কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের মৃত্যু, দুর্ঘটনা, তাদের স্বজনের কান্না যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এ ধরনের মৃত্যুর হার কমাতে নেই কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা সংশ্লিষ্টদের। অবস্থার উন্নতি না দেখে এটাকে নিয়তি বলেও মনে করছে দুর্ঘটনায় নিহত বা আহতদের অনেক পরিবার। এ অবস্থায় গতকাল শেয়ার বিজে ‘গাজীপুরে ভবন থেকে পড়ে নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু’ শিরোনামে খবরটি অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। এতে জানা যায়, ওই এলাকার নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদ থেকে পড়ে ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এ ধরনের দুর্ঘটনা বাড়ছে। বিচ্ছিন্নভাবে দু-একজনের মৃত্যুর খবর আলোচিত না হলেও সারা দেশে সারা বছরে এ ধরনের খবর একত্র করলে নিশ্চয়ই তা বড় একটা সংখ্যায় দাঁড়াবে।
দেশে ভবন ধস কিংবা নির্মাণ বা অন্য কোনো কাজ করতে গিয়ে অনেক শ্রমিকেরই মৃত্যু হচ্ছে। এসব মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। অভিযোগ রয়েছে, তা হয় না। বছরে কতজন এ ধরনের দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন, তারও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান নেই। একজন শ্রমিকের মৃত্যুর ফলে তার পরিবারের কী পরিণতি হয়, তারও খবর তেমন আসে না। শুধু ওই সব পরিবারের সদস্যরাই হয়তো এটা মোকাবিলা করেন। যারা এ ধরনের কাজে পঙ্গু হন, তারা ওই পরিবারের বোঝা হয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেন। অনেকে বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি।
উল্লেখ্য, শিল্পোন্নত দেশে নিরাপদ কর্মক্ষেত্র শ্রমিকের অধিকার। ওইসব দেশে শ্রমিকের মৃত্যু বা দুর্ঘটনা রোধে নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের মৃত্যু হলে এ দায়ভার মালিককেই নিতে হয়। ব্রিটেনে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের প্রতিকারের জন্য নানা রাস্তা খোলা রয়েছে। চাইলে মালিকের বিরুদ্ধে মামলাসহ জরিমানা আদায় করতে পারেন শ্রমিক। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এদেশে কোনো শ্রমিকের মৃত্যু হলে তার ক্ষতিপূরণটুকুও না দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার সুযোগ খোঁজা হয় সাধারণত।
নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? শ্রমিক না মালিক। এ দায় কোনো পক্ষই এড়িয়ে যেতে পারে না। সচেতন হতে হবে শ্রমিকদেরও, যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনা কম হয়। মালিকদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি ভবন নির্মাণ বা এ রকম কাজে ঝুঁকি কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করা দরকার। এজন্য শ্রমিকদের প্রশিক্ষণেরও বিকল্প নেই। শ্রমিক ও মালিকদের সচেতন করতে গণমাধ্যমও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কর্মপরিবেশ উন্নতকরণে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি মনিটরিং জোরদার করবেন সংশ্লিষ্টরা এটাই প্রত্যাশা।