কলকাতা শিমলা মানালি দিল্লি আগ্রা ভ্রমণ

আমি ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। সময় ও সুযোগের মিলন হলে বেরিয়ে পড়ি। বাংলাদেশের প্রায় সব ট্যুরিস্ট স্পটে ঘুরে বেড়িয়েছি। চিন্তা করছিলাম দেশের বাইরে যাওয়ার। সব মিলিয়ে ভারত ভ্রমণটাই সবচেয়ে ভালো মনে হলো। পাসপোর্ট, ভিসা, ট্রাভেল ট্যাক্সসহ সব লিগ্যাল ডকুমেন্ট প্রস্তুত করলাম। ঈদের পর দীর্ঘ ছুটি থাকায় ট্যুর প্ল্যান করতে কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা ছয়জনের গ্রুপ মোটামুটি ১১ হাজার রুপিতে ১২ দিনের এ ট্যুর সম্পন্ন করি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলাম গত ১৮ জুন। আজ আপনাদের শোনাব সেই ট্যুরের শেষ তিন দিনের গল্প।

দশম দিন (২৭ জুন)
তাজমহল দর্শন
ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রেলস্টেশনে চলে আসি। গন্তব্য ২০০ কিলোমিটার দূরের আগ্রা। প্রায় তিন ঘণ্টা পর আগ্রা পৌঁছাই। স্টেশন থেকে সোজা চলে আসি তাজমহলে। আগ্রায় দিল্লির তুলনায় গরম বেশি। তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল ওইদিন। তবে চোখের সামনে পৃথিবীর একটি সপ্তাশ্চর্য দেখার পর বেশ ভালো লাগছিল।
তাজমহলের সামনে বেশ কয়েকটি ছবি তুলি। ভেতরে গিয়ে ঘোরাঘুরি করি। এরপর চলে আসি আগ্রা ফোর্টে। অনেকটা লালকেল্লার মতোই এ ফোর্ট। অতীতে রাজারা এমন দুর্গে থাকতেন; ভাবতেই আনমনা হয়ে যাই। একেকটি ভবন যেমন বিশাল, তেমন কারুকার্যময়। দুর্গের বাইরে শত্রুর মোকাবিলার জন্য বড় পাঁচিল, তার সামনে পরিখা। দেখার পর অনেক ভাবনা মনে ভিড় করে।
ঘোরাঘুরি শেষ হলে আবার স্টেশনে চলে আসি। কাছাকাছি একটি রেস্তোরাঁয় খাওয়া-দাওয়া সেরে স্টেশনে বিশ্রাম নিই কিছুক্ষণ। পরে ট্রেনে চাপি। আগ্রা থেকে কলকাতা প্রায় ২৪ ঘণ্টার পথ। এটিও ছিল স্পিলার কোচ। রাতের খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়ি।

একাদশ দিন (২৮ জুন)
ট্রেন ভ্রমণ
সারা দিন ঝিকঝিক করে ট্রেন চলল। প্রচণ্ড গরমে নাভিশ্বাস অবস্থা। ট্রেন থেকে বাইরে তাকালেও তেমন একটা সবুজের দেখা মিলছিল না। অনেকটা মরুভূমি ধরনের। একে তো গরম, তার ওপর দীর্ঘ যাত্রা। দলের সবাই কেমন জানি ঝিমিয়ে পড়েছিল। ট্রেনের জানালার ধারে বসে দেশের কথা ভেবে একটু বিষন্ন লাগছিল। অবাক লাগছিল সব জায়গায় চার লেনের রাস্তা দেখে। অথচ মাঝেমধ্যে
দু-একটি বড় ছাড়া আর কোনো গাড়ি চোখে পড়ছিল না। আর রেললাইনের জন্য রাস্তার কোথাও ক্রসিং নেই। সবখানে ওভারপাস অথবা নিচ দিয়ে টানেল তৈরি করে দেওয়া; একেবারে অজপাড়াগাঁয়ও।
বিকালে গরম কমে এলে আমরা পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করি। রাতে কলকাতার দমদমে নেমে মেট্রোতে চড়ে আসি সেই নিউমার্কেটে। পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা। প্রথম দিনের মতো আবার সেই কালোভুনা দিয়ে তৃপ্তি করে খেয়ে হোটেলে ফিরে আসি। ব্যাগ-লাগেজ রেখে ফ্রেশ হয়ে রাত ১০টার দিকে বের হই। ঘুরে বেড়াই রাতের কলকাতায়। ডোমিনোজ পিজ্জা চোখে পড়ায় একটু স্বাদ নিই তার।

শেষ দিন (২৯ জুন) দেশে ফেরাআজ দেশে ফেরার পালা। দীর্ঘ ১২ দিন পর দেশে ফিরছি, ভাবতেই ভালো লাগছিল। আবার ট্যুর শেষ ভেবে খারাপও লাগছিল। সকালবেলা তাই এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি আর কেনাকাটা করে কাটিয়ে দিই। ট্যাক্সি করে শিয়ালদহ রেলস্টেশনে এসে বনগাঁর মেইল ট্রেনের টিকিট কেটে চড়ে বসলাম। দুই ঘণ্টা আগে পৌঁছে যাই বনগাঁয়। বৃষ্টি পড়ছিল তখন। গরম থেকে স্বস্তি পাই। বনগাঁ থেকে পেট্রাপোল বর্ডারে এসে অল্প যা রুপি ছিল, তার সব খরচ করে ফেলি। এরপর বর্ডার ইমিগ্রেশন পার হয়ে যাই মাত্র ১৫ মিনিটে। বেনাপোল ঢুকে আগে ভাত, আলুভর্তা, ডিম ভাজা ও ডাল দিয়ে পেটপুরে দুপুরের খাবার সেরে ফেলি। তা যেন অমৃত মনে হচ্ছিল। সবশেষে বাসে চড়ে ফরিদপুরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ৯টা বেজে যায়। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় ১২ দিনের ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া ট্যুর। (শেষ)

সালমান রহমান পিয়াল

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০