Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 9:50 pm

করোনা সংকটকালে সরকারকে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দেওয়ার প্রস্তাব বারভিডার

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা মহামারির এই সংকটকালে সরকারকে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ রিকনডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)। মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরে বারভিডার আমদানি করা যে আট হাজার গাড়ি ইয়ার্ডে রক্ষিত রয়েছে, সেগুলোর এপ্রিল ও মে মাসের বন্দর ভাড়া মওকুফ করা হলে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ সহায়তা প্যাকেজে বারভিডার জন্য ৫০০ কোটি টাকার ঋণ বরাদ্দ করা হলে বন্দরে থাকা গাড়িগুলো ছাড় করার শুল্ক ও কর বাবদ স্বল্পতম সময়ে সরকার এই এক হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব পেতে পারে বলে মনে করে বারভিডা।

গতকাল রোববার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এ প্রস্তাব দিয়েছে। এক্ষেত্রে বারভিডা সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় কিছু সহায়তার অনুরোধ জানিয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আবদুল হক বারভিডা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

সরকার মহামারি চলাকালে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনারের জন্য বন্দর ভাড়া মওকুফ করেছিল। যেহেতু বন্দর দু’মাস বন্ধ ছিল, তাই আমদানিকৃত গাড়িগুলো ছাড় করার ক্ষেত্রে ওই দু’মাসের জন্য বন্দর ভাড়া মওকুফ করতে বারভিডা নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় তথা সরকারকে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছে। অতীতেও বিপর্যয়কর বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে বন্দর ভাড়া মওকুফ এবং শুল্ক-কর মওকুফ করে দেওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে বলে বারভিডা জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে বারভিডা প্রেসিডেন্ট বলেন, করোনা মহামারি থেকে দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে সরকার বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্পসুদে ৩০ হাজার ও ২০ হাজার কোটি টাকাসহ মোট ৫০ হাজার কোটি টাকার যে ঋণ সুবিধা দিয়েছে, তাতে বারভিডা একটি ট্রেডিং সংগঠন হিসেবে সুবিধা পাচ্ছে না। ওই ঋণ সুবিধায় বারভিডাকে বিশেষ বিবেচনায় অন্তর্ভুক্ত করে এ খাতের জন্য নির্দিষ্টভাবে ৫০০ কোটি টাকার একটি ঋণ সহায়তা প্যাকেজ প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি। এক্ষেত্রে বারভিডা আশ্বস্ত করছে, রিকনিডিশন্ড মোটরযান খাতে ঋণ প্রদান করা হলে তা সরকারের জন্য ১০০ শতাংশ নিরাপদ। গাড়ির ডকুমেন্টের বিপরীতে এ অর্থ ব্যাংকে জমা হবে এবং বারভিডা এক্ষেত্রে গ্যারান্টি প্রদান করবে। উল্লেখ্য, একটি গাড়ির মোট মূল্যের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই সরকারের শুল্ক ও কর বাবদ সরকারি তহবিলে জমা হয়ে থাকে।

এছাড়া মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা গণপরিবহন সীমিত থাকার এই সময়টিতে গাড়ি কেনার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন এবং এর মাধ্যমে এ খাতের ব্যবসায়ীরা যেমন হতাশামুক্ত হবেন, একইসঙ্গে মোটরযান বাণিজ্য খাতে স্থবিরতা কাটিয়ে একটি ইতিবাচক আবহ তৈরি হবে।

বারভিডা জানিয়েছে, রিকনডিশন্ড এবং নতুন গাড়ির শুল্কায়ন মূল্যে নানা বৈষম্যের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নতুন গাড়ির চেয়ে রিকনডিশন্ড গাড়ির শুল্ককর কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণ পড়ে যাচ্ছে। এর ফলে রিকনডিশন্ড গাড়ির চাহিদা ও ক্রেতা কমে যাওয়ায় আমদানি ক্রমাগতভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং এ খাতের ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে আসছেন। আর আমদানি কমে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব আয়ও লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পেয়ে চলেছে।

এমন বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেই করোনার আক্রমণ এ খাতে এক চরম বিপর্যয় নিয়ে এসেছে। বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বারভিডা সদস্যদের প্রায় ২০০টি শোরুমে চার হাজারেরও বেশি গাড়ি বিক্রির জন্য ডিসপ্লেতে রয়েছে। এছাড়া মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরে বারভিডা সদস্যদের আমদানি করা প্রায় আট হাজার গাড়ি ইয়ার্ডে রক্ষিত আছে। মহামারির ফলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকলেও ব্যবসায়ীদেরকে তাদের শোরুম বা অফিস ভাড়া বহন এবং কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বারভিডার সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম আনোয়ার সাদাত, মোহা. সাইফুল ইসলাম ও মো. জসিম উদ্দিন মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।