কোরবানির পশু বেচাকেনা

করোনা পরিস্থিতিতে যশোরে আগেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ প্রশাসনের

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: ঈদুল আজহা আসন্ন। করোনা পরিস্থিতিতে এবার যশোরের পশুর হাট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে কোরবানির পশু বেচাকেনার ব্যাপারে আগেভাগেই সতর্ক হচ্ছে যশোরের জেলা প্রশাসন। স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পশুর হাটে ক্রেতাদের চাপ কমাতে খামারি ও গৃহস্থালি পর্যায় থেকে কোরবানির পশু কেনার জন্য সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করতে নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। তবে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে কোরবানির হাটেও পশু বেচাকেনা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

মুসলমানদের সবচেয়ে বৃহৎ দুটি ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা, অর্থাৎ কোরবানির ঈদ। ঈদুল ফিতর উদ্যাপনের প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেছে, এখন দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। চান্দ্রমাসের হিসাব অনুযায়ী আগামী ৩১ জুলাই বা ১ আগস্ট অনুষ্ঠিত হতে পারে কোরবানির ঈদ। এই ঈদ যখন মুসলমানদের দোরগোড়ায়, ঠিক তখন বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মহামারি আকার ধারণ করছে। যশোর জেলায়ও করোনা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে এ অবস্থায় সামনের কোরবানির ঈদ নিয়ে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির ঈদে সাধারণত পশুর হাট নিয়ে একটু ঝামেলা থাকে। কোরবানির আগ মুহূর্তে পশুর হাটগুলো ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে ওঠে। প্রতিটি হাটেই বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে পা ফেলার জায়গা থাকে না। মানুষ আগেভাগেই প্রস্তুত থাকে সরাসরি হাট থেকে গরু বা ছাগল কেনার জন্য। তাই এবার করোনাভাইরাসের কারণে এসব হাটে মানুষের চাপ কমাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে।

পরিবেশবিদরা বলছেন, প্রতিবছরই বিভিন্ন শর্ত দিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় পশুর হাট বসে। এসব হাটের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে উদাসীনতার পাশাপাশি নানা অনিয়ম করেন হাট মালিক ও ইজারাদাররা। গত বছর ডেঙ্গুজ্বরের আতঙ্কের কারণে বেঁধে দেওয়া বিধিনিষেধও উপেক্ষিত হয়। তাই করোনাকালে এবার যদি কোরবানির হাটগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা হয়, তাহলে এর জন্য চরম খেসারত দিতে হবে।

এ বিষয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন ওয়ার্ল্ড এনভাইরনমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আশিক মাহমুদ সবুজ বলেন, এবার কোরবানিতে পশুর হাটে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিবে। কেননা দেশে এখন করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি চরম পর্যায়ে চলে গেছে। পশুর হাট থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল রয়েছে। তাই এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে এখনই প্রস্তুত হওয়া উচিত।

এ বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শফিউল আরিফ বলেন, যশোরে যেসব হাট পশু বেচাকেনার জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে, সেসব হাটেই এবার কোরবানির পশু বিক্রি হবে। তবে এসব হাটে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, কোরবানির হাটে মানুষের ভিড় কমাতে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে আমরা কিছু উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। যেসব মানুষ কোরবানির পশু কেনার জন্য প্রস্তুত আছেন তাদের আগেভাগেই বিভিন্ন খামার ও গৃহস্থের কাছ থেকে পশু কিনে রাখার জন্য উৎসাহিত করছি। এটি করতে পারলে পশুহাটে মানুষের চাপ কমবে এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা সহজ হবে।

তিনি  বলেন, এ বিষয়ে আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি নির্দেশনা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেব। সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে মানুষকে মাইকিং করে এ বিষয়ে সচেতনতার জন্য আহ্বান করা হবে।

যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর কোরবানিতে জেলায় ৬০ হাজার গরু ও ছাগলের চাহিদা ছিল। কিন্তু আটটি উপজেলায় ৭০ হাজার ৬২৪টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেন খামারিরা, যেক্ষেত্রে চাহিদার চেয়ে ১০ হাজার ৬২৪টি বেশি গরু ও ছাগল ছিল। এবার এর চেয়ে আরও দুই শতাংশ গরু ও ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে।

যশোর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মো. শফিউল আলম বলেন, এবার কোরবানির প্রেক্ষাপট যেহেতু ভিন্ন, সেজন্য পশু বেচাকেনার ক্ষেত্রে আমরা খামারি ও ব্যবসায়ীদের কৌশলী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আমাদের সামনে এখন দুটি চ্যালেঞ্জ। একটি হচ্ছে খামারিরা যারা কষ্ট করে পশু পালন করছেন, তারা যেন তাদের পশু ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারেন। অপরটি হচ্ছে করোনা সংক্রমণ থেকে তারা নিজেদের ও অন্যদের রক্ষা করতে পারেন। এজন্য পশু বেচাকেনার ক্ষেত্রে খামারি পর্যায়ে যোগাযোগের জন্য সবাইকে উৎসাহিত করছি। এ সময় খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি নির্দেশনা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে খামারিদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০