রহমত রহমান: ২০১৪ সাল থেকে বন্ড সুবিধায় আমদানি করেছে কাঁচামাল। কিন্তু সেই কাঁচামাল দিয়ে পণ্য তৈরি ও রপ্তানি হয়নি। বন্ড সুবিধার সেই কাঁচামাল গেছে খোলাবাজারে। প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি টাকার সেই কাঁচামালে শুল্ককর প্রায় পৌনে চার কোটি টাকা। মূলত শুল্ককর ফাঁকি দিতে কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে এপকট জিন্স লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। গাজীপুরের পোশাক তৈরি ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটি শুধু রাজস্ব ফাঁকি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। চারবার কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হলেও কোনো জবাব দেয়নি। এমনকি আমদানি করা কাঁচামালের হিসাব ও রাজস্ব পরিশোধ কেন করা হয়নিÑতার জবাব দিতে ব্যক্তিগত শুনানিতে পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের কেউ হাজির হয়নি। শুল্ককর ফাঁকি প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানকে বিচারাদেশে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা কাস্টম বন্ড কমিশনার এ রায় দিয়েছেন। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, ২০০৮ সালে শতভাগ পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে বন্ড লাইসেন্স পায় এপকট জিন্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ পায় এনবিআর। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল আমদানি করলেও তা দিয়ে পণ্য তৈরি এবং রপ্তানি করেনি। পরে বিষয়টি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয় কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। এতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ পর্যন্ত বার্ষিক নিরীক্ষা সম্পন্ন করেনি। নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে প্রতিষ্ঠানকে বারবার চিঠি দেয়া হলেও কোনো জবাব দেয়নি। এমনকি যথাসময়ে দলিলাদি দিয়ে নিরীক্ষা কাজে কোনো সহযোগিতা করেনি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। পরে কর্মকর্তারা সিআইএস সেল থেকে প্রতিষ্ঠানের আমদানির তথ্য সংগ্রহ করেন। তাতে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধায় ৪ কোটি ৫৯ লাখ ২২ হাজার ১১০ টাকার কাঁচামাল আমদানি করেছে। যাতে প্রযোজ্য শুল্ককর ৩ কোটি ৭৯ লাখ ২২ হাজার ৭৪৯ টাকা। প্রতিষ্ঠান এ শুল্ককর পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করায় ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানকে দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শুল্ককর পরিশোধ করা হয়নি এবং নোটিশের কোনো জবাব দেয়া হয়নি। পরে প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর পুনরায় প্রতিষ্ঠানকে দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠান আবারও কোনো জবাব দেয়নি। পরে প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তিগত শুনানিতে উপস্থিত থেকে চারবার চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা শুনানিতে উপস্থিত হননি।
বন্ড কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল আমদানি করে সরাসরি খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। এছাড়া লাইসেন্স নেয়ার সময় যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করার পর সেই ঠিকানা পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা কমিশনারেটের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
সূত্রমতে, শুনানিতে অংশ না নেয়ায় বন্ড কমিশনার প্রতিষ্ঠানের মামলার নথি, কারণ দর্শানো নোটিশ ও অনিয়ম পর্যালোচনা করেন। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার ও শুল্ককর ফাঁকি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় কাস্টমস আইন ও বন্ড লাইসেন্সের শর্তানুযায়ী প্রতিষ্ঠানকে ২১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়ে চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি রায় দেয় কমিশনার। ফাঁকি দেয়া শুল্ককর ও অর্থদণ্ডসহ মোট ৪ কোটি ২২ হাজার ৭৪৯ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে প্রতিষ্ঠানকে ১৫ দিনের সময় দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে এপকট জিন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদা আক্তার আবেদিনের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে কয়েকদিন ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বক্তব্যের পুরো বিষয় লিখে খুদে বার্তা দেয়া হলেও জবাব দেননি। হোয়াইটস অ্যাপে প্রতিষ্ঠানের বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের পুরো বিষয় লিখে বার্তা পাঠানো হয়। তিনি সিন (দেখা) করলেও জবাব দেননি।