করোনা সংক্রমণ আতঙ্কে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি সাধারণ ছুটি চলাকালেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তাকে অফিস করতে হয়েছে। এ সময়ে তিনটি বিভাগের পাঁচ ব্যাংক কর্মকর্তা করোনা পজিটিভ হয়েছেন। এখন তারা বাসায় রয়েছেন। এছাড়া অফিস না করেও কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পরিবারের সদস্যসহ এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অর্ধশতাধিক।

করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) আক্রান্তের তথ্যটি গভর্নরের কাছে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল। সেখানে পরিবারসহ অর্ধশতাধিক কর্মকর্তার আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা বলা হয়নি।

করোনা-আক্রান্ত কর্মকর্তাদের ডেস্ক ও এলাকাগুলো এখনও লকডাউন করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। অপরদিকে কর্মকর্তাদের করোনা-আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সবার মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। উৎকণ্ঠা নিয়ে কাজ করছেন সবাই।

যদিও প্রকৃতপক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কতজন কর্মকর্তা করোনা-আক্রান্ত, সে বিষয়ে কারও কাছেই সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনার আলোকে ব্যাংককে চালু রাখতে হচ্ছে। প্রণোদনার প্যাকেজ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকাই মুখ্য। সরকারি ওই নির্দেশনায় উল্লেখ করা আছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। এজন্য যাদের করোনাঝুঁকি আছে, যারা করোনাপ্রবণ এলাকায় আছেন, বয়স্ক ও গর্ভবতী নারী এবং যারা অসুস্থ বোধ করছেন বা পরিবারে করোনা-আক্রান্ত সদস্য রয়েছেন, তাদের অফিস করতে নিষেধ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনার আলোকেই তা সব বিভাগীয় দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। সেই আলোকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রম চলছে। উপরন্তু মতিঝিল থেকে দূরে অবস্থানকারী কর্মকর্তাদের বদলে কাছাকাছি অবস্থানরতদের দিয়েও কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এর পরও যদি কোনো প্রয়োজন হয় সে পদক্ষেপও নিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।’

জানা গেছে, সরকারি ছুটি চলাকালে কিছু কর্মকর্তাকে নিয়মিত অফিস করতে হয়েছে। আর এখন সাধারণ ছুটি শেষে এখন সবাইকে উপস্থিত থাকতে হচ্ছে। কিছু কর্মকর্তাকে পদায়ন করলেও আসন দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিস ডেকোরেশন সাজানো হয়েছে এমনভাবে, যাতে প্রত্যেকের ডেস্ক আলাদা হলেও কর্মকর্তাদের দূরত্ব একজন থেকে আরেকজনের দুই ফুটও নয়, অস্থায়ী পার্টিশন দিয়ে আলাদা করা মাত্র। কিন্তু কভিড চলাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হলে কমপক্ষে তিন ফুট দূরে থাকা প্রয়োজন।

কর্মকর্তাদের করোনা সংক্রমণ ও আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল। গত ১ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে দেওয়া ওই প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়, করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত দীর্ঘ সাধারণ ছুটি শেষে গত ৩১ মে অফিস কার্যক্রম পুরো মাত্রায় চালু করা হয়েছে। অফিস চালু হওয়ার পর অফিসের প্রধান ফটক, জীবাণুনাশক টানেল, ভবনের ফটক, লিফটের সামনে ও করিডোরে মানবজট তৈরি হচ্ছে। স্টাফ বাসে গা-ঘেঁষে বসে কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অফিসে যাতায়াত করতে হচ্ছে।’

‘করোনা-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা, যেমনÑগাজীপুর, সাভার ও নারায়ণগঞ্জ থেকে বাসে করে যাতায়াতের দীর্ঘসময় ভ্রমণে কর্মকর্তাদের সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ছে। অনেক বিভাগের কর্মকর্তাদের একই কম্পিউটারে একাধিক জনকে কাজ করতে হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে অফিসের কাজে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক গুরুত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে।’

অফিস চালু হওয়ার আগেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সুপারিশ তৈরি করে গর্ভনরকে দিয়েছিল অফিসারদের সংগঠনটি। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় পরিচালিত হয় প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তা দিয়ে। এর সিংহভাগই স্টাফ কোয়ার্টারের বাইরে থাকেন। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে প্রস্তাব করা হয়, গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের নির্দিষ্ট জনবলকে এখনই পৃথক করে রাখতে হবে। কিছু কাজ রয়েছে, যা অন্য কাউকে দিয়ে হবে না। যদি এসব জনবল করোনা-আক্রান্ত হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রম ব্যাহত হবে। এজন্য একটি তালিকা করে তাদের সম্পূর্ণ আবাসিক ব্যবস্থাপনায় রাখতে হবে। একটি আবাসিক হোটেলে রাখা যেতে পারে। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে প্রণোদনা-সংক্রান্ত কাজে ভূমিকা রাখছে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপরভিশন, বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ, এইচ আর, অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং, পেমেন্ট সিস্টেসম ও আইটি বিভাগ। তাই এসব বিভাগ থেকে জনবল বাছাই করে রাখা প্রয়োজন।

আবাসিক ব্যবস্থাপনার বাইরে এখনই রোস্টার করে জনবলকে কাজে লাগানো উচিত। এতে করে স্বল্প জনবল দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক চালানো যাবে। যাদের বাসায় বসে কাজ করার সুযোগ রয়েছে, তাদের বাসায় কাজ করার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।

জানা গেছে, করোনা উপসর্গ নিয়ে অনেক কর্মকর্তাই এখন বাংলাদেশ ব্যাংকে যাচ্ছেন না। অফিসে অসুস্থ বোধ করে অনেকেই বাসায় চলে যাচ্ছেন। এতে অন্য কর্মকর্তাদের মাঝেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের করোনা-আক্রান্ত হওয়ার পরীক্ষার জন্য রাজধানীর আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজকে নির্বাচন করা হয়েছে। এ কলেজটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের করোনা পরীক্ষাটি করছে। কিন্তু পরীক্ষা করতে সাড়ে চার হাজার টাকা নিচ্ছে আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারাই এই অর্থ ব্যয় করছেন নিজেদের পকেট থেকে।

অনেক কর্মকর্তাই করোনা শনাক্তের জন্য পরীক্ষা দিয়ে এসেছেন, কিন্তু তাদের ফলাফল এখনও আসেনি। এমন সংখ্যাও অর্ধশতাধিক বলে জানা গেছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০