নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান সহকারী নিয়োগ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন উচ্চ আদালত। বৃহস্পতিবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলনের আদালত এই স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া কর অঞ্চলের প্রতি রুল জারি করেছেন। কর বিভাগের বিক্ষুব্ধ কর্মচারীরা এই রিট করেন। কর্মচারীদের দাবি, আয়কর অফিসে ‘প্রধান সহকারী’ পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সার্কেলের যাবতীয় রিপোর্ট প্রধান সহকারী তৈরি করেন।
ফলে পদটি শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। জনপ্রশাসনের কমন নিয়োগ বিধিমালা ও আয়কর বিভাগের বিধিমালা অনুযায়ী, প্রধান সহকারী পদটি পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। কাস্টমস বিভাগ এই নির্দেশনা পুরোপুরি মেনে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করছে। আয়কর বিভাগের কয়েকটি কর অঞ্চলও একই বিধিমালা অনুসরণ করছে। কিন্তু নতুন কর অঞ্চলসমূহ এই নিয়ম মানছে না। না মেনে ইতোমধ্যে বেশিরভাগ নতুন কর অঞ্চল প্রধান সহকারী পদে সরাসরি নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। কর্মচারীদের দাবি, প্রধান সহকারী সরাসরি নিয়োগ হলে পদোন্নতির পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. মাসুদ রানা। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ২৬ মে রোববার রিট করা হয়েছে। কমন নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯ অনুযায়ী আয়কর বিভাগে উচ্চমান সহকারী থেকে প্রধান সহকারী পদে পদোন্নতির মাধ্যমে এই পদ পূরণ করা হয়। কিন্তু আয়কর বিভাগ তা অমান্য করে ১০টি কর অঞ্চল অন্তত ২০০ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলন এর আদালত প্রধান সহকারী পদে নিয়োগ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের প্রতি রুল জারি করেছেন।
কর বিভাগের কর্মচারীরা জানিয়েছেন, নতুন কর অঞ্চলে প্রধান সহকারী সরাসরি নিয়োগ করা হচ্ছে। এর ফলে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী তো কখনও আয়কর অফিসে কাজ করেননি। কর আদায় তো দূরের কথা, তিনি কীভাবে রিপোর্ট তৈরি করবেন? এই পদে সরাসরি নিয়োগের ফলে অফিস সহকারী থেকে শুরু করে উচ্চমান সহকারী পর্যন্ত পদগুলোতে কর্মরতরা আগামী ২০ বছরেও বা কখনও পদোন্নতি পেয়ে কর পরিদর্শক হতে পারবেন না। সেজন্য নতুন কর অঞ্চলে প্রধান সহকারীর পদ পূরণে পুরোনো কর অঞ্চল থেকে পদোন্নতি দিয়ে এই পদ পূরণে দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চল বিধিমালা না মেনে প্রধান সহকারী পদে সরাসরি নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
আয়কর বিভাগের সূত্রমতে, প্রতিটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিয়োগ বিধিমালা রয়েছে। তবে কমন পদগুলোর জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কমন নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। আয়কর বিভাগ নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৬-এ মোট ৪১টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে
নয়টি পদ কমন নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯ অনুযায়ী নিয়োগ ও পদোন্নতি যোগ্য পদ। বাকি ৩২টি পদ আয়কর বিভাগের নিজস্ব নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৬ অনুযায়ী নিয়োগ ও পদোন্নতি যোগ্য। সকল অধিদপ্তর, পরিদপ্তর বা দপ্তরের নিয়োগ বিধিমালায় কমন পদগুলো অর্থাৎ কমন নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯ অনুসরণ করে নিয়োগ ও পদোন্নতি কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। আয়কর বিভাগে নতুন কর অঞ্চলসমূহে সাঁটলিপিকার কাম-কম্পিউটার অপারেটর, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, অফিস সহায়ক পদে কমন নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রধান সহকারী পদে কমন নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে না। এই বিধিমালা অনুযায়ী ‘প্রধান সহকারী’ পদটি সরাসরি নয়, শতভাগ পদোন্নতি যোগ্য পদ।
এনবিআর সূত্রমতে, কাস্টসম রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিশনারেট, কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, ঢাকা (উত্তর) ‘প্রধান সহকারী’ পদটির জন্য কমন নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণ করে জিও জারি করেছে। এছাড়া কর অঞ্চল-৩, চট্টগ্রাম ও কর অঞ্চল সিলেট ‘প্রধান সহকারী’ পদটি পূরণে কমন নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণ করে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
বিভিন্ন কর কর্মচারীরা বলছেন, কর অঞ্চল সিলেট ও কর অঞ্চল-৩, চট্টগ্রাম কমন নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণ করে প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী পদের জন্য নিয়োগ ও পদোন্নতি কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। তাহলে নতুন কর অঞ্চলে এই দুইটি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শতভাগ নিয়োগ দেয়া হচ্ছে কেন? একই ডিপার্টমেন্টে আলাদা নিয়ম কেন? কমন নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী নিয়োগের ছাড়পত্র থাকা সত্ত্বেও সরাসরি প্রধান সহকারী পদে নিয়োগ দিলে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সকল পদে প্রায় ৯৯ শতাংশ পদোন্নতির পথ বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে তারা কখনও কর পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পাবেন না। কারণ সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান সহকারীরা সবাই পদোন্নতিপ্রাপ্তদের আগে সিনিয়র হয়ে যাবেন। এনবিআর চাইলে বিভিন্ন কর অঞ্চল থেকে পদোন্নতি দিয়ে নতুন কর অঞ্চলে এই পদ পূরণ করতে পারে।
কর্মচারীরা এনবিআরের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, শতভাগ নিয়োগ না দিয়ে পুরোনো কর অঞ্চল থেকে অফিস সহকারী পদে যারা ১০-১২ বছর চাকরি করছেন, তাদের ‘উচ্চমান সহকারী’ পদে নতুন কর অঞ্চলে পদোন্নতি দিলে নতুন কর অঞ্চল ও কর্মচারী-উভয়ের জন্য ভালো হতো। সার্কেলের প্রধান সহকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। সার্কেলের যাবতীয় রিপোর্ট সব কিছু প্রধান সহকারী করে থাকেন। একজন প্রধান সরকারী সে সরাসরি নিয়োগ পেয়ে কী রিপোর্ট দেবেন, তিনি তো রিপোর্ট সম্পর্কে কিছুই জানেন না। যদি পুরাতন লোক সমন্বয় করে দেওয়া হতো, তাহলে কাজ ও রাজস্ব আদায় ভালো হতো। এনবিআর চাইলে নতুন ও পুরাতন কর্মচারী সমন্বয়ের জন্য পুনরায় আন্তঃবদলি চালু করতে পারে।