মানুষ সামাজিক জীব। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। সমাজের রীতিনীতি, বিশ্বাস, আচার-আচরণ, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে কেন্দ্র করেই মানুষ যুগের পর যুগ একত্রে অবস্থান করে। সমাজের সব মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা সমাজকে সামনে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। সমাজকে এগিয়ে নিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে কল্যাণমূলক কাজ। প্রতিটি কল্যাণমূলক কাজ গাছের ন্যায় সমাজকে অক্সিজেন, ফুল, ফল ও ছায়া দিয়ে আগলে রাখে। তাই আমাদের উচিত সমাজকে সুপথে এগিয়ে নিতে যার যার অবস্থান থেকে ছোট-বড় কল্যাণমূলক কাজ করা।
কিছু কল্যাণমূলক কাজ
বই পড়া: বই জ্ঞানের প্রতীক। বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করা যায়। সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে জ্ঞানকে কাজে লাগানোর জন্য বই পড়ার বিকল্প নেই। সমাজের মাঝে বই পড়া ছড়িয়ে দিতে সবার আগে নিজে বই পড়তে হবে। নিজ পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের বই পড়ার প্রতি উৎসাহ দিতে হবে। নিজের প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরি না থাকলে লাইব্রেরি করতে হবে এবং লাইব্রেরি থাকলে সেখানে গিয়ে বই পড়তে হবে। এছাড়া প্রিয় মানুষদের বই উপহার দিয়েও তাদের বই পড়ার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করা যায়। প্রতি মাসে কমপক্ষে একটি বই পড়া ও বই উপহার দিয়ে বছরে ১২টি বই পড়া ও বই উপহার দেয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে।
গাছ লাগানো: মানুষের বেঁচে থাকার পেছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটি তা হলো অক্সিজেন। আর গাছ থেকে আমরা সেটি অনায়াসেই পাই। বর্তমানে ক্রমবর্ধমানহারে গাছ কাটার উৎসব চলছে। ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। বিশ্বের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে সমান তালে। ফলে গাছের গুরুত্ব বোঝা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ছে। তাই আমাদের উচিত নিয়মিত গাছ লাগানো। বাড়ির চারদিকে, রাস্তার পাশে, রেললাইনের দুই ধারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাছ লাগাতে হবে। নিয়মিত গাছ লাগানোর অভ্যাস গাছের পাতার সজীবতার ন্যায় আমাদের মনমানসিকতাও সজীব রাখতে সহায়তা করে।
রক্ত দান: নিয়ম মেনে নিয়মিত রক্তদান শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। মুমূর্ষু ব্যক্তির রক্ত প্রয়োজনে রক্ত দান করলে রোগীর জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যথাসময়ে রক্তের অভাবে অনেক রোগীই মৃত্যুবরণ করে। রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচানো পৃথিবীর অন্যতম সেরা মানবিক কাজ। তাই আমাদের এ কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা করতে হবে। নিয়মিত রক্তদানে সবাইকে উৎসাহ দিতে হবে।
ক্ষুধার্তদের খাদ্য দান: মানুষের প্রথম ও প্রধান মৌলিক চাহিদা খাদ্য। দারিদ্র্যপূর্ণ দেশগুলোয় ব্যাপক খাদ্য চাহিদা বিদ্যমান থাকে। সমাজের মানুষরা অতি কষ্টে দিনযাপন করে। তাই সামর্থ্যবান ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন সংস্থার উচিত ক্ষুধার্তদের খাদ্যের ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে দুর্যোগপূর্ণ সময়গুলোয় খাদ্য ও পানির চাহিদা বৃদ্ধি পেলে সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করা।
জনসচেতনতামূলক কাজ: যেকোনো দুর্যোগে সমাজের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। ওই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। সমাজে নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিলে তা নিয়ে কথা বলতে হবে। এর নেতিবাচক দিকগুলো সমাজের মাঝে তুলে ধরতে হবে ও সবাইকে সচেতন করতে হবে।
এভাবে সমাজকে এগিয়ে নিতে আমাদের সবারই কমবেশি কল্যাণমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করা উচিত। ইতিবাচক চিন্তাভাবনাগুলো কাজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন ঘটিয়ে সমাজের জন্য কাজ করতে হবে। তাহলেই আমাদের বর্তমান সমাজ নেতিবাচকতা থেকে দূরে থাকতে পারবে।
তাহমিনা আক্তার
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়