Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 1:11 pm

করোনায় পুঁজি হারাচ্ছেন নার্সারি উদ্যোক্তারা

জুনায়েদ আহম্মেদ, লক্ষ্মীপুর: করোনাভাইরাসে সৃষ্ট সংকটের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি নার্সারি ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জন্য দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে লক্ষ্মীপুরের অধিকাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি নার্সারি শিল্পমালিক পড়েছেন চরম বেকায়দায়। এভাবে চলতে থাকলে লোকসানের পাশাপাশি পুঁজি সংকটেও পড়তে হবে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের, এমনটাই আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে ফেব্রæয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লাহারকান্দি গ্রামের নার্সারি উদ্যোক্তা দেলোয়ার হোসেনের (৫৫) পুঁজি ছিল দেড় লাখ টাকা। নগদ টাকা ছিল ৩০ হাজার আর বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা ছিল বাকি টাকার। গত দুই মাসে বেচাকেনা না থাকায় নগদ টাকা দিয়ে সংসার চালিয়েছেন।

এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হয়ে গেছে বেশকিছু বনজ ও ফলদ গাছের চারা। আর নির্দিষ্ট সময়ে বিক্রি করতে না পারায় নার্সারির বীজতলায় অনেক চারার বয়স পার হয়ে গেছে। এখন তিনি অবশিষ্ট চারাগুলো কম দামে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের কথা ভাবছেন। তবুও মিলছে না গ্রাহক।

শুধু লাহারকান্দি গ্রামের নার্সারি উদ্যোক্তা দেলোয়ার হোসেন নন, এমন অবস্থা জেলার বেশিরভাগ নার্সারি উদ্যোক্তার মাঝে বিরাজ করছে। সংসার চালাতে একদিকে পুঁজি ভাঙতে হচ্ছে, অন্যদিকে বাকি চারাগুলো যদি উৎপাদন খরচের তুলনায় কম দামে বিক্রি করে বাঁচতে হয়, তাহলে ভবিষ্যতে বেঁচে থাকার অন্য কোনো অবলম্বন খুঁজতে হবে তাদের। এসব নার্সারিকে ঘিরে শ্রমিক, ভ্যানচালক ও মৌসুমি চারা বিক্রেতারাও দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

দেলোয়ার হোসেন জানান, ছোটবেলা থেকেই অন্যের জমি রায়াত (ইজারা) নিয়ে নার্সারি করছেন তিনি। তার নার্সারিতে তিনজন কাজ করতেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ও হাটবাজারে ফেরি করে জীবন চালাতেন তারা। নিজের বলতে ছোট এক টুকরা জমি আছে। নার্সারি দিয়ে যা আয় হতো তা দিয়ে স্কুলপড়–য়া তিন ছেলে, দুই মেয়ে, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তিনি। মহামারি করোনা সংক্রমণ তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। ব্যবসায় চলছে চরম মন্দাভাব। নার্সারিতে পাঁচ বছর ধরে কর্মরত দুই শ্রমিককেও ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, করোনা কতদিন থাকবে তা তো জানি না। পুঁজি ভেঙে সংসার চালাচ্ছি। দুই হাজার ২০০ টাকা দিয়ে পেঁপের বীজ এনে চারা হওয়া পর্যন্ত প্রতিটিতে খরচ হয় প্রায় ২৫ টাকা। করোনার আগে বিক্রি করা যেত প্রতিটি ৪০ টাকায়। এখন একদিকে বৃষ্টিপাত অন্যদিকে প্রখর রোদে চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

প্রভাব পড়ছে উৎপাদন ব্যয়ের ওপর। করোনার প্রভাবে হাটবাজার কিংবা গ্রামে ফেরি করাও যাচ্ছে না। এতে শুধু পেঁপে নয়, আম, নিম, আমড়া, লেবুসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ ও বনজ গাছের চারা বীজতলার নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাচ্ছে। তাই উৎপাদন ব্যয় বেশি হলেও কম দামে বিক্রি করে জীবন বাঁচাতে হচ্ছে। আর এ চারাগুলো বিক্রি হয়ে গেলে তার ভবিষ্যৎ হয়ে উঠবে অন্ধকারময়। নার্সারি ব্যবসা বাদ দিয়ে তাকে খুঁজতে হবে অন্য পেশা।

করোনা দুর্যোগে নার্সারি ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারাচ্ছেন প্রতিদিন। অনেকে এরই মধ্যে পুঁজি হারিয়ে ফেলেছেন। নার্সারি উদ্যোক্তাদের তালিকা করে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা দেওয়া না হলে তারা পুঁজি হারিয়ে নিজেদের পেশা থেকে ছিটকে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।