Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:38 am

কলেরা প্রতিরোধে করণীয়

কলেরা একটি মারাত্মক ডায়রিয়াজনিত রোগ। একসময় এই রোগে অনেক মানুষ মারা যেত। এখন মৃত্যুহার অনেক কমে গেছে। তবে কলেরা প্রতিরোধযোগ্য রোগ। উন্নত পয়োনিষ্কাশন, নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য এবং হাত ধোয়ার মাধ্যমে কলেরা প্রতিরোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে কার্যকর টিকাও আবিষ্কৃত হয়েছে।

কভিডের সংক্রমণ কমে যাওয়ার পরপরই এ বছর দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর দেশে প্রায় ১২ লাখ মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে কমপক্ষে তিন লাখ মানুষ আক্রান্ত হয় তীব্র পর্যায়ের কলেরায়। যা করতে হবে: পানি ও খাবারের মাধ্যমে কলেরা ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে পথেঘাটে উম্মুক্ত হোটেল-রেস্তোরাঁ ও অন্যান্য অনিরাপদ উৎস থেকে পানি ও খাবার খাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে। নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস চালু রাখতে হবে। বিভিন্ন রোগজীবাণুর আক্রমণ থেকে শরীরকে মুক্ত রাখার জন্য সবচেয়ে ‘কার্যকর টিকা’ হচ্ছে নিয়মিত হাত ধোয়া। ঘিঞ্জি ও নোংরা পরিবেশে, যেখানে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা নিম্নমানের, সেখানে কলেরার প্রকোপ বেশি। তাই বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। উন্নত পয়োনিষ্কাশন নিশ্চিত করতে হবে।

কলেরার টিকা: পোলিও টিকার মতো কলেরার টিকা মুখে খেতে হয়। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দুই ডোজের টিকা খেলে তা কলেরার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তবে প্রতিরোধ গড়ার হার গড়ে ৮৫ শতাংশ। টিকা খাওয়ার প্রথম ছয় মাসে এটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর থাকে। এরপর কার্যকারিতা কিছুটা হ্রাস পায়। বলা হয়ে থাকে, টিকা দুই-তিন বছর পর্যন্ত কলেরার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম। যারা কলেরাপ্রবণ এলাকায় যাবেন, তাদের জন্য এক ডোজ টিকার ব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্বের কোথাও কোথাও এটি ইনজেকশনের মাধ্যমে দেয়া হয়।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: টিকা নেয়ার পর সাময়িক সময়ের জন্য পেটে হালকা ব্যথা হতে পারে। হতে পারে পাতলা পায়খানাও। ক্ষুধামান্দ্য, জ্বর, মাথাব্যথা, ক্লান্তি অনুভব, বমি প্রভৃতি দেখা দিতে পারে।

জেনে রাখুন: কলেরার টিকা গর্ভবতী মায়েদের জন্যও নিরাপদ। এমনকি যাদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রেও এটি নিরাপদ। বিশ্বের ৬০টি দেশে এই টিকার লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। টিকা কলেরায় মৃত্যু ৫০ শতাংশ কমাতে সক্ষম। তবে কোনো টিকাই শতভাগ রোগ প্রতিরোধে সক্ষম নয়। এ কারণে কলেরা প্রতিরোধের জন্য নিরাপদ পানি ও খাবারের দিকে নজর রাখতে হবে।

লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ, ঢাকা