কর্মসংস্থান বাড়বে ১৫ হাজার ৯ খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে দেশবন্ধু

নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন করে নয় খাতে বিনিয়োগ করছে দেশবন্ধু গ্রুপ। এর মধ্যে রয়েছে চিনি, জুতা, ব্যাগ, তেল শোধনাগার, স্টিল, খাদ্যপণ্য, ইলেকট্রিক ভেহিকল, ইকো ব্রিকস ও ব্যাটারি। এতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে, যাতে প্রায় ১৫ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। নতুন কারখানা স্থাপন ও কারখানা সম্প্রসারণে এই টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে এবং কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ পর্যায়ে রয়েছেন বলে গ্রুপের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দেশবন্ধু গ্রুপ দেশে চিনি, কোমল পানীয়, পলিমার, খাদ্যপণ্য, প্যাকেজিং, সিমেন্ট, স্বাস্থ্যসেবা, সুতাসহ বেশ কয়েকটি খাতে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এই গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

দেশবন্ধু গ্রুপের  সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑদেশবন্ধু সুগার মিলস, দেশবন্ধু বেভারেজ, দেশবন্ধু পলিমার, দেশবন্ধু কনজুমার, দেশবন্ধু প্যাকেজিং, দেশবন্ধু সিমেন্ট মিলস, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস। এছাড়া আরও কয়েকটি খাতে এই গ্রুপের বিনিয়োগ রয়েছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে চিনির চাহিদা বেড়েছে। দেশবন্ধু সুগার চিনির চাহিদার বড় একটি অংশ জোগান দিচ্ছে। চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি চিনি রপ্তানির লক্ষ্যে বর্তমান মিলের পাশাপাশি ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ডের এক হাজার ৫০০ টন ক্যাপাসিটির নতুন আরেকটি মিল স্থাপন করবে দেশবন্ধু। সে জন্য মেশিনারিজ সিলেকশন, প্লান্ট পরিকল্পনা ও ফিজিবিলিটি স্টাডি করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এতে দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে, যা ২০২৬ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের কাজ শেষ হবে। ৫০০ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে শতভাগ রপ্তানি উপযোগী এফআইবিসি ব্যাগ উৎপাদনের জন্য ইতোমধ্যে অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। সম্পূর্ণ ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড অটোমেটেড মেশিনারিজ দ্বারা ২০২৪ সালের জুনে উৎপাদন শুরু হবে। এতে দুই হাজার মানুষের নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। নরসিংদীর পলাশ  উপজেলার তালতলীতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা

বিনিয়োগের মাধ্যমে ওয়েস্টার্ন ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি স্থাপন করে পুরোদমে উৎপাদন চলছে। নরসিংদীর মালিতায় আরও ৫০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন অপরিশোধিত তেল শোধনাগার স্থাপন ও উৎপাদন পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে প্রায় ৫০ একর জায়গাজুড়ে দেশবন্ধু স্টিল রি-রোলিং মিলস, কনজুমার গুডস, ইলেকট্রিক ভেহিকলস অ্যাসেম্বলি প্লান্ট, ইকো ব্রিকস ইন্ডাস্ট্রি, লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি প্লান্টের জন্য দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, যা ২০২৮ সালের ভেতরে পুরোদমে উৎপাদন চালু হলে। এতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

গ্রুপের বাস্তবায়নাধীন আরও যেসব প্রকল্প রয়েছে, সেগুলো হলোÑ মোংলা সমুদ্র বন্দরের পাশেই পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোন, মোংলায় ৩৩ একর জায়গাজুড়ে পিএসএফ অ্যান্ড পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজ স্থাপনের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে টেকনিক্যাল পার্টনার ক্যামট্যাক্স সাংহাই (চায়না) ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড এবং চায়না ন্যাশনাল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (সি অ্যান্ড সিইসি) সঙ্গে ৫০০ মিলিয়ন ইউএসডি ডলার বিনিয়োগ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এখানে প্রায় দুই হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া অন্যান্য ব্যবসায়িক কলেবর বৃদ্ধির পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ডেভেলপমেন্ট অব প্রাইভেট ইকোনমিক জোন (পিপিপি), দেশবন্ধু ফার্মাসিউটিক্যালস, সোলার প্যানেল ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট, অ্যানিমেল ফিড ইন্ডাস্ট্রি ছাড়াও দেশের ৬৪ জেলায় মেডিকেল সেন্টার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে।

