (১৭ মে) রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা শেষে প্রকাশিত রেজাল্টে এ তথ্য জানা যায়। এরপর পরই পুলিশ সুগন্ধা এক নম্বর সড়কের বহুতল এ ভবনটি লকডাউন করে দেয়।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ল্যাবে সর্বমোট ১৩০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীর ৩১ জন, উপজেলার ২ জন এবং অন্য জেলার একজনসহ মোট ৩৪ জনের পজেটিভ আসে।

নগরের ৩১ জনের মধ্যে দুজন রোগীর রি-টেস্ট করা হয়েছে। এই ৩১ জনের মধ্যে সুগন্ধা আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়কের ৬ বাসিন্দার করোনা রিপোর্টও পজেটিভ আসে। তারা প্রত্যেকেই এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের পরিবারের সদস্য।

এরমধ্যে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের আপন পাঁচ ভাই এবং একজন নারী সদস্য রয়েছেন। করোনা আক্রান্ত হওয়ার তালিকায় আছেন আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ (লাবু)। যিনি এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

একই তালিকায় আছেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের পরিচালক মোরশেদুল আলম ও ওসমান গণি, ইউনিয়ন ব্যাংকের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শহীদুল আলম এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালক রাশেদুল আলম। এছাড়া ফারজানা নামে এস আলম পরিবারের এক নারী সদস্য রয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সুগন্ধা এক নম্বর সড়কের এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের মালিকানাধীন বহুতল আবাসিক ভবনটি লকডাউন করে দেয়। তবে সূত্র বিস্তারিত বলতে রাজি হননি।

জানা যায়, রোববার (১৭ মে) কক্সবাজার মেডিকেল কলেজসহ চট্টগ্রামের তিনটি ল্যাব ৫০১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে বিআইটিআইডিতে ২৪৭টি, সিভাসুতে ৮৭টি, চমেকে ১৩০টি এবং কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজে ৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে বিআইটিআইডিতে ৩৭ জন, চমেকে ৩০ জন এবং কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে চট্টগ্রামের ৬ জনের শরীরে করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়। আর সিভাসুর ল্যাবে পরীক্ষা করা নমুনার মধ্যে ১২ জন পজেটিভ শনাক্ত হলেও তারা সকলেই অন্য জেলার বাসিন্দা।

গ্রুপের একটি সূত্র জানিয়েছে, ৫৮ বছর বয়সী শিল্পোদ্যোক্তা সাইফুল আলম প্রায় ৩০ বছর আগে দেশের বৃহত্তম পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জে পণ্য বেচাকেনা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে পাচঁ ভাই মিলে এস আলম গ্রুপের ব্যবসা পরিচালনা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ক্রয় নিয়ে রীতিমত দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রে আসে এস আলম গ্রুপ।

সময়ের সাথে ব্যবসায়ের পরিসর বাড়তে থাকে। একে একে পরিবহন, হোটেল, ঢেউটিন, সয়াবিন তেল, সিমেন্ট, চিনি, সিআর কয়েলসহ বেশ কয়েকটি শিল্প-কারখানা গড়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পায় এস আলম গ্রুপ। এ গ্রুপ কয়েক বছরে আগেও তেল, গম, চিনি আমদানিতে শীর্ষে অবস্থানে থাকলেও বর্তমানে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা থেকে কিছুটা সরে এসে জ্বালানি, সিমেন্ট, ইস্পাত, ঢেউটিন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে।

এরমধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এবং স্যোসাল ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এসব ব্যাংক ছাড়াও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ক্যাপিট্যাল ও ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, রিলায়েন্স ব্রোকারেজ সার্ভিসস, নর্দান জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিসহ আরো কয়েকটিতে এস আলম গ্রুপের মালিকানায় অংশগ্রহণ আছে।

এ বিষয়ে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম মাসুদ দেশের বাহিরে থাকায় মন্তব্য নেওয়া যায়নি।

সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এখনই সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি না হলে এই সংক্রমণ কোনোভাবে কমানো সম্ভব নয়। গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজার ল্যাবসহ চারটি ল্যাবে ৫০১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে মোট ৭৩ জনের করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে । উল্লেখ যে, রোববার পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় ৭৮৯ জন করোনায় আক্রান্ত হন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০