Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 12:38 pm

করোনা আতঙ্কে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক : যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা মো. রহমতউল্লাহ পেশায় চাকরিজীবী। অফিস শেষে রোববার রাতে বাসায় ফেরার সময় যাত্রাবাড়ী এলাকায় কোথাও হ্যান্ড স্যানিটাইজার খুঁজে পাননি। গতকাল সকালেও বিভিন্ন সুপারশপ ও ফার্মেসি ঘুরে খালি হাতে ফেরেন। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস আতঙ্কে সব (হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসল) শেষ। অনেক ঘুরলাম, কিন্তু পেলাম না।’

একই ধরনের মন্তব্য করেন রামপুরার বাসিন্দা মো. হামিদ। তিনি বলেন, আশেপাশের দোকান, বিভিন্ন সুপারশপ, ফার্মেসি ঘুরে কোথাও হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া যায়নি। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে। মূলত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে তিনজন আক্রান্ত হওয়ার খবর ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সংকট দেখা দিয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্কের।

রাজধানীর বিভিন্ন সুপারশপ ঘুরে দেখা গেছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার শেষ। কোনো ফার্মেসি ও সুপারশপে এ ধরনের নোটিসও টানানো রয়েছে। কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, রোববার দেশে করোনা আক্রান্তের খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনতে ভিড় জমান বিভিন্ন দোকান ও সুপারশপে। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের পাশাপাশি ডেটল, স্যাভলন, লাইজল, হারপিক প্রভৃতি বিক্রয় হয়েছে তুলনামূলক বেশি। অনলাইনেও নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার। এমন পরিস্থিতিতে এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

রাজধানীর মিরপুর-৬-এর এক সুপারশপের বিক্রয় কর্মীরা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের পর থেকেই বিক্রয় বেড়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের। দিন দিন যত দেশে ছড়াচ্ছে, তত বিক্রয় বাড়ছিল। কিন্তু ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তের খবর জানাজানির পর তুলনামূলক বাড়তে থাকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি। পাশাপাশি হ্যান্ডওয়াশ, ডেটল, স্যাভলন ইত্যাদিও ক্রয় করেন অনেকে। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের স্টক শেষ বলেও জানান তিনি।

এক সুপারশপে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্তের পর ওইদিনই শেষ হয়ে যায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার। এরপর অর্ডার দিয়ে গতকাল সকালে আনানো হয় আরও কিছু হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সেগুলোও শেষ হয়ে যায় দুপুর ১২টার আগেই। ফলে অনেক ক্রেতা হ্যান্ড স্যানিটাইজার না পেয়ে ঘুরে যাচ্ছেন।

রাজধানীর ফার্মগেটে বিভিন্ন ফার্মেসিতে একই চিত্র দেখা গেছে। অনেক ফার্মেসিতে ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার নেই’ লিখে রাখতেও দেখা গেছে। মিরপুর-১৪তেও এ চিত্র ভিন্ন নয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতা জানান, ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার মার্কেটে নেই। কোম্পানিগুলো এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করে নেবে।  বিক্রেতাদের স্টক শেষ। নতুন করে দাম বৃদ্ধি করে মার্কেটে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেবে  কোম্পানিগুলো।’

যদিও গতকালই দেশে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনকারী সাত ওষুধ কোম্পানির উৎপাদিত হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়। গতকালই ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান জানান, বেঁধে দেওয়া মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে হ্যান্ডসেট বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনাকালে তিনি জানতে পারেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ হ্যান্ডসেটের কাঁচামাল মজুত আছে। তিনি খুচরা বিক্রেতাদের একসঙ্গে কোনো ব্যক্তির কাছে একটির বেশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি করতে নিষেধ করেন।

এদিকে ধুলাময় রাজধানীতে মানুষ আগে থেকেই মাস্ক ব্যবহার করত। করোনাভাইরাসের আবিরভাবের পর বাড়তে থাকে মাস্কের ব্যবহার। পাশের দেশ ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্তের পর আরও বেড়ে যায়। ৮ মার্চ জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে জানানো হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশে তিনজনকে শনাক্ত করা হয়। এই সংবাদ প্রকাশের পরই শুরু হয় মাস্ক ক্রয়ের হিড়িক। অনেকে ইচ্ছেমতো দাম হাঁকিয়ে বিক্রি করে মাস্ক। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ৩০ টাকার মাস্ক বিক্রয় করতে দেখা যায় ১৫০ টাকায়।

এক মাস্ক বিক্রেতার সঙ্গে দাম নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, ‘দাম কম হইব না। দাম আরও বাড়ব। নিলে নেন, না নিলে যানগা। আপনে না নিলে, আরেকজনে নিব।’