আবদুল মকিম চৌধুরী: করোনা এক ধরনের সংক্রামক ভাইরাস। এটি পশুপাখির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকে। চীনসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে বর্তমানে ‘২০১৯-এনকভ’-এর (মার্স ও সার্স সমগোত্রীয় করোনা ভাইরাস) সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। এসব দেশ ভ্রমণকারীদের এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এসব দেশে ভ্রমণকারীদের নিজ দেশে ফেরার ১৪ দিনের মধ্যে ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রার জ্বর, গলাব্যথা, কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে করোনা ভাইরাস (২০১৯-হঈড়া) সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এর কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি।
জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত চীন ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকার জন্য এবং প্রয়োজন ব্যতীত বাংলাদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে কয়েক দিন ধরে। আবার হাত ধৌত করার ক্লিন জেল বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে নিজেদের তৈরি হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বিজ্ঞাপন দিয়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। এর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও)। বৃহস্পতিবার সংস্থাটির মহাপরিচালক টেড্রস অ্যাডানম গেব্রেয়েসাসের বিবৃতিতে বলা হয়, করোনা যাতে বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্যই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। টেড্রস অ্যাডানম গেব্রেয়েসাস আরও বলেন, ‘বিশ্বস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে, বিশেষত, যেসব দেশ স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় দুর্বল, সে দেশগুলোর কথা চিন্তা করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হলো। তবে বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
এদিকে চীনে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বিভিন্ন দেশ। যুক্তরাষ্ট্র অ্যাডভাইজরি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, আপাতত সে দেশের নাগরিকদের চীনে না যাওয়াই ভালো। জার্মানিও নিজের দেশের নাগরিকদের চীন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে। আমাদের দেশেও করোনা ভাইরাস ঘিরে চ‚ড়ান্ত সতর্কতা জারি হয়েছে। গত আট দিনে চীন থেকে দেশে ফিরেছেন অন্তত চার হাজার মানুষ।
শুধু গত পাঁচ বছরেই বিশ্বে ইবোলা, জিকা, সার্স ও মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামের ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। এখন ২০১৯-এনকভ ভাইরাসের সংক্রমণ-শঙ্কায় সারা বিশ্ব। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় যতই সাফল্য দাবি করি না কেন, মশাবাহী জীবাণু এডিসকে আমরা দমন করতে পারিনি। সরকারি হিসেবেই ডেঙ্গু কেড়ে নিয়েছে ১৪৮ জনের প্রাণ।
সরকার স্বাস্থ্য খাতের তথ্য লুকিয়েছে এমন অভিযোগও রয়েছে। দেশের স্বাস্থ্য খাতের বেহাল চিত্র উঠে আসায় তিনটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। ২০১৭ সালে মাতৃমৃত্যু ও স্বাস্থ্যসেবা জরিপের প্রাথমিক ফল প্রকাশ করার দেড় সপ্তাহ পর ওয়েবসাইট থেকে তা সরিয়ে নেওয়া হয়। ২০১৮ সালে জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের তথ্য সংগ্রহ হলেও তা প্রকাশ করা হয়নি। ২০১৭ সালে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান জরিপের ফলও প্রকাশ করা হয়নি।
সাধারণত দুর্যোগে মৃত্যুর জন্য সরকারকে দায়ী করা হয় বলে প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করা হয় না। এ প্রবণতা আমাদের দেশে নতুন নয়। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকলেই এ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব।
করোনা ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশের পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন সময় লাগে। প্রথম লক্ষণ হলো জ্বর। তারপর দেখা দেয় হাঁচি ও শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ফুসফুসে সংক্রমণ যত বাড়ে, শ্বাসকষ্টও তত বাড়তে থাকে। বুকে ব্যথা হতে পারে। তবে এ ব্যথার ধরন একেবারে আলাদা। গভীর বা লম্বা শ্বাস নেওয়ার সময়ে বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভ‚ত হতে পারে। মূলত ফুসফুসে সংক্রমণজনিত প্রদাহের ফলে এ ব্যথা হয়। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের জ্বর নাও থাকতে পারে। এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। তবে সচেতন থাকলে এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে অনেকাংশেই রেহাই পাওয়া সম্ভব। তাই গণমাধ্যম বিশেষ করে টিভি চ্যানেলগুলোয় সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি সংক্রমিত লোকদের চিহ্নিত করে সাধারণ মানুষদের থেকে আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে চীন থেকে আগত দেশি কিংবা বিদেশি নাগরিকদের নিবিড় পরিচর্যায় রেখে নিশ্চিত হতে হবে যে তারা ২০১৯-এনকভ ভাইরাসের বাহক নন। এখন বিশ্বের সব দেশই ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। ১৮টি দেশে অন্তত ৯৮ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আক্রান্তদের চিকিৎসা এবং সাধারণ মানুষকে সংক্রমণ থেকে রোধে ওই দেশগুলো কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, সেটি স্বাস্থ্যসেবা ও পরিকাঠামোয় পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।