সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু আওয়ামী লীগের শাসনামালনে সরকারি কর্মচারীরা এসব আইন-কানুসের কোনো তোয়াক্কা করেননি। এমনকি সম্পদের হিসাব দাখিলের বিষয়ে উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা দেয়া হলেও অদৃশ্য কারণে সে নির্দেশনা প্রতিপালন করা হয়নি। সরকারি কর্মচারীদের বিষয়ে হাইকোর্টের আরও বেশকিছু নির্দেশনা প্রতিপালন করা হয়নি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন করে আলোচনায় আসে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের বিষয়টি। দেশে দুর্নীতি রোধ করা এবং সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দাখিলের কোনো বিকল্প নেই।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব দিতে হবে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, আইনানুযায়ী সব কর্মচারীকে প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে হবে। তবে এ বছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তা দাখিল করতে হবে। নির্ধারিত ছকে (ফরম) নিজ নিজ মন্ত্রণালয় বা দপ্তরে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে হবে। এটি সব কর্মচারীর জন্যই বাধ্যতামূলক।
পৃথিবীতে বাংলাদেশের মতো খুব কমসংখ্যক দেশ আছে, যেখানে সরকারি চাকরি খুবই আকর্ষণীয়। মূলত আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতার চেয়ার টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে আমলাতন্ত্র ও পুলিশের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। এর ফলে সরকারি কর্মচারীরা একপ্রকার ধরাকে সরা জ্ঞান করতে শুরু করে। যে নাগরিকদের করের অর্থে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়, সেই নাগরিকরা সরকারি দপ্তরগুলোয় সেবা নিতে গিয়ে সর্বদা হয়েছে নিগৃহীত। গণতন্ত্রের মূল কথাই হচ্ছে সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। আওয়ামী লীগ সরকার সেই চরিত্র পুরোপুরি উল্টে দিয়েছিল। এতে করে প্রতিটি রাষ্ট্রীয় সেবা পেতে নাগরিকদের গুনতে হতো ঘুষ। এখনও সেই পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে। সেই সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে আইনি বাধ্যবাধকতা মোতাবেক সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দাখিলের নির্দেশ জারি করে বর্তমান সরকার। এ নির্দেশ যাতে যথাযথভাবে পালিত হয়, সে বিষয়টি সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি যেসব কর্মচারীর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনকে একটি পেশাদার দুর্নীতিবিরোধী কমিশন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নাগরিকদের করের প্রতিটি পয়সা যাতে সঠিকভাবে রাষ্ট্রের কল্যাণে ব্যয় করা হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিতে সরকারি কর্মচারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।