নিজস্ব প্রতিবেদক: কর অঞ্চলে মাসব্যাপী করমেলা শুরু হয়েছে। ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি কর অঞ্চলে আয়কর মেলার পরিবেশে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। নির্বিঘেœ রিটার্ন দাখিল ও ই-টিআইএন নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হেল্প ডেস্ক থেকে দেয়া হচ্ছে রিটার্ন পূরণের পরামর্শ। রিটার্ন জমার সঙ্গে সঙ্গে দেয়া হচ্ছে প্রাপ্তিস্বীকারপত্র। আয়কর ফরম ও নির্দেশিকাসহ সব ফরম বিনা খরচে দেয়া হচ্ছে। করদাতাদের জন্য মেলায় এবার নতুন সংযোজন অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বা ই-রিটার্ন। প্রতিটি কর অঞ্চলে ই-রিটার্ন সেবাদানের জন্য আলাদা বুথ স্থাপন করা হয়েছে। অনলাইনে কীভাবে নিবন্ধন ও রিটার্ন পূরণ করতে হবে, সেজন্য টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে দেখানো হচ্ছে।
গতকাল থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এ মেলা। মেলার প্রথম কয়েক দিন রিটার্ন দাখিল কম হবে। তবে শেষ সময়ে করদাতাদের ভিড় বাড়বে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
সেগুনবাগিচায় কয়েকটি কর অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, কোনো কোনো কর অঞ্চলের অফিসের ভেতর, আবার কোনো কর অঞ্চল অফিসের নিচে ফাঁকা জায়গায় বুথ স্থাপন করা হয়েছে। আয়কর মেলার আদলে বুথগুলো সাজানো হয়েছে। রিটার্ন গ্রহণ, ই-টিআইএন নিবন্ধন ও পুনর্নিবন্ধন বুথ এবং ই-রিটার্ন বা অনলাইনে রিটার্ন হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। হেল্প ডেস্ক থেকে বিনা খরচে আয়কর ফরম ও নির্দেশিকা দেয়া হচ্ছে। ই-রিটার্ন ডেস্ক থেকে ই-টিআইএন ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে কীভাবে নিবন্ধন করতে হবে এবং এ নিবন্ধন দিয়ে কীভাবে ঘরে বসে অনলাইনে রিটার্ন দেয়া যাবে, তা কর্মকর্তারা দেখিয়ে দিচ্ছেন। এছাড়া কোনো কোনো কর অঞ্চলে ই-রিটার্ন বুথে এ-সংক্রান্ত টিউটোরিয়াল দেখানো হচ্ছে। তবে মেলায় আগত তরুণ করদাতাদের মধ্যে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের আগ্রহ বেশি। ঢাকার বাইরেও কর অঞ্চলগুলোয় মেলার আয়োজন ও সেবা দেয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে কর অঞ্চল-৩ ঢাকার মোতাহার লজে আয়কর রিটার্ন গ্রহণ ও তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) শাহীন আক্তার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কমিশনার মো. নাজমুল করিম। উদ্বোধন শেষে শাহীন আক্তার আয়কর মেলার পরিবেশে রিটার্ন গ্রহণের বিভিন্ন বুথ, তথ্য ও সেবা কেন্দ্র, ই-রিটার্ন হেল্প ডেস্ক প্রভৃতি পরিদর্শন করেন।
কর অঞ্চল-১০-এর কমিশনার মো. লুৎফল আজীম শেয়ার বিজকে বলেন, রিটার্ন গ্রহণ, ই-টিআইএন ও সেবা বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এ বছর নতুন হিসেবে ই-রিটার্ন বুথ স্থাপন করা হয়েছে। প্রথম দিন থেকেই আমরা সব ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। মেলার পরিবেশে করদাতারা রিটার্ন দাখিল, ই-টিআইএন গ্রহণ ও ই-রিটার্ন-সংক্রান্ত সেবা পাচ্ছেন।
কর অঞ্চল-১-এর কমিশনার একেএম বদিউল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, রিটার্ন গ্রহণ, ই-টিআইএন সেবায় পাঁচটি ও ই-রিটার্ন দাখিলে একটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। প্রথম দিন মেলায় আগত করদাতাদের ফুল দিয়ে আমরা বরণ করেছি। মেলা থেকে অল্প সময়েই করদাতারা রিটার্ন দাখিল ও সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। ই-রিটার্ন বুথে করদাতাদের ভিড় ছিলো। বুথ থেকে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের জন্য নিবন্ধন করে দেয়া হচ্ছে, এছাড়া অনলাইনে রিটার্ন কীভাবে পূরণ করবেন ও জমা দেবেনÑএর জন্য পর্দায় একটি টিউটোরিয়ালে তা দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলায় এক ছাতার নিচে করদাতারা সব সেবা নিতে পারছেন।
কর অঞ্চল-১১-এর উপকর কমিশনার আল আমিন শেয়ার বিজকে বলেন, এ কর অঞ্চলে পাঁচটি রিটার্ন বুথ ও একটি সেবাকেন্দ্র বুথ স্থাপন করা হয়েছে। মোট রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৩৯৭টি, আয়কর আদায় হয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। প্রথম দিন ভালো সাড়া পেয়েছি। রিটার্ন-সংক্রান্ত ছাড়াও করদাতারা ই-টিআইএন-সংক্রান্ত সেবা, যেমন ই-টিআইএন নাম-ঠিকানা সংশোধনের জন্য বেশি আসছে। ই-রিটার্ন সেবা বুথ স্থাপন করা হয়েছে। কীভাবে অনলাইনে নিবন্ধন নিতে হবে, রিটার্ন পূরণ ও দাখিল করতে হবে, সেই সেবাই বেশি নিচ্ছে।
অন্যদিকে, ঢাকার বাইরে কর অঞ্চলগুলো করমেলার আয়োজন করেছে। কোনো কোনো কর অঞ্চল উপজেলা কর অফিসে করমেলার আয়োজন করেছে। বগুড়া কর অঞ্চলের আওতাধীন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় মেলার উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মো. লুৎফর রহমান তালুকদার। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য আনয়ন ও ধারাবাহিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে সবার কর দেয়া উচিত। মেলায় সব ধরনের করসেবা দেয়া হচ্ছে। সবাইকে মেলায় এসে রিটার্ন দাখিল ও সেবা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের রিটার্ন দাখিলের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ সচিবালয় ও অফিসার্স ক্লাবে রিটার্ন গ্রহণ বুথ ও হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। গতকাল শুরু হয়ে শেষ হবে ১৪ নভেম্বর। এছাড়া সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের জন্য ঢাকা সেনানিবাসের সেনা মালঞ্চে ৯ ও ১০ নভেম্বর দুই দিন রিটার্ন গ্রহণ ও কর বিষয়ে যাবতীয় তথ্য সেবা দেয়া হবে।