সিপিডির গবেষণার তথ্য

কর্মক্ষেত্রে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে বিডার উদ্যোগ পর্যাপ্ত নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক বছরগুলোয় শিল্প দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশ দ্রুতগতিতেই বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এ বৃদ্ধির ডামাডোলে তৈরি পোশাক খাতবহির্ভূত শিল্প খাতে নিরাপত্তার বিষয়টি একপ্রকার অনুচ্চারিতই থেকে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের ১৬ জুলাই বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নেতৃত্বে শিল্প খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে কিছু উদ্যোগ ঘোষণা করা হয়। তবে শিল্প দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিডার এসব উদ্যোগও সন্তোষজনক নয়।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংগঠনটির নিজস্ব কার্যালয়ে গতকাল গবেষণা প্রতিবেদনটি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হয়। খ্রিষ্টান এইডের সহযোগিতায় ‘কর্মক্ষেত্রে অগ্নি দুর্ঘটনা ও শ্রমিকের নিরাপত্তা: কোন পথে সংস্কারমূলক উদ্যোগ?’ শীর্ষক এ গবেষণা কর্মটি পরিচালিত হয়।

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও খ্রিষ্টান এইড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার নুজহাত জেবিন।

খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মূল প্রবন্ধে বলেন, স্থানীয় ও রপ্তানি বাজারের চাহিদার ভিত্তিতে দেশে তৈরি পোশাক খাতবহির্ভূত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান খাতগুলোর মধ্যে রয়েছেÑখাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, প্লাস্টিক পণ্য, টেক্সটাইল, প্রক্রিয়াজাত চামড়া, মৌলিক ধাতব পণ্য ও অধাতু খনিজ পণ্য। এসব খাতে কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা অনেকটাই সঙ্গীন এবং সেখানে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিও বিদ্যমান। তৈরি পোশাক কারখানা ব্যতীত অন্য যেসব স্থানে অগ্নি দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা বাড়ছে তার মধ্যে রয়েছে আবাসন, হাসপাতাল, বাজার ও শপিং মল, বাণিজ্যিক ভবন এবং অন্যান্য খাতের কারখানা। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামÑএ চারটি অঞ্চলে মূলত অগ্নিদুর্ঘটনা ও এর ফলে হতাহতের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। সেবা খাতের অবকাঠামোগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় অগ্নিদুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে শপিংমলে। এ ধরনের স্থাপনায় অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ সংঘটিত হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ঝুঁকি ২২ শতাংশ এবং স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে তা ১৯ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি পরিলক্ষিত হয়।

তিনি বলেন, বিডা যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে বেশকিছু পরস্পরবিরোধী চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। এ চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছেÑকারখানা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা, বিডা কর্তৃক নির্ধারিত কারখানা পরিদর্শন কমিটিতে যেসব দপ্তরের প্রতিনিধিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, কারখানা পরিদর্শনের সময় তাদের সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং জনবল স্বল্পতা ও অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে সরকারি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে না পারা। এছাড়া এ-সংক্রান্ত ডেটাবেজ ব্যবস্থাপনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হবে।

বিডার নেতৃত্বাধীন উদ্যোগগুলোর প্রধান উদ্দেশ্য হলোÑতৈরি পোশাক খাতবহির্ভূত খাতের অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও পরিবেশগত কমপ্লায়েন্সের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা এবং এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক পদক্ষেপের বিষয়ে পরামর্শ দেয়া। এ লক্ষ্যে সংস্থাটির নেতৃত্বে মোট ১০৮টি দল গঠন করা হয়েছে। এ দলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডাইফ), পরিবেশ অধিদপ্তর, বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরকারি দপ্তর ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এ ১০৮টি দলের মোট পাঁচ হাজার কারখানা পরিদর্শন করার কথা ছিল। এর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে ১ হাজার ৯০০টি কারখানা প্রাথমিকভাবে পরিদর্শনের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি এগুলোর মধ্যে মাত্র ৮৭৫টি কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে; যা মোট চিহ্নিত কারখানার মাত্র সাড়ে ১৭ শতাংশ। এ থেকেই বোঝা যায়, বিডার উদ্যোগের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়।

ডা. ফাহমিদা খাতুন স্বাগত বক্তব্যে কর্মক্ষেত্র ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সুশীল সমাজের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর বাংলাদেশে শ্রম অধিকার এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চিহ্নিত ত্রুটিগুলো সংশোধন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০