ক্রাউড সোর্সিং বা অনলাইনে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সি-ওয়ার্ক। তথ্যপ্রযুক্তিতে তরুণদের পাশাপাশি দক্ষ কর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে ক্রমেই সমৃদ্ধ হচ্ছে ক্রাউড সোর্সিং মোবাইল অ্যাপ প্রতিষ্ঠান (সি-ওয়ার্ক)। ২০১৭ সালের আগস্টে যাত্রা করে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অ্যাপ ডাউনলোড হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার, যেখানে প্রতিমাসে কাজ করছেন ১৫ হাজারেও বেশি কর্মী। ক্রাউড সোর্সিংয়ে গুগল র্যাংকিংয়ে সপ্তম স্থানে জায়গা দখল করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
জানা যায়, সি-ওয়ার্ক হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েডভিত্তিক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। এর মাধ্যমে কন্ট্রিবিউটররা ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ করেন। যেমনÑস্থানীয় সংবাদ। সাংবাদিকরা ক্রাউড সোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সংবাদ প্রদান করে থাকেন। এছাড়া রয়েছে ব্লগ লিখন, সাহিত্য, প্রবাসীর কথা, কনটেন্ট মার্কেটিং, দোকান সার্ভে, লিড জেনারেশন ও ছবি দেখে লেখা। অর্থাৎ বিভিন্ন ডেটা এন্ট্রির কাজগুলোও করা হয় সি-ওয়ার্কে। বিনিময়ে কর্মীদের কাজের ওপর সম্মানী দেওয়া হয়।
সি-ওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোস্তফা আল মুমিন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম ভালো কিছু করার। দেশের বাইরে আমেরিকাতে ছিলাম। যে কারণে সব সময় চিন্তা করতাম দেশের মানুষের জন্য কিছু করার।
প্রযুক্তির যুগে বিশ্বব্যাপী অনেক কিছুতে পরিবর্তন এসেছে। ইচ্ছা ছিল প্রযুক্তির মাধ্যমে এমন কিছু করব মানুষ যাতে ঘরে বসেই টাকা আয় করতে পারে। বর্তমানে আমাদের অ্যাপে প্রতিমাসে ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সি-ওয়ার্কের যাত্রা শুরু ২০১৭ সালের আগস্টে। অল্প সময়ে এত ভালো সাড়া পাব বুঝতেই পারিনি। দেশের বাইরে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে কাজ পেয়েছি। সামনে আরও কিছু ডেটা এন্ট্রির কাজ আসছে বলে জানান তিনি।
সময়ের সঙ্গে বাংলাদেশে বিপিও ক্রমেই জোরদার হতে শুরু করেছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নয়নে সঠিক নির্দেশনা পেলে সি-ওয়ার্কের মতো ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
তারা জানান, বাংলাদেশে বিপিও একটি নতুন সম্ভাবনার নাম। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বিপিওর বাজার বছরে যেখানে ৫০ হাজার কোটি ডলার, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১০০ কোটি ডলারের বিপিও বাজারও দখল করতে পারেনি।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, বাংলাদেশ সবেমাত্র ১৮ কোটি ডলারের বিপিও বাজার দখলে আনতে পেরেছে। বাংলাদেশ যদি বিপিও খাতে যথার্থ নজর দেয়, তবে সহজেই শত শত কোটি ডলারের বিপিও বাজার দখল করতে পারে। পোশাকশিল্প খাতের মতো বিপিও খাতও হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস। আউট সোর্সিং বা ক্রাউড সোর্সিংয়ে সুবিধা হচ্ছে কর্মীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকেই আয় করতে পারে।
২০০৯ সালে বাংলাদেশের বিপিও খাত মাত্র ৩০০ কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এ খাতে তিন হাজার কর্মী কাজ করছেন। এ খাত ক্রমেই ব্যবসায়িক খাতে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে এ খাতে এক লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে এবং ১০০ কোটি ডলার আয়ের পরিকল্পনা করছে সরকার।
ক্রাউড সোর্সিং বা অনলাইনে সেবাদানকারী দেশগুলোর মধ্যে সারা বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের অন্যতম অভিজাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও পাঠদান বিভাগ অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের (ওআইআই) সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে ভারত অন্যসব দেশের চেয়ে এগিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে, দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ এবং তৃতীয় স্থানে যুক্তরাষ্ট্র।
অনলাইনে শ্রমদান বা কাজের ক্ষেত্রে ভারত ২৪ শতাংশ অধিকার করেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১৬ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্র ১২ শতাংশ অধিকার করেছে। পাকিস্তান, ফিলিপাইন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, রাশিয়া, ইতালি ও স্পেনও বাংলাদেশের পেছনে অবস্থান করছে। প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী ইন্টারনেটে ফ্রিল্যান্স কাজ করা এবং ডিজিটালি তা ছাড় করানোর বৈশ্বিক বাজার সৃষ্টি হয়েছে এবং এই বাজার দ্রুত বাড়ছে। শীর্ষ পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লিখন ও অনুবাদ গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনলাইনে ফ্রিল্যান্স কাজের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের চারটি বৃহত্তম প্ল্যাটফরম থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে তাদের এই তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছে।
ক্রাউড সোর্সিংয়ে বিশ্বপরিসরে দ্বিতীয় স্থানে থাকা তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার চিত্রই তুলে ধরেছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশী ভারত প্রথম স্থানে থাকলেও দুই দেশের জনসংখ্যার বিশাল পার্থক্য বিবেচনায় আনলে বাংলাদেশই সার্বিক বিবেচনায় এগিয়ে। দেশে দিন দিন বেড়েই চলছে ক্রাউড সোর্সিং কাজের পরিধি। কয়েক বছর আগেও ক্রাউড সোর্সিংয়ের বৈশ্বিক মানচিত্রে বাংলাদেশের নাম ছিল না। সেখানে এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, সুলভ মূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হলে দ্রুত সমৃদ্ধ হবে আমাদের ক্রাউড সোর্সিং সংস্কৃতি। ভারতে এমনকি আমাদের দেশের ছাত্ররাও ক্রাউড সোর্সিং কাজ করছেন। কিন্তু বর্তমানে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রছাত্রীর জন্য পর্যাপ্ত ইন্টারনেট সুবিধা নেই। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে নেই ইন্টারনেট সংযোগ। দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা ও বিদ্যুৎসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধানতম খাতে পরিণত হতে পারে ক্রাউড সোর্সিং খাত।
হামিদুর রহমান