রহমত রহমান: কাঁচামাল আমদানি হয়েছে। কিন্তু পণ্য রপ্তানি করা হয়নি। কাঁচামাল সরাসরি বিক্রি করা হয়েছে খোলাবাজারে। মূলত শুল্ককর ফাঁকি দিতেই বন্ডেড কাঁচামাল বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। ‘ফিদাস অ্যাপারেলস প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন প্রমাণ পেয়েছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। বিচারাদেশ শেষে পোশাক খাতের এ প্রতিষ্ঠানটিকে ৩০ লাখ অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করায় প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত ও বিন লক করা হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি হয়নি বলে জানান ফিদাস অ্যাপারেলস প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিএম তানভীর আহমেদ। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা আমদানি করা কাঁচামাল দিয়ে যে পণ্য তৈরি করে, তা রপ্তানি করেছি তার সব ডকুমেন্ট আছে।’ কারণ দর্শানোর নোটিশ জারির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা শুনানিতে অংশগ্রহণের জন্য কোনো চিঠি পাইনি।’
সূত্রমতে, তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান ফিদাস অ্যাপারেলস প্রাইভেট লিমিটেড। সাভারের আশুলিয়ার দোসাইদ এলাকায় অবস্থিত ফারদিন গ্রুপের এ প্রতিষ্ঠানকে ২০১০ সালে বন্ড লাইসেন্স দেয়া হয়। প্রতি বছর নিরীক্ষা করার নিয়ম থাকলেও ২০১৪ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ৪ বছর বা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিরীক্ষা করেনি। নিরীক্ষা করতে প্রতিষ্ঠান বন্ড কমিশনারেটকে আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কোনো প্রকার কাগজপত্র দিয়ে সহযোগিতাও করেনি। তবে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করার অভিযোগ পায় বন্ড কমিশনারেট। পরে সিআইএস সেল থেকে তথ্য নেয় বন্ড কর্মকর্তারা। যাতে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সাল পর্যন্ত এক কোটি ৫২ লাখ ১৪ হাজার ২১৩ টাকার কাঁচামাল আমদানি করেছে। যার উপর প্রযোজ্য শুল্ককর এক কোটি ৩০ লাখ ১২ হাজার ৬১৮ টাকা।
সূত্র আরও জানায়, প্রতিষ্ঠানটি যেই কাঁচামাল আমদানি করেছে, তা দিয়ে পণ্য রপ্তানি করেছে কি না-তার কোনো প্রমাণ নেই। প্রতিষ্ঠান শুল্ককর ফাঁকি দিতে কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে বলে ধারণা করছেন কর্মকর্তারা।
শুল্ককর পরিশোধ ও বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট থেকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠান কোনো প্রকার জবাব দেয়নি। পরে ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর, ৭ নভেম্বর ও ২০ ডিসেম্বর-তিন দফায় নোটিশ জারি করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো জবাব দেয়া হয়নি। এমনকি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কেউ শুনানিতে অংশগ্রহণ করেনি।
সূত্রমতে, বার্ষিক নিরীক্ষা সম্পন্ন করেনি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া আমদানি করা কাঁচামালের হদিস পেলেও রপ্তানি পণ্যের হদিস পায়নি। এমনকি রপ্তানি করা হলে তার অর্থ দেশে এসেছে কি না-তারও কোনো তথ্য নেই বন্ড কমিশনারেটে। কাঁচামালের অবৈধ অপসারণ, নিরীক্ষা কাজে সহযোগিতা না করা ও বন্ড লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করায় চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনার বিচারাদেশ দেয়। যাতে প্রতিষ্ঠানকে ৩০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়। বিলম্ব চার্জসহ লাইসেন্স ফি, কাঁচামালের ওপর প্রযোজ্য শুল্ককর ও অর্থদণ্ডসহ এক কোটি ৬১ লাখ ৩ হাজার ২১৮ টাকা পরিশোধে প্রতিষ্ঠানকে ১৫ দিনের সময় দেয়া হয়।
এ বিষয়ে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, কাঁচামাল আমদানি করে, কিন্তু পণ্য রপ্তানি করে নাÑএমন বহু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বন্ড লাইসেন্স দেয়ার সময় দেখা যায়, ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠান খুলেছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরে আর প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায় না। এরপরও আমরা চেষ্টা করি, প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করে রাজস্ব আদায় করতে। এজন্য লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ফারদিন গ্রুপের ফিদাস অ্যাপারেলের দুইটি ইউনিট। একটি বোতাম ও একটি শার্ট। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠানটি মূলত টি-শার্ট তৈরি করে আসছে।