আমি ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। সময় ও সুযোগের মিলন হলে বেরিয়ে পড়ি। বাংলাদেশের প্রায় সব ট্যুরিস্ট স্পটে ঘুরে বেড়িয়েছি। চিন্তা করছিলাম দেশের বাইরে যাওয়ার। সব মিলিয়ে ভারত ভ্রমণটাই সবচেয়ে ভালো মনে হলো। পাসপোর্ট, ভিসা, ট্রাভেল ট্যাক্সসহ সব লিগ্যাল ডকুমেন্ট প্রস্তুত করলাম। ঈদের পর বিশাল ছুটি থাকায় ট্যুর প্ল্যান করতে কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা ছয়জনের গ্রুপ মোটামুটি ১১ হাজার রুপিতে ১২ দিনের এ ট্যুর সম্পন্ন করি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলাম গত ১৮ জুন। আজ আপনাদের শোনাব সেই ট্যুরের ২২ ও ২৩ জুনের গল্প!
পঞ্চম দিন (২২ জুন)
সকালের নাস্তা সেরে আমরা শিমলার সাইটসিয়িংয়ে বের হই। কুফরি ছিল আমাদের গন্তব্য। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে উঠতে উঠতে পথের ধারে গ্রিন ভ্যালি দেখলাম। কুফরি পৌঁছে ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করি। এ গাড়িতে চড়ে ফাগু ভ্যালির অ্যাপল গার্ডেনে আসি। স্পটগুলো মোটামুটি সুন্দর; তবে আহামরি কিছু নয়। ফেরার পথে পড়ি বৃষ্টির পাল্লায়। বৃষ্টির ফোঁটা হুলের মতো বিঁধছিল। আর অসংখ্য শিলা পড়ছিল। এ অবস্থায় পাহাড়ি ঢালু পথ বেয়ে টগবগিয়ে নামা ঘোড়ায় চড়া ট্যুরের সেরা অ্যাডভেঞ্চার ছিল।
হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে আবার বেরিয়ে পড়ি। কিছু কেনাকাটা সেরে বাসস্ট্যান্ডে চলে আসি। আগেই শিমলা-মানালির বাস টিকিট কেনা ছিল। রাতের খাবার খেয়ে বাসে চড়ি।
ষষ্ঠ দিন (২৩ জুন)
ভোরে পৌঁছাই মানালি। হাঁড়কাঁপানো ঠাণ্ডা ছিল সেখানে। ভোরবেলা বলে মল রোডে মানুষজনের ভিড় ছিল না। হাঁটতে হাঁটতে হোটেল খুঁজতে থাকি। এর মধ্যে চারদিকে আলো ফুটে ওঠে। দূরে পাহাড়ের গায়ে
সোনালি রোদের প্রথম কিরণ পড়তেই চূড়ায় জমে থাকা বরফ দেখে আমরা উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠি। হোটেলে এসে প্রথমে বিশ্রাম নিই। এবার একটু বেলা করে হোটেল থেকে বের হই। গতকাল বরফ-ঠাণ্ডা বৃষ্টিতে ভিজে আমাদের দুজন সঙ্গী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারা হোটেলেই থেকে যান। হেঁটে হেঁটে মানালি শহর ঘুরে বেড়াই। ঘুরেফিরে ক্লাবহাউস, হাদিম্বা টেম্পল, বনবিহার আর তিব্বতিয়ান মনেস্ট্রি দেখি।
ক্লাবহাউস জায়গাটা বেশ সুন্দর।
পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনা থেকে সৃষ্ট বিয়াস নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে স্থানটি। কয়েক ধরনের অ্যাডভেঞ্চার অ্যাকটিভিটি রয়েছে এখানে। আমরা তিনজন জিপলাইনিং করে নদীটি ক্রস করলাম। এ অভিজ্ঞতা ভোলার নয়।
এরপর গেলাম হাদিম্বা দেবীর মন্দিরে। প্রচুর হিন্দু ধর্মাবলম্বী সেখানে ভিড় করছিলেন। এখান থেকে আবার মল রোডে ফিরে আসি। আর একটু এগোলেই বনবিহার। জায়গাটি অনেকটা পার্কের মতো। জোড়ায় জোড়ায় ছেলেমেয়ে বসে ছিল। এ সময় দেশের কথা মনে পড়ে যায়। এরপর আমরা গেলাম তিব্বতিয়ান মনেস্ট্রিতে। এখানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ব্যাপক আনাগোনা চোখে পড়ে। জায়গাটি বেশ ভালো লাগল।
ঘোরাঘুরি শেষে হোটেলে ফিরে বিশ্রাম নিয়ে আবার রাতে মানালি দেখতে বের হই। রাস্তায় তখন বেশ ভিড়। এর মধ্যে একটু ঘোরাঘুরি করে রাতে চিকেন বিরিয়ানি খেয়ে দ্রুত হোটেলে ফিরি। পরদিন যে আমাদের ট্যুরের প্রধান আকর্ষণ রোথাং পাস যেতে হবে! (চলবে)
সালমান রহমান পিয়াল