কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রাংশ আমদানিতে কর বসছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: শিল্পের বেশ কিছু কাঁচামাল আমদানিতে অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ফলে এসব কাঁচামাল আমদানিতে এক শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হবে। আবার মূলধনি যন্ত্রাংশ আমদানিতে অব্যাহতি প্রত্যাহার হচ্ছে। ফলে এসব যন্ত্রাংশ আমদানিতে নিয়মিত হারে কর দিতে হবে। মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ অনুযায়ী এনবিআর আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। তবে শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন শিল্প মালিকরা।

এনবিআর সূত্রমতে, এলডিসি উত্তরণের শর্ত পরিপালন এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধি-বিধানের সঙ্গে সংগতি রেখে শুল্ক হার যৌক্তিকীকরণ করা হচ্ছে আগামী বাজেটে। চলতি বাজেটে ৫০টি পণ্যের ন্যূনতম মূল্য হ্রাস, সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ও সংরক্ষণমূলক শুল্ক (আরডি) কমানো হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী বাজেটে ২৮২টি পণ্যের ন্যূনতম মূল্য প্রত্যাহার-হ্রাস, সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ও সংরক্ষণমূলক শুল্ক (আরডি) কমানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে সামাজিকভাবে অনভিপ্রেত নয় এবং বিলাসী পণ্য নয়Ñএমন পণ্যকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তাছাড়া যেসব পণ্য আমদানিতে রিজার্ভের ওপর চাপ পড়বে না এবং দেশে উৎপাদন হয় না, সেগুলোকে তালিকায় রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে, শিল্পে ব্যবহƒত অন্তত ৩৩টি আইটেমের কাঁচামাল আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক বসানো হচ্ছে। এ তালিকায় রয়েছেÑঅপরিশোধিত ভোজ্যতেল, সিরিশ কাগজ উৎপাদনে ব্যবহƒত টিউব লিসেনিং জেল, কৃত্রিম কোরান্ডাম, অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড, প্যাট চিপস উৎপাদনে ব্যবহƒত ইথাইলিন গ্লাইকল, পানির মোটর উৎপাদনকারী অ্যালুমিনিয়াম ইনগট, মোটর ব্রাশ, বাতি উৎপাদনে ব্যবহƒত অ্যালুমিনিয়াম অ্যালয়, ফ্লোরোসেন্ট বাতির যন্ত্রাংশ, কাচ, প্লাস্টিক, এলইডি টেলিভিশন উৎপাদনে ব্যবহার্য এলইডি বাল্ব, ওপেন সেল এবং ফাইবার উৎপাদনে ব্যবহƒত কাঁচামাল। অন্যদিকে শিল্পের প্রায় অর্ধশতাধিক যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মূলধনি যন্ত্রাংশ ও নির্মাণসামগ্রী আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে এক শতাংশ শুল্ক বসানো হচ্ছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে ডেভেলপারের আনা ব্যবহƒত সামগ্রীতে এক শতাংশ আরোপ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি সুযোগ বাতিল করা হচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক ছাড়া অন্যান্য শুল্ক-কর (ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, রেগুলেটরি শুল্ক) পরিশোধ করতে হবে।

অপরদিকে, কারখানার শেড বা অফিস নির্মাণে প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং স্ট্রাকচার আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। আগে প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং তৈরিতে ব্যবহƒত কম্পোনেন্টের ওপর ৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য ছিল, এটি আগামী বাজেটে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান, রেন্টাল পাওয়ার কোম্পানি কর্তৃক প্লান্ট, ইকুইপমেন্ট ও ইরেকশন ম্যাটেরিয়াল আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। বর্তমানে এসব যন্ত্র শুল্ক নেই।

সূত্র আরও জানায়, মূলত ৬টি বিষয় মাথায় রেখে শুল্ক খাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রথমত, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি। দ্বিতীয়ত, পণ্য খালাসে জটিলতা নিরসন এবং খালাস প্রক্রিয়া সহজীকরণ। এছাড়া দেশীয় শিল্পকে বিদ্যমান নীতি সহায়তা যৌক্তিকীকরণের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নতুন ও সম্ভাবনাময় উৎপাদনমুখী খাতকে বিকাশে সহায়তা দেয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানিমুখী শিল্পকে সহায়তা দেয়া এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের প্রচেষ্টা থাকছে বাজেটে। ব্যক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক ও সরকারি পর্যায়ে শুল্ক অব্যাহতি ভোগ করার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বাজেটে নতুন নতুন পক্ষেপ রাখা হয়েছে।

এনবিআর সূত্রমতে, বেশ কিছু খাতে শুল্ক হার অপরিবর্তিত থাকছে। চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও ৬ স্তরের (০%, ১%, ৫%, ১০%, ১৫%, ২৫%) শুল্ক হার বহাল রাখা হচ্ছে। একইসঙ্গে সর্বোচ্চ আমদানি শুল্কহার (২৫ শতাংশ) আরোপিত পণ্যের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ সংরক্ষণমূলক শুল্ক ও পণ্যভেদে সম্পূরক শুল্ক বসানোর প্রস্তাব থাকবে বাজেটে। ১২ স্তরবিশিষ্ট সম্পূরক শুল্ক হারও অপরিবর্তিত থাকবে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, প্রধান প্রধান খাদ্যদ্রব্য, সার, বীজ, জীবনরক্ষাকারী ওষুধসহ শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক হার অপরিবর্তিত থাকবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০