Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 4:20 pm

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দুই হাসপাতালে বিশেষ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে রাজধানীর কুর্মিটোলা ও সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে আলাদা করে বিশেষ ওয়ার্ড খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

জাহিদ মালেক বলেন, এ বিষয়ে হাসপাতালে অগ্রিম ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কুর্মিটোলা হাসপাতাল ও সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড করা হয়েছে। সব জেলায়ও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যত রকম প্রতিকারের ব্যবস্থা আছে আমরা সবই করেছি।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দুই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দুই ধরনের প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিয়েছি। একটি হচ্ছেÑভাইরাসটি যেন কোনোভাবেই দেশের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে; সে জন্য সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর, নৌবন্দরে আমরা মনিটরিং করছি, স্ক্যানার বসিয়েছি, হ্যান্ড স্ক্যানারও সরবরাহ করেছি। বিমানবন্দরের প্রতি নজর রাখছি বেশি। সিভিল এভিয়েশন ডিপার্টমেন্ট আমাদের সার্বক্ষণিক সব ধরনের সহযোগিতা করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চীন থেকে যারা আসছেন, তাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। ১৪ দিন পর্যন্ত এই পর্যবেক্ষণ অব্যাহত থাকবে। কারণ ভাইরাসটি আক্রমণ করলে উপসর্গ দেখা দেয় ১৪ দিন পর। দ্বিতীয়ত, করোনা ভাইরাস বহনকারী কেউ যদি দেশে প্রবেশ করেই ফেলে, সেটি ঠেকাতে কুর্মিটোলা হাসপাতাল এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে পৃথক ওয়ার্ড খুলেছি। কোনো রোগী শনাক্ত হলে এখানে চিকিৎসা দেওয়া হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় জনবলও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতি জেলায় সিভিল সার্জন, ডিসি এবং এসপিকে এই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চীনের উহান রাজ্যে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটেছে। ইতোমধ্যে দেশটির ১০০ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার। এই ভাইরাস পশু থেকে মানুষের দেহে আসে এবং ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়, ইঁদুর-বাদুর থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি। ভাইরাসটি খুবই সংক্রামক। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হয়।’

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ আক্রান্ত হলে বেশি মাত্রায় জ্বর হবে, কাশি হবে। এগুলো দেখা দিলেই যেন কেউ হাসপাতালে যোগাযোগ করে। তবে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে এই ধরনের কোনো রোগী আমরা পাইনি।’

দেশে ফিরতে চাওয়া চীনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চীনের উহানে বাংলাদেশের ৩০০ ছাত্র আছে। সেখানে কেউ এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেনÑতারা যদি আসতে চায়, তাদের যেন নিয়ে আসা হয়। কিন্তু চীন সরকার কাউকে দেশত্যাগে অনুমতি দিচ্ছে না। ১৪ দিন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা কাউকেই দেশত্যাগে অনুমতি দেবে না। এই ১৪ দিনের বাধ্যবাধকতা শেষ হবে ৬ ফেব্রুয়ারি।’

বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশিদের চীন ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘এই মুহূর্তে চীনে যাতায়াত না করার পরামর্শ দিচ্ছি। তবে কোনো ট্রাভেল ব্যান্ড নেই। ডাব্লিউএইচও কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি।’

বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চীনা নাগরিকদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক চীনা নাগরিক কাজ করেন। তারা যেখানে থাকেন, সেখানে নজরদারি করা হচ্ছে। তবে বেশি নজরদারি রাখছি বিমানবন্দরে। এই সময় যারা চীন থেকে বাংলাদেশে আসছেন, তাদেরও ১৪ দিন মনিটরিং করব।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ‘রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে একজন চীনা নাগরিক সর্দি নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে যেতে চাচ্ছেন। তবে আমরা তাকে যেতে দিচ্ছি না। তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।’

এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের প্রতিনিধি জানান, ‘গত ১৫ দিনে শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে মোট ২ হাজার ৮০৫ জন লোক চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছে। এই কদিনে সাত হাজার ৫৭০ জন নাগরিক নিজ দেশে গিয়েছেন, তারা ১৫ দিন পর ফিরে আসবেন।’

এ সময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলামসহ স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, পররাষ্ট্র, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা।