নিজস্ব প্রতিবেদক: আরও ২৮৫৬ রোগী শনাক্ত হওয়ায় নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে গেলে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার ৩৭৯ জন। অন্যদিকে এই ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের উৎসস্থল চীনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮৪ হাজার ২২৮ জন।
চীনে প্রাদুর্ভাবের তিন মাস পর বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী ধরা পড়েছিল ৮ মার্চ, তার ১০ দিনের মাথায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে।
বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিড-১৯ রোগে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৯।
সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন আরও ৫৭৮ জন। সব মিলে এ পর্যন্ত মোট ১৭ হাজার ৮২৭ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা শনিবার দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সবশেষ তথ্য তুলে ধরেন।
বুলেটিনে জানানো হয়, সারা দেশে ৫৯টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ হাজার ৬৩৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ১৭ শতাংশ।
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল এক হাজার ১৩৯ জনে। মৃতদের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ ও ১১ জন নারী। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৯ জন, চট্টগ্রামে ১৩, সিলেটে ২, রাজশাহীতে ৪, খুলনায় ১, বরিশালে ৪ জন এবং রংপুর বিভাগে ১ জন মারা গেছেন। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও দুই হাজার ৮৫৬ জন। ফলে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৪ হাজার ৩৭৯ জনে।
অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা মোট ৫৯টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ হাজার ৩৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় আগের কিছু মিলিয়ে ১৬ হাজার ৬৩৮টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো চার লাখ ৮৯ হাজার ৯৬০টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও দুই হাজার ৮৫৬ জনের মধ্যে। ফলে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৪ হাজার ৩৭৯ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৪৪ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ১৩৯ জনের। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫৭৮ জন। ফলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন মোট ১৭ হাজার ৮২৮ জন।

মৃত ৪৪ জনের বয়স:
- ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী: ১ জন।
- ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী: ৬ জন।
- ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী: ৫ জন।
- ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী: ১১ জন।
- ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সী: ১১ জন।
- ৭১ থেকে ৮০ বছর বয়সী: ৭ জন।
- ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সী: ৩ জন
এক নজরে বাংলাদেশের করোনাচিত্র:
মোট আক্রান্ত: ৮৪ হাজার ৩৭৯ জন।
মারা গেছেন: ১ হাজার ১৩৯ জন।
মোট সুস্থ: ১৭ হাজার ৮২৭ জন।
মোট নমুনা পরীক্ষা: ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৬০টি
করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য সরকার ইতোমধ্যেই একটি বিশেষ ওয়েবসাইট (www.corona.gov.bd) চালু করেছে।
এদিকে, করোনার পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়ার্ল্ডোমিটারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টা পর্যন্ত বৈশ্বিক এ মহামারিতে সারা পৃথিবীতে ৭৭ লাখ ৫১ হাজার ৮৮৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে প্রাণ গেছে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৪৮৭ জনের।
করোনাভাইরাসে বিশ্বে আক্রান্ত সাড়ে ৭৬ লক্ষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ২০ লাখ ৪৮ হাজার জন।
শনাক্ত রোগীর সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে অষ্টাদশ স্থানে। বাংলাদেশের উপরে রয়েছে কানাডা, যেখানে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক লাখ।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাংলাদেশের বেশি। বৈশ্বিক তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা ভারতে ৩ লাখের বেশি আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছে প্রায় ৯ হাজার জন। পাকিস্তানে আক্রান্ত ১ লাখ ৩২ হাজারের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আড়াই হাজার জনের।
বাংলাদেশে আক্রান্ত বিবেচনায় মৃতের হার ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ বলে জানান অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।
গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ, ১১ জন নারী। তাদের ২৭ জন হাসপাতালে, ১৪ জন বাড়িতে মারা গেছেন এবং ৩ জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
মৃতদের ১৯ জন ঢাকা বিভাগের, ১৩ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ২ জন সিলেট বিভাগের, ৪ জন রাজশাহী বিভাগের, ৪ জন বরিশাল বিভাগের, ১ জন রংপুর বিভাগের এবং ১ জন খুলনা বিভাগের।
মৃত ৪৪ জনের মধ্যে ৩ জনের বয়স ছিল ৮০ বছরের বেশি। ৭ জনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে।
এছাড়া ১১ জনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৫ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৬ জনের বয়স ছিল ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ছিল ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
অধ্যাপক নাসিমা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে আনা হয়েছে ৪৯৬ জনকে। বর্তমানে সারা দেশে আইসোলেশনে রয়েছেন ৯ হাজার ৩৪০ জন রোগী।
বুলেটিনে জানানো হয়, সারা দেশে ৫৯টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ হাজার ৬৩৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। আর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ।