কর্ণফুলী টানেল ঘিরে কৃষিজমিতে বিলবোর্ডের প্রতিযোগিতা

এনামুল হক নাবিদ, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) : উপমহাদেশের প্রথম টানেল নির্মিত হয়েছে দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। দেশের মেগা প্রকল্পের মধ্যে এটি অন্যতম। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বহুল প্রত্যাশিত ও স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। আগামী সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বহুল আকাক্সিক্ষত এ টানেল। প্রত্যাশিত এই টানেলের সংযোগপথের একপ্রান্ত হচ্ছে শিল্প জোন হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশপথ আনোয়ারা উপজেলা। এই মেগা প্রকল্পের একপ্রান্ত পতেঙ্গা হলেও অন্যপ্রান্ত হচ্ছে আনোয়ারা উপজেলা। এর ফলে টানেলের বহু লেনবিশিষ্ট সংযোগ সড়কের কারণে বহু কৃষিজমি ও ঘরবাড়ি এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে সংযোগ সড়কের পাশের বাকি কৃষিজমিতে পড়েছে বাণিজ্যিক বিলবোর্ডের চোখ।

দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে এরই মধ্যে আনোয়ারা হয়ে উঠেছে অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল। আনোয়ারা প্রান্তের টানেলের মূল প্রবেশপথে রয়েছে কাফকো-সিইউএফএল কারখানার-সংলগ্ন সাগর উপকূল। এই টানেলের মূল সংযোগ সড়কটি বন্দর, রাঙ্গাদিয়া, বৈরাগ ও চাতরী মৌজার অংশ দিয়ে গিয়ে যুক্ত হয়েছে পিএবি ছয় লেন সড়কে। মূলত এখানে শেষ হয়েছে টানেলের সংযোগ সড়কের মূল সড়কপথ। আর এই তিন কিলোমিটার সড়কের দুপাশের কৃষিজমিতে এখন অবৈধভাবে বাণিজ্যিক বিলবোর্ডে গড়ে ওঠার প্রতিযোগিতা চলছে। মূলত টানেল সংযোগ সড়কের জন্য এই জায়গা অধিগ্রহণ করলেও এই জমি ছিল তিন ফসলি কৃষিজমি। টানেল এখনও উদ্বোধন করা হয়নি, অথচ কৃষি আইন এবং সড়ক আইনকে তোয়াক্কা না করে লোভাতুর বিজ্ঞাপন ব্যবসায়ীরা বিলবোর্ড বসানোর প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। এছাড়া পিএবি ছয় লেন সড়কেও চলছে বাণিজ্যিক বিলবোর্ড স্থাপনের প্রতিযোগিতা।

কৃষিবিদরা মনে করছেন, এমনিতে মেগা প্রকল্পগুলোর কারণে এই উপজেলায় কৃষিতে খারাপ একটা প্রভাব পড়ছে। মেগা প্রকল্পগুলো কেন্দ্র করে এভাবে তিন ফসলি কৃষিজমিতে বিলবোর্ড বসাতে থাকলে কৃষিজমির ওপর আরও মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এ বিষয়ে কৃষকদের সচেতন হতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।

এদিকে টানেলের সংযোগ সড়কে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সংযোগ সড়কের প্রবেশপথে পিএবি সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে এক বিশাল বিলবোর্ড। এর আশেপাশে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি মাঝারি বিলবোর্ড। সংযোগ সড়কে একটু পরপর  আরও দুটি বিশাল আকৃতির বিলবোর্ড নির্মাণ করা হয়েছে, যা তিন ফসলি কৃষিজমির ওপর স্থাপিত। বিভিন্ন অসাধু বিজ্ঞাপনী সংস্থার মালিকরা টানেল কর্তৃপক্ষ, সওজ ও এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে এসব বিলবোর্ড স্থাপন করেছেন বলে জানা যায়। এছাড়া চাতরী চৌমুহনী বাজারের এক কিলোমিটার সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য বিলবোর্ড রয়েছে। এগুলো স্থাপিত হয়েছে টানেল সংযোগ সড়ক, পিএবি সড়ক ও সিইউএফএল সড়কের পাশে। শুধু যে অনুমোদনহীন সাইনবোর্ড বসানো হচ্ছে, তা নয়, অনেকে অনুমোদন নিয়েও নীতিমালা অনুসরণ করছে না।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক সড়ক পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী ড. এম শামসুল হক বলেন, দ্রুতগতির যান যেখানে চলাচল করবে, সেখানে এসব বিলবোর্ড বসানো অবৈধ। টানেলের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উভয় প্রান্তে মাটির ওপর যে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, তা এমনিতে ঝুঁকিপূর্ণ। একদিকে ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক তার পাশে আবার বিলবোর্ড থাকলে যান চলাচলে মারাত্বক দুর্ঘটনা ঘটবে। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, চালকের মাইন্ডটা বরাবর ফ্রেশ থাকতে হবে। তাকে চালকের ভূমিকায় থাকতে হবে।  এই যে বিলবোর্ড বসানো হচ্ছে, চালকের মাইন্ডটা যখন সেখানে চলে যাবে, তখন রাস্তার পাশে বিশাল আকারের এসব বিলবোর্ড থাকায় অনেক সময় দৃষ্টিুবিভ্রাট ঘটবে। তখন বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে। আর এখানে দুর্ঘটনা ঘটলে শুধু যান চলাচল ব্যাহত হবে তা নয়, অর্থনীতির ওপরও প্রভাব পড়বে। এছাড়া এসব বিলবোর্ড পর্যটকদেরও ক্ষেত্রেও প্রাকৃতিক দৃশ্যের ব্যাঘাত ঘটায়। আমরা দেখতে পাই, কক্সবাজার হাইওয়ে সড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ এই বিলবোর্ড। টানেল প্রকল্পের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে দ্রুতগতির যানচলাচলের সংযোগ সড়কে এ রকম বিলবোর্ড থাকলে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। কর্তৃপক্ষকে এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।

এদিকে বিলবোর্ডে টু লেট লাগানো নাম্বারে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচিত পাওয়ার পর প্রথমে অপার প্রান্ত থেকে ফোন কেটে দেয়া হয়। পরে আবার ফোন করা হলে তারা বলেন, বিলবোর্ড বসানোর জন্য টানেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নেয়া হয়েছে। এস ট্রেডিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই বিলবোর্ড স্থাপন করেছে বলে জানানো হয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কথা বলতে চাইলেও মোবাইল ফোনে সংযোগ না পাওয়ায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০