সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার রোধে দেশে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে। কিন্তু লেনদেন ও জরুরি সেবার আওতায় সীমিত পরিসরে চালু রাখা হয়েছে ব্যাংকিং সেবা। আর লেনদেনের সময় সীমিত হওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চালু শাখায় গ্রাহকের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে।
এর ফলে অসম্ভব হয়ে পড়ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। এ কারণে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ছেন ব্যাংককর্মীরাও। এরই মধ্যে একজন মারা গেছেন।, আর দুজন নতুনভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রামে ব্যাংক এশিয়ার ১৫ ব্যাংকারকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। ফলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকা ব্যাংকাররা দাবি তুলেছেন, আপাতত কয়েক দিন ব্যাংক বন্ধ রাখার জন্য।

ব্যাংকার ও গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রয়োজনে টাকা তুলতে ব্যাংকে ভিড় করছেন গ্রাহকরা। কয়েক দফায় বেড়েছে চলমান সাধারণ ছুটি। এ কারণে তাদের আশঙ্কা দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন হতে পারে। ফলে নগদ টাকা তোলার প্রবণতা বেড়েছে। আর এসব গ্রাহক ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংকে যাচ্ছেন। আর লেনদেনের সময় কমিয়ে আনার কারণে গ্রাহকের চাপ বাড়ছে।
গতকাল চট্টগ্রামের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদে গিয়ে দেখা যায়, ব্যাংকের শাখাগুলোর সামনে গ্রাহকদের লাইন ব্যাংকের মূল ফটক থেকে পাশের সড়কের বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। ভেতরে কিছুটা দূরত্ব থাকলেও বাইরে অনেকটা গা-ঘেঁষাঘেঁষি ছিল। শুধু আগ্রাবাদ নয়, ছুটির দিনগুলোয় খাতুনগঞ্জ, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, জুবলি রোড, স্টেশন রোড, কদমতলী ও পাহাড়তলী এলাকায় এমন চিত্র ছিল। এমনকি একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাংক বন্ধ রাখার জন্য পোস্ট করে জনমত গড়ে তোলেন।

আজ বিকালের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ব্যাংক এশিয়ার আন্দরকিল্লা শাখার এক নিয়মিত গ্রাহক সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি কিছুদিন আগে ব্যাংকে লেনদেন করার জন্য আসেন। ফলের পুরো শাখাটির ১৫ কর্মকর্তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠায় স্থানীয় প্রশাসন। পাশাপাশি শাখাটি লকডাউন করা হয়েছে। আগের দিন চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ড এলাকার এক ব্যাংকারের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। তিনি নারায়ণগঞ্জে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে কর্মরত।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, করোনায় ব্যাংক লেনদেনের সীমাবদ্ধতার পরও সীমিত পরিসরে সেবা দিয়ে আসছিল ব্যাংকগুলো। একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তার দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ব্যাংকারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়ে আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপরভিশন থেকে এ-সংক্রান্ত এক সার্কুলার জারি করেছে।

দেশের তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী ১২ এপ্রিল থেকে দৈনিক ব্যাংকিং লেনদেন এবং লেনদেন-পরবর্তী অনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সময়সূচি যথাক্রমে সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এবং বেলা ২টা পর্যন্ত পুনর্র্নিধারণ করা হলো। এদিকে জরুরি বৈদেশিক লেনদেন করার জন্য নির্দিষ্ট ব্যাংক শাখার লেনদেনের সময়সীমা আধা ঘণ্টা কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বেলা ২টার পরিবর্তে বেলা দেড়টা পর্যন্ত চলবে বৈদেশিক শাখার লেনদেন। সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন প্রদত্ত ঘোষণা অনুসারে লকডাউন এলাকায় ব্যাংকের শাখা বন্ধ থাকবে। এছাড়া ব্যাংকিং লেনদেনের জন্য খোলা রাখা শাখা ও প্রধান কার্যালয়ে নির্দিষ্ট দূরত্ব (ডব্লিউএইচও’র গাইডলাইন অনুযায়ী) বজায় রাখার বিষয়ে নির্দেশনা নিশ্চিত করতে হবে।

আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডে অবস্থিত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নিয়ামত উল্লাহ শেয়ার বিজকে বলেন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা করেছি। তবুও গ্রাহক তো বেশি। আমাদের সীমিত জায়গা। এর মধ্যে অনেকের মুখে মাস্কও নেই। ফলে ভয়াবহ ঝুঁকিতে আছি। আবার দেশে আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য সচল রাখার জন্য ব্যাংক চালু রাখতে হবে।
যদিও এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন ব্যাংকার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে দেশের ব্যাংকগুলোয় ডিজিটাল সার্ভিস ছাড়া শাখা লেনদেন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা উচিত। এতে হয়তো সাময়িক অসুবিধা হবে, কিন্তু দেশ বড় ধরনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে।

উল্লেখ্য, ২ এপ্রিল নির্দেশনা অনুযায়ী সাধারণ ছুটির সময় সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত গ্রাহক লেনদেন করতে পারতেন, আর ব্যাংক খোলা থাকত বেলা ৩টা পর্যন্ত।