শেয়ার বিজ ডেস্ক: কলা শুধু মিষ্টি এক ফল, এমনটা ভাবা যেতেই পারে। কিন্তু কলাগাছের তন্তু থেকে কী কী বানানো যায় জানেন? তার আগে বলতে হয়, কী বানানো যায় না। যেমন: সেরা পরিবেশবান্ধব চা-ব্যাগ, শাড়ি, গাড়ির টায়ার, হার্ডবোর্ড, তাঁবু, শার্ট, প্যান্ট, শৌখিন হস্তশিল্পসহ আরও অনেক কিছু।
ফলে ভারতের তামিলনাড়ুর নারীদের কাছে কলার গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ এক প্রকল্পের আওতায় সেখানকার নারীরা কলার তন্তু দিয়ে ঝুড়িসহ নানা ধরনের সামগ্রী তৈরি করেন। এই প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য বিধবা ও একক নারীদের মাসিক আয়ের ব্যবস্থা করা। খবর: ডয়চে ভেলে।
ভারতের দক্ষিণের মাদুরাইয়ের তিরুপারাকুন্দ্রাম গ্রামের নারীরা একসময় বর্জ্য বলে বিবেচিত উপকরণ দিয়ে ব্যবহার করা যায় এমন পণ্য তৈরি করেন।
স্বামী জেলে যাওয়ার পর সেলভি সেখানে কাজ শুরু করেন। এই আয় দিয়ে তার এখন সংসার চলছে।
তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনার পর আমি কিছুদিন ঘরে একা ছিলাম। তখন আত্মীয়রা কিছু সহায়তা করেছিলেন। এরপর তারা সাহায্য বন্ধ করে দেন। দিন দিন আমার সন্তানেরা বড় হচ্ছিল। কী করব, বুঝতে পারছিলাম না। এমন দুঃসময়ে আমি এই কাজে ঢুকেছিলাম।’
সেলভি ও অন্য নারীরা মাদুরাই ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্ট বা মিকাতে কাজ করেন। তারা ২০ ধরনের বেশি ঝুড়ি তৈরি করেন এবং ৫০ ধরনের বেশি হস্তশিল্প বানান।
প্রকল্পটি শুরু করেন চার্লস। প্রায় ছয় বছর ধরে এটি চলছে। তিনি বলেন, ‘যখন ছোট ছিলাম, বন্ধুদের হাতে তৈরি করা উপহার দিতাম, ময়লাসহ গাছের সবকিছু জোগাড় করতাম। সেগুলো দিয়ে ছোট ঘর ও অনেক কিছু বানাতাম। বন্ধুরা সেগুলো পছন্দ করত। তখন বুঝেছিলাম, প্রকৃতি থেকে যা পাওয়া যায়, তা বর্জ্য নয়। এই বোধের কারণে প্রাকৃতিক উপকরণ ও বর্জ্য দিয়ে পণ্য তৈরির কথা চিন্তা করি আমি।’
ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় কলা উৎপাদনকারী দেশ। বছরে প্রায় তিন কোটি টনের বেশি কলা উৎপন্ন হয়। ভারতের সবচেয়ে বেশি কলা উৎপাদনকারী রাজ্যগুলোর তালিকার চার নম্বরে আছে তামিলনাড়ু। সেখানে বছরে প্রায় এক কোটি টন বর্জ্য তৈরি হয়।
প্রকল্পের জন্য কলার বর্জ্য আসে কৃষক সেতুর কাছ থেকে। তার প্রায় দুই হাজার কলার গাছ আছে। দশ মাসের মধ্যে ফল পাকে। এরপর কলা সংগ্রহের পর পরবর্তী চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করতে গাছ কেটে ফেলা হয়। তিনি জানান, ‘আগে ময়লা ফেলে দিতাম। কিন্তু এখন এগুলো অনেক কাজে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে ঝুড়ি তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে এগুলো ব্যবহƒত হচ্ছে। আমাদেরও অনেক উপকার হচ্ছে।’
মিকায় তৈরি ঝুড়ি ও অন্যান্য পণ্য মূলত ভিয়েতনাম ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে রপ্তানি করা হয়। একজন নারী দিনে আট থেকে ১০টি ঝুড়ি বানান। একেকটি ঝুড়ি প্রায় দুই হাজার রুপিতে বিক্রি হয়। একেকজন কর্মী দিনে প্রায় ১৫০ রুপি পান।
শুনতে বেশি মনে না হলেও এই শ্রমিকেরা বলছেন, এই আয় তাদের সুখ এনে দিয়েছে। এছাড়া অন্য সুবিধাও আছে। সেলভি বলেন, ‘এখানে যারা কাজ করছেন তারা সবাই পরিবার থেকে হয়রানি ও ট্রমার শিকার হয়েছেন। এখানে কাজ করায় তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারছেন, সন্তানদের সাহায্য করতে পারছেন। যখন আমরা একসঙ্গে কাজ করি, আমাদের সব ব্যথা দূর হয়ে যায়।’
এই নারীরা বলছেন, প্রকৃতির কোনোকিছুই ফেলনা নয়। তাদের বিশ্বাস, তাদের কাজ পরিবেশের উপকার করছে। তবে সেলভির কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এই কাজ করায় তিনি ও তার মতো নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন, সন্তান ও পরিবারকে সহায়তা করতে পারছেন।
উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক তন্তুর মধ্যে কলাগাছ থেকে প্রাপ্ত তন্তু সবচেয়ে শক্ত ও টেকসই। পাট বা তুলার সঙ্গে মিশ্রণের পরে এটি আরও টেকসই হয়। এছাড়া কলাগাছের আঁশ পরিবেশবান্ধব, তাই সহজেই মাটিতে মিশে যায় এবং এটি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ধারণ করে না।