Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 11:57 am

কর অবকাশ ও ইকোনমিক জোন চায় ট্যানারি শিল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রফতানি খাত হিসেবে চামড়া রফতানিকে উৎসাহিত করতে সাভারে স্থানান্তরিত ট্যানারি এলাকাকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো কর সুবিধা অথবা এ শিল্পকে আগামী ১০ বছর কর অবকাশ সুবিধা প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। অপরদিকে বন্ডের হয়রানি বন্ধ এবং কর অবকাশ সুবিধা প্রদানের সুপারিশ করেছেন চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা রফতানিকারকরা।
গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় কৃষি ও রাসায়নিক খাতসংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতারা এসব সুপারিশ করেন। প্রাক-বাজেট আলোচনায় কৃষি ও রাসায়নিক খাতের বেশ কয়েকটি সংগঠন অংশ নেয়। সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সভাপতিত্ব করেন।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ বলেন, পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে সম্প্রতি ১৫৫টি ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে। ১০২টি কারখানা উৎপাদন শুরু করেছে, কিন্তু অবকাঠামো নির্মাণের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। সাভারে শিল্পনগরীতে স্থানান্তরের চুক্তিতে সাত থেকে ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সে সুবিধা আমরা পাই না। শিল্পনগরী প্রায় ২০০ একর জমির ওপর। এ শিল্পনগরীকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করে কর সুবিধা দিলে এ শিল্প এগিয়ে যাবে। ১৫৫টি ট্যানারির মধ্যে ৩০টি ট্যানারি বন্ড সুবিধা ভোগ করছে। বাকিগুলো আবেদন করার পরও বন্ড সুবিধা পাচ্ছে না। বন্ড সুবিধা দিলে রফতানি বেড়ে যাবে। বন্ড সুবিধার বাইরে যেসব ট্যানারি ৩১টি রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে তাতে ৩০-৩২ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হয়। এসব রাসায়নিক দ্রব্য চামড়া ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা হয় না। এ রাসায়নিকের অভাবে গত বছরের চেয়ে ৩১ শতাংশ রফতানি কমে গেছে। তাই এ রাসায়নিক দ্রব্যের শুল্ক-কর কমানো দরকার। যন্ত্রাংশ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রদান ও বন্ডের হয়রানি বন্ধ করতে সাভারে একটি বন্ডেড ওয়্যারহাউজ স্থাপনের সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, যেসব ট্যানারি স্থানান্তরিত হয়েছে, তাদের সুবিধা দিতে হবে। রফতানি উৎসাহিত করতে যারা বন্ড সুবিধার জন্য আবেদন করেছে, যাচাই করে তা দেওয়া হবে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দিলে আমরা দেব। শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আসলে আমরা বন্ডেড ওয়্যারহাউজ দেব।
লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নাছির খান বলেন, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পে প্রায় ২০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। ২০ শতাংশ আমদানি করতে শুল্ক ও বন্ডে হয়রানির শিকার হতে হয়, যাতে রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অফিস আদেশের মাধ্যমে বন্ড কমিশনারেট আমাদের হয়রানি করে। এ খাতে ১৪০টি কারখানার মধ্যে ২০টি চলছে, বন্ড ওয়্যারহাউজের জন্য কিছু বন্ধ হয়ে গেছে ও কিছু বন্ধ হচ্ছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করার সুপারিশ করেন তিনি। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বন্ডের অপব্যবহার হয়। অনেকে বন্ড সুবিধায় কাঁচামাল এনে খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়, সেজন্য বন্ডের এ কড়াকড়ি। বন্ডের বিষয়ে আলাদা নজর দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সফিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, বিস্কুটের আমদানির শুল্ক অনেক হ্রাস করা হয়েছে। মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে নি¤œমানের বিস্কুট নিয়ে আসা হয়। স্থানীয়ভাবে উন্নত বিস্কুট তৈরি করে কম দেওয়ার পরও আমরা আমদানি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছি না। সেজন্য স্থানীয় বিস্কুট শিল্প সুরক্ষায় ক্র্যাকারস, ডাইজেস্টিভ, চকোলেট বিস্কুট ট্যারিফ মূল্য ১০০ টাকা, ক্রিম বিস্কুট ৮০ টাকা, সাধারণ বিস্কুট ও ড্রাইকেক ৬৫ টাকা করার সুপারিশ করেন তিনি। হয়রানি বন্ধে কোম্পানির একটি ভ্যাট নিবন্ধন চালু ও ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর সুপারিশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সচিব এম সামসুজ্জামান বলেন, রংকে বিলাসী পণ্য বিবেচনায় নিয়ে স্থানীয় রং উৎপাদনের ওপর পাঁচ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। উন্নত দেশে সম্পূরক শুল্ক নেই। সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে ব্যবহার ও রাজস্ব বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্রেড বিস্কুট প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি মো. জালাল উদ্দিন বলেন, সারা দেশে প্রায় সাত হাজার ম্যানুয়াল ব্রেড বিস্কুট কারখানা রয়েছে। একেবারে প্রান্তিক মানুষ আমাদের ভোক্তা। কিন্তু গতবছর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সেজন্য এ ভ্যাট প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমরা আয়করদাতার মতো ভ্যাটদাতাকেও চিহ্নিত করতে চাই। সেজন্য আগামী ২০১৯ সালের আগেই ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আয়করদাতার সংখ্যার চেয়ে বেশি নিয়ে যেতে চাই।