নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরের নেভিগেশন চ্যানেলে (কর্ণফুলী নদী) ফুটো হয়ে ক্রিস্টাল গ্রুপের এফবি ক্রিস্টাল-৮ নামের একটি ফিশিং জাহাজ ডুবে গেছে। গত মঙ্গলবার (৮ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা শাহ আমানত সেতু এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। তখন জাহাজে থাকা সব নাবিককে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। তবে জাহাজটি উদ্ধার না হওয়ায় কর্ণফুলী চ্যানেলে চলাচলরত সব জাহাজের জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কোর্স্টগার্ড পূর্ব জোন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমের মালিকানাধীন ক্রিস্টাল গ্রুপের জাহাজ এফবি ক্রিস্টাল-৮ নামের একটি ফিশিং জাহাজ ডুবে গেছে। জাহাজের ক্রুরা চিৎকার শুরু করলে আশেপাশের ট্রলার, শিপিং বোট গিয়ে তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনে। তবে জাহাজে মোট কতজন ক্রু ছিলেন তা এখনও জানা যায়নি। অপরদিকে দুর্ঘটনায় শিকার হওয়া জাহাজটি উদ্ধারের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের ট্রাগ বোর্ট (কাণ্ডারি) ও লিফটিং ভেসেল (বিএলভি লুসাই) জাহাজ দুটি যায়। তবে তারা ডুবে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধার করতে পারেনি। আর ডুবে যাওয়া জাহাজটি বন্দরের চ্যানেলের নেভিগেশনের হওয়া সব জাহাজ চলাচলে ঝুঁকি তৈরি করেছে বলে আশঙ্কা করেছেন বন্দর কর্মকর্তারা। এ কারণে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাহাজটি উদ্ধারের জন্য ক্রিস্টাল গ্রুপকে চিঠি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ক্রিস্টাল-৮ নামের একটি শিপিং বোট শাহ আমানত সেতুর কাছে কর্ণফুলী নদীতে নোঙর করা ছিল। জাহাজটিতে মেরামতের কাজ চলছিল। মেরামতের সময় রাত সাড়ে ৩-৪টার দিকে জাহাজের কোনো এক জায়গায় ফুটো হয়ে পানি উঠতে শুরু করে। পরে পানিতে তলিয়ে যায়, যা এখনও উদ্ধার করা যায়নি।
ডুবে যাওয়া জাহাজটির বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি ও ক্রিস্টাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম শেয়ার বিজকে বলেন, প্রথমবারের মতো আমাদের ফিশিং ভেসেল ক্রিস্টাল-৮ দুর্ঘটনায় পড়ে ডুবে গেছে। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিক থেকে এ জাহাজের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। পরে মেরামতের জন্য নেয়ার চেষ্টা করা হয়। আর এখন পর্যন্ত উদ্ধার কাজ শুরু করতে পারিনি। কয়েকদিন আগে বৃষ্টির সময় জাহাজটি অন্য আরেকটি জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা খায়। আর এখন মাছ ধরা বন্ধ।
তিনি আরও বলেন, আমাদের আটটি ফিশিং জাহাজ আছে। এর মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়। এ ধরনের নতুন জাহাজ কিনতে ৪০ কোটি টাকা দরকার। আর আমরা পুরোনো কিনেছিলাম ২০ থেকে ২২ কোটি টাকায়। সব মিলিয়ে ২৫ কোটি টাকার কাছাকাছি হবে।
উল্লেখ্য, ক্রিস্টাল গ্রুপ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণখেলাপি। এ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রিস্টাল স্টিল অ্যান্ড শিপ ব্রেকার্স লিমিটেড, ক্রিস্টাল ল্যান্ড মার্ক লিমিটেড, ক্রিস্টাল ফিশারিজ লিমিটেড, ইব্রাহিম ফার্মস লিমিটেড, ম্যাক্স ট্রেড লিমিটেড, এমআরএফ ফিশারিজ লিমিটেড, ফারুক অ্যান্ড সন্স লিমিটেড, হামিদা দোজা লিমিটেড, আইজি নেভিগেশনসহ ১৫টির মতো প্রতিষ্ঠান। যদিও ব্যবসায়িক মন্দার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ।