দেশবন্ধু গ্রুপের পলাশ এরিয়ার আবাসিক পরিচালক প্রকৌশলী এবিএম আরশাদ হোসেন বলেন, প্রাণঘাতী মাহামারি কভিডে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশই বিপর্যস্ত। এমন বাস্তবতায় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন অব্যাহত রেখে দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে দেশবন্ধু গ্রুপ। শুধু ব্যবসায়িক লাভের জন্য নয়, দেশের মানুষের পাশে থাকার জন্য চিনি, কনজুমার ফুড, বেভারেজসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উৎপাদন করে যাচ্ছে। রপ্তানিকৃত সব ধরনের পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে দেশবন্ধু গ্রুপ। দেশবন্ধু চিনিকলটি পুরোনো এবং দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী চিনিকল। বর্তমানে মিলটির দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা দেড় হাজার টন। অর্থাৎ বছরে সাড়ে চার লাখ টন চিনি উৎপাদিত হচ্ছে কারখানায়। দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশবন্ধু চিনিকল ইউরোপীয় কমিশনের ইবিএ’র আওতায় ইউরোপে সর্বপ্রথম দেশি চিনি রপ্তানি শুরু করে এবং তা অব্যাহত রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে দেশবন্ধু গ্রুপের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, উন্নতমানের রিফাইন্ড সুগার, বেভারেজ তৈরিতে যেসব কাঁচামাল ব্যবহƒত হয়, তার সবই আমরা অস্ট্রেলিয়া, ইতালি ও ব্রাজিলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে থাকি। দেশবন্ধু বেভারেজের নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে দেশবন্ধু মিনারেল ওয়াটার, দেশবন্ধু কোলা, ফ্রেন্ডস আপ, দেশবন্ধু লিচি, দেশবন্ধু জিরা, দেশবন্ধু অরেঞ্জ, দেশবন্ধু ম্যাংগো জুস, গুরু ও নিয়নসহ মোট ১৮টি ফ্লেভার। তিনি বলেন, দেশবন্ধু বেভারেজে উৎপাদিত পণ্য দেশে বিক্রি ছাড়াও মধ্য এশিয়ার উন্নত দেশ দুবাই, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, গ্রিসেও রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া নুডলস তৈরির কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল, যা কভিড মহামারির কারণে হয়নি। অচিরেই তা বাস্তবায়িত হবে আশা করা যায়।

দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, এক সময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে আজকের মধ্যম আয়ের বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত; যা দেশের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের হাত ধরেই হয়েছে। দেশবন্ধু গ্রুপ চেষ্টা করছে দেশের ও জনগণের জন্য কিছু করার। এই গ্রুপের বিনিয়োগে বর্তমানে ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। নতুন পরিসরে আরও ব্যাপক বিনিয়োগের চেষ্টা চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০২৮ সালে কর্মসংস্থান ৪০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। দেশবন্ধু গ্রুপের বেশিরভাগ পণ্য রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। আগামী চার বছর পর বছরে এক বিলিয়নের বেশি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে দেশবন্ধু গ্রুপ। তিনি বলেন, ঢালাওভাবে দেশের সব ব্যবসায়ী খারাপ নন, আবার ভালোও নন। দেশবন্ধু গ্রুপ সরকারের রুগ্ণ শিল্প বেসরকারীকরণের মাধ্যমে নিয়ে তা চালু করে এক অনন্য নিদর্শন সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রসঙ্গে গোলাম মোস্তফা বলেন, দুর্বল অবকাঠামো ও সেবা খাতের ধীরগতির কারণে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত সুদে ঋণ নিয়ে কারখানাগুলো বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে, তা থেকে আয় করে, ব্যাংকে ফেরত দেয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। স্বল্প সময়ে ফেরত দেয়া কঠিন হয়ে যায়।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০